বিশ্বে হঠাৎ খারাপ লোকের সংখ্যা বাড়ছে কেন?
পোস্ট করেছেন: delwer master | প্রকাশিত হয়েছে: মার্চ ১৩, ২০২২ , ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
ম্যাক্স জান, অ্যান্ডি সার্ভার
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠছে খুন হওয়া বেসামরিক নাগরিকদের ছবি, প্রসূতি ওয়ার্ডে বোমা হামলা এবং শহুরে যুদ্ধের ভয়াবহতার চিত্র। মাঝে মাঝে একটি প্রশ্ন বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে , সেটি হল ১৪৫ মিলিয়ন রাশিয়ান পুতিনের মত একজনকে কিভাবে তাদের দেশ শাসন করার অনুমতি দিলেন? এই প্রশ্নের উত্তরটি অবশ্যই রাশিয়ান ইতিহাস এবং রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত, তবে আরও বিস্ময়কর বিষয় হল যে পুতিন কিন্তু একা নন। আমাদের বিশ্ব আজ পুতিনের মতোই কর্তৃত্ববাদী, জাতীয়তাবাদী এবং স্বৈরচারী শাসক দ্বারা পরিপূর্ণ। যাদের জন্য আমরা আজ গণতন্ত্রবিরোধী এক সমাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের চেয়েও আরও বড় কিছু অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য -তা হল সভ্যতা এবং মানবজাতির আবেগের মধ্যে একটি ভয়ঙ্কর যুদ্ধ। এই রূপান্তর আমাদের ঘোর অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়। শুধু তাই নয় কর্তৃত্ববাদ এবং দুর্নীতি কিছু অসাধু মানুষ বাদ দিয়ে বাকিদের জীবন দুঃসহ করে তোলে। স্বৈরাচার কোনো সমাজের ভিত্তি হতে পারে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথায় আসা যাক। এটা সত্য যে ৮০ বছর আগে হিটলার, মুসোলিনি, ইম্পেরিয়াল জাপান এবং তাদের হাতের পুতুলরা একটি নৃশংস বিশ্বযুদ্ধ চালিয়েছিল। তাদেরকে খুনি হিসেবেও বর্ণনা করা যায়। কিন্তু সেদিনের স্বৈরাচারী শক্তিগুলি আজকের কর্তৃত্ববাদীদের তুলনায় বিশ্ব জনসংখ্যার অনেক কম অংশ নিয়ন্ত্রণ করেছিল। আজকের বিশ্ব – পুতিন, শি, বলসোনারো, এরদোগান, অরবান, খামেনির মত কয়েক ডজন স্বৈরশাসক দ্বারা পরিপূর্ণ। এদের মধ্যে কেউ সামরিক স্বৈরশাসক, কেউ জনপ্রিয়ভাবে নির্বাচিত এবং কেউ নিজের ব্যক্তিত্বের দ্বারা মানবজাতি নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু কয়েকটি বিষয়ে এদের মধ্যে মিল আছে তা হল- বিশ্ববাদের প্রতি ঘৃণা, মানবাধিকার এবং মিডিয়াকে দমন , রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কারাগারে পাঠানো, কখনো কখনো তাদের হত্যা করা। ঠিক যেমনটা এখন ইউক্রেনে চলছে। সবচেয়ে জনবহুল ১০ টি দেশের দিকে তাকানো যাক : চীন, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, ব্রাজিল, নাইজেরিয়া, বাংলাদেশ, রাশিয়া এবং মেক্সিকো। ১০ টি সবচেয়ে জনবহুল দেশের জন্য, মাত্র চারটি; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রাজিল (যা গত এক দশকে উল্লেখযোগ্য স্বৈরশাসনের মধ্য দিয়ে গেছে) গণতান্ত্রিক দেশগুলির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ৷ বাকিরা সবাই তালিকার নিচে, ১৭৯ টি দেশের মধ্যে ১৭২ নম্বরে চীন এবং ১৫১ নম্বরে আছে রাশিয়া। এই রিপোর্ট তৈরী করেছে ঠধৎরবঃরবং ড়ভ উবসড়পৎধপু বা া -উবস নামে একটি সুইডিশ এনজিও। ভি-ডেম দেখেছে যে বিশ্বের ৭০ %, বা ৫.৪ বিলিয়ন মানুষ স্বৈরাচারী জীবনযাপন করছে, যা ২০১১ সালে ছিল ৪৯ %। প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে যে শুধুমাত্র ১৫ টি দেশ গণতন্ত্রীকরণ করছে – যা বিশ্বের জনসংখ্যার ৩ % কভার করে।
এটি কেন ঘটছে?
ঠান্ডা যুদ্ধের সমাপ্তির পরে গণতন্ত্রের এমন একটি বিস্ফোরণ দেখা গিয়েছিল যার পর সম্ভবত আমরা একটি স্বাভাবিক বসতি স্থাপন করতে পেরেছি। একই সময়ে, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে গণতন্ত্রের পাল্লা এখনও স্বৈরাচারের চেয়ে বেশি ভারী। বলছেন মিশিগান স্টেটের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক এরিকা ফ্রান্টজ। ফ্রান্টজ আরও মনে করেন পুতিনের আগ্রাসন হয়তো শেষ পর্যন্ত ব্যাকফায়ার করতে পারে এবং কর্তৃত্ববাদের অগ্রগতিকে ধীর করে দিতে পারে। পেন স্টেটের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জোসেফ রাইট আরেকটি দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে , অতিরিক্ত সম্পদের চাহিদা থেকেই জন্ম নিয়েছে স্বৈরাচার। পুতিনের মতো লোকদের এই ধরনের আক্রমনাত্মক আচরণ আমরা অতীতেও ইরান, ভেনিজুয়েলার ক্ষেত্রে দেখেছি – যার নেপথ্যে ছিল তেল এবং গ্যাসের দাম। এই দামগুলি বাড়ার সাথে সাথে, স্বৈরশাসক রাষ্ট্রের মালিকানাধীন সম্পদগুলি কুক্ষিগত করার চেষ্টায় বেমালুম গণতন্ত্রকে পদদলিত করে চলে যান । এটি আন্তর্জাতিকভাবে তাদের ক্রিয়াকলাপকে উৎসাহিত করে, যেমনটি আমরা এখন পুতিনের সাথে দেখছি। তবে পশ্চিমা অর্থনীতির ডিকার্বনাইজিং কর্তৃত্ববাদের ক্ষমতা সীমিত করতে পারে।ফ্রান্টজ এবং রাইট উভয়েই “ব্যক্তিত্ববাদ” নামে পরিচিত আরেকটি প্রবণতার কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তারা অলিগার্চদের বিশাল ভাগ্যের কথা তুলে ধরেছেন। যেমন বেনিনে, একজন অলিগার্চ একটি পার্টি তৈরি করেছিল, যাকে সমর্থন জানিয়েছিল প্রেসিডেন্ট । হাঙ্গেরিতেও , রাষ্ট্রপতি অলিগার্চদের সহায়তায় দলের উপর ক্ষমতা একত্রিত করতে সক্ষম হন।জর্জিয়া, সার্বিয়া এমন দেশ যারা সম্প্রতি এই অলিগার্চদের সম্পর্কে জানতে শুরু করেছে। ফ্রান্টজ বলেছেন , ”ব্যক্তিবাদী এই একনায়কত্ব পররাষ্ট্র নীতিকে আক্রমন করে যার জেরে দ্বন্দ্ব শুরু হবার সম্ভাবনা বেশি, গণতন্ত্রের সাথে বিরোধ উস্কে দেবার ক্ষমতা রাখে ”। ঠ-উবস-এর তালিকায় আমেরিকার অবস্থান ২৯ নম্বরে — জাপান এবং লাটভিয়ার মধ্যে। নির্বাচনকে বাতিল করার অবৈধ প্রচেষ্টা, রাজনৈতিক ভীতি ও সহিংসতার বৃদ্ধি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাতিগত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বৈষম্যে এর কারণ হতে পারে । একটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন , পুতিনকে নিয়ে নিন্দা করার অধিকার আমাদের রয়েছে, তবে তার আগে আমাদের নিজের ঘরকে সুশৃঙ্খলভাবে রাখার বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে হবে । কারণ বিনিয়োগকারীরা , ভোটাররা এবং স্বাধীনতা প্রেমীরা আমাদের ওপর নজর রাখছেন অহরহ ৷
অনুবাদে : সেবন্তী ভট্টাচার্য্য
সূত্র : finance.yahoo.com