আজকের দিন তারিখ ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সারাবিশ্ব মানবিক কারণে ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিয়েছি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মানবিক কারণে ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিয়েছি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী


পোস্ট করেছেন: delwer master | প্রকাশিত হয়েছে: মার্চ ২৬, ২০২২ , ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সারাবিশ্ব


দিনের শেষে ডেস্ক : কোনো চাপের মুখে নয়, মানবিক কারণেই বাংলাদেশ এবার জাতিসংঘে ইউক্রেনের তোলা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, এই প্রস্তাবে মানবিক কারণে নির্যাতিত ও আহতদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। যেহেতু আমরা চাই, নির্যাতিত লোকের মঙ্গল হোক। সেই কারণে আমরা এই প্রস্তাবে ইয়েস করেছি। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘বাংলাদেশ জেনোসাইড ইন ১৯৭১’ শীর্ষক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক। ইউক্রেনের প্রস্তাবে ভোট দেওয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রেজুলেশনের পক্ষে ভোট দেওয়ার মূল কারণ হচ্ছে মানবিকতা। বাংলাদেশ সারা বিশ্বে মানবিক দেশ হিসাবে সুপরিচিত। তিনি বলেন, আমরা সবসময় শান্তির পক্ষে এবং যুদ্ধের বিপক্ষে। তিনি আরও বলেন, যেকোনো যুদ্ধে সাধারণ নাগরিক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এটি আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকেই জানি। মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের সফর এবং পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের মুখে এই সিদ্ধান্ত কি-না, এমন প্রশ্নে ড. মোমেন বলেন, না, এ জন্য নয়। তিনি বলেন, চাপ তো আমাদের আছে। কিন্তু চাপে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কখনো ভ্রূক্ষেপ করেন না, এটা আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে, তিনি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর মেয়ে। বাংলাদেশের মঙ্গলের জন্য যা যা করার, তিনি তাই করেন। কোনো চাপের বশবর্তী হয়ে শেখ হাসিনা কাজ করেন না। আপনারা নানা রকম চিন্তা, হইচই করেন। এগুলো অলীক।

কারণ তিনি তার নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ড. মোমেন বলেন, জাতিসংঘে পশ্চিমা দেশের পক্ষ থেকে একটি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে আরেকটি রেজুলেশন এসেছিল এবং দুটোই মানুষের মঙ্গলের জন্য আনা হয়েছিল। বাংলাদেশ উভয় রেজুলেশনে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু সাউথ আফ্রিকার রেজুলেশন পর্যাপ্ত সমর্থন না পাওয়ার কারণে ভোট দেওয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে সৃষ্ট মানবিক সংকট অবসানে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ত্রাণ কার্যক্রমের সুযোগ দিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বৃহস্পতিবার একটি প্রস্তাব পাশ হয়। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের বিশেষ জরুরি অধিবেশনে ইউক্রেনের তোলা ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১৪০ দেশ। এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসনের কারণে রাশিয়ার নিন্দা জানিয়ে সাধারণ পরিষদে আরেকটি প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল বাংলাদেশ। তবে এবার ইউক্রেনের মানবিক সংকট অবসানের দাবির পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশও।

এর আগে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রস্তাবে ভোট না দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, একতরফা প্রস্তাব ছিল। সেখানে মোটামুটিভাবে রাশিয়াকে শুধু দোষারোপই করা হয়েছে। কিন্তু অন্যপক্ষের নামই আসেনি। তো, আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এটা অত্যন্ত পার্টিজান এবং এটাতে যুদ্ধ থামবে না। যুদ্ধ থামাতে হলে উভয়কে আন্তরিকতার সঙ্গে সামনে আসতে হবে। কিন্তু ওটাতে দোষারোপের মানসিকতা ছিল। আর আমরা কোনো দলে নাই।

সেমিনারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ২৫ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। একটি আন্তর্জাতিক পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছিল, ২৫ মার্চ সাত হাজার লোককে হত্যা করা হয়। কিন্তু এই তথ্যটি সঠিক নয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ন্যূনতম ২৫ হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে, কমলাপুরে ট্রেনের যাত্রীদের, সদরঘাটে লঞ্চের যাত্রীদের, বস্তিবাসী, নারী, শিশু এবং ঘুমন্ত মানুষদের হত্যা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালনের স্বীকৃতি অর্জনের জন্য আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সমস্যা হলো একটা দিবস পরিবর্তনের জন্য জাতিসংঘে ভোটের প্রয়োজন হয়। আমরা আশা করছি বাংলাদেশে যে গণহত্যা হয়েছে, তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমরা পাব। সেমিনারে বক্তব্য উপস্থাপন করেন জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রফেসর গ্রিগোরি স্টেনস্টোন এবং জেনোসাইড স্কলার ডা. হেলেন জারভিস।