আজকের দিন তারিখ ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার, ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
/////হাইলাইটস///// ইউক্রেন হামলা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেবে!

ইউক্রেন হামলা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেবে!


পোস্ট করেছেন: delwer master | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ১৬, ২০২২ , ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////


দিনের শেষে ডেস্ক : বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সরবরাহ দেয়ার পর ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ভয়াবহ এক রূপ নিয়েছে অনেকটা থিতিয়ে আসা এই যুদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টজো বাইডেন ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সরবরাহ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে আছে কয়েক শত ড্রোন। সাজোয়া যান এবং হেলিকপ্টার। এর ফলে এই যুদ্ধ সরাসরি ন্যাটো এবং রাশিয়ার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। যদি তাই হয়, ন্যাটো এবং রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে তা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের রূপ নিতে পারে। ওয়ার্ল্ড সোশ্যালিস্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আঁন্দ্রে ডেমনের লেখা এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, এরই মধ্যে কৃষ্ণ সাগরে ডুবে গেছে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ মস্কোভা। ইউক্রেন দাবি করেছে তারা যুদ্ধজাহাজ বিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছিল তাতে। তবে তাদের এ দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে ক্রেমলিন।
ওই জাহাজে থাকা প্রায় ৫০০ নাবিককে উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে রাশিয়ার একজন সিনিয়র আইনপ্রণেতা কনস্টান্টিন জাতুলিন দাবি করেছেন, ওই হামলায় রাশিয়ার বেশ কিছু সেনা নিহত হয়েছে। যুদ্ধজাহাজটি ডুবে যাওয়া নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ওলেক্সি আরেস্তোভিচ বলেছেন, এটা এক গুরুত্বপূর্ণ বিশাল ইভেন্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়ার নৌবাহিনীর জন্য এটা সবচেয়ে বড় পরাজয়। ১৯৪৫ সালের পর মস্কোভা হলো সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজের ডুবে যাওয়া।

এর আগে ইউক্রেনে নতুন সামরিক অস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে দেশটিকে বিপুল ‘ইন্টেলিজেন্স শেয়ার’ করার ঘোষণা দেয়। এ নিয়ে মঙ্গলবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রিপোর্ট করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের এই ভূমিকার কারে ডনবাস ও ক্রাইমিয়া অঞ্চলে রাশিয়ার বাহিনীকে টার্গেট করতে সক্ষম হবে ইউক্রেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইন্টেলিজেন্স শেয়ার’ করায় মস্কোভা ডুবে যাওয়ায় কোনো ভূমিকা রেখেছে কিনা তা পরিষ্কার নয়। ওদিকে ওই যুদ্ধজাহাজ ডুবে যাওয়ার পরে রাশিয়া দাবি করেছে, বৃহস্পতিার ইউক্রেনের হেলিকপ্টার তাদের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে। রাশিয়ার দাবি এই হেলিকপ্টার দিয়ে সীমান্তের কাছে ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে ক্লিমোভো গ্রামে হামলা চালানো হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন সাত জন। ওদিকে বৃহস্পতিবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কর্মকর্তারা ঘোষণা দিয়েছেন যে, রাশিয়া থেকে ইউরোপের দেশগুলোর জন্য তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ চলছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়টি চূড়ান্ত করা হতে পারে। আগের দেয়া নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এই পরিকল্পনায় কাজ হচ্ছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে সরাসরি হামলা জোরালো করেছে রাশিয়া। ওই শহরজুড়ে ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটনানো হয়েছে। শহরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেখানে একটি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানায় হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়া সরকার নিয়ন্ত্রিত দৈনিক পত্রিকা ইজভেস্তিয়া লিখেছে, শুক্রবার ১৫ই এপ্রিল রাতে কিয়েভের বিভিন্ন অংশে শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। রাজধানীর বিশাল অংশে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। এর আগে বৃহস্পতিবার পেন্টাগন ঘোষণা দেয় যে, তারা ইউক্রেনকে ৩০০ সুইটব্লেড ট্যাকটিক্যাল আনম্যানড এরিয়াল সিস্টেম, ৫০০ জ্যাভেলিন ক্ষেপণাস্ত্র, কয়েক হাজার অস্ত্র বিরোধী ব্যবস্থা, ২০০ এম১১৩ আর্মড পার্সোনেল ক্যারিয়ার্স, ১০০ আর্মড হাই মোবিলিটি মাল্টিপারপাস হুইলড ভেহিক্যাল এবং ১১টি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার দেবে। এ ছাড়া স্থল মাইন তো আছেই।

পেন্টাগনের মতে, বাইডেন প্রশাসনের শুরু থেকে ইউক্রেনকে ৩২০ কোটি ডলার নিরাপত্তা সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে ২৪ শে ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে প্রায় ২৬০ কোটি ডলার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওদিকে ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তার দেশ ন্যাটোতে যোগ দিতে পারে। এ ঘোষণার পরপরই ইউক্রেনে অস্ত্রের শিপমেন্ট বাড়ানোর ঘোষণা নতুন করে দেয়া হয়। এর জবাবে রাশিয়ার কর্মকর্তারা বড় আকারে পারমাণবিক ‘বিল্ডআপের’ হুমকি দিয়েছে। রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ার দমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, যদি সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দেয়, তাহলে ন্যাটো জোটের বিস্তৃতি হবে রাশিয়া সীমান্ত পর্যন্ত। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এসব সীমান্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা হবে। মেদভেদেভ সতর্ক করে বলেছেন, ্এক্ষেত্রে ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় ইস্কান্দার, হাইপারসনিক এবং পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করতে পারে রাশিয়া। এর ফলে পারমাণবিক এক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে। তা হবে অত্যাসন্ন এবং ভয়াবহ বিপদের।

অন্যদিকে নিজেদের অবস্থান অনুযায়ী রাশিয়া সীমান্তের কাছাকাছি পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার ঘটাচ্ছে ন্যাটো। ব্রাসেলসে ন্যাটোর পারমাণবিক পলিসি বিষয়ক ডিরেক্টরেটের পরিচালক জেসিকা কক্স ডিফেন্স নিউজকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো মিত্ররা এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান সহ পারমাণনিবক মেকানিক্স ব্যবহার করতে পারে। ন্যাটো সীমান্তজুড়েতারা কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করতে পারে। গত মাসে ন্যাটো সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, পুতিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। এ ঘোষণার পর যুদ্ধে এক উত্তেজনা শুরু হয়। ওই সম্মেলনের পরে বাইডেন ঘোষণা দেন যে, দীর্ঘ সময়ের জন্য আমাদেরকে এখন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদেরকে আজকের জন্য, আগামী দিনের জন্য, তারপর বছরের পর বছর এবং দশকের পর দশকের জন্য ঐকবদ্ধ হতে হবে। এ সপ্তাহে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও এক দফা কড়া বক্তব্য দিয়েছেন বাইডেন। ইউক্রেনে রাশিয়া গণহত্যা চালাচ্ছে বলে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন।
একদিকে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিচ্ছে দেশে দেশে। করোনা মহামারি ভয়াবহতা সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে যুদ্ধের এই অবস্থা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। এ থেকে ন্যাটো এবং রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা আছে। যদি, তা-ই হয়, তাহলে এই যুদ্ধ রূপ নিতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে!