শেষ পর্যন্ত মাঠে নামছেন জাতিসংঘ মহাসচিব
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ২৩, ২০২২ , ২:৩৯ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাবিশ্ব
দিনের শেষে ডেস্ক : গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ভয়ানক এ যুদ্ধে এ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষের প্রাণ গেছে বলে মনে করা হয়। দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন অর্ধ কোটিরও বেশি ইউক্রেনীয়। তারা পোল্যান্ডসহ প্রতিবেশি দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।
এ অবস্থায় যুদ্ধ থামাতে তুরস্কসহ কয়েকটি দেশ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চেয়েছে। একটি সমঝোতার পথ খুঁজে পেতে তুরস্কে একাধিক বৈঠকেরও আয়োজন করা হয়। তবে এসব বৈঠক থেকে এমন কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি যা ইউক্রেনে যুদ্ধ থামিয়ে আবারও শান্তি ফিরিয়ে আনবে।
‘যুদ্ধ থামাও’, ‘যুদ্ধাপরাধ হচ্ছে’- এ ধরনের উক্তি বারবারই শোনা যাচ্ছিল বিশ্বসংস্থা জাতিসংঘের মুখে। তারা বারবার শান্তির ডাক দিয়ে যাচ্ছিলেন। জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসও যুদ্ধ থামিয়ে একটি সমঝোতার পথ বের করার জন্য দুই পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন।
কিন্তু প্রকৃত পক্ষে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে মাঠে নেমে চেষ্টা তেমন দৃশ্যমান হয়নি। জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকেও দেখা যায়নি।
এবার মাঠে নামছেন সেই গুতেরেসই। ‘নেভার লেট দেন নেভার’; অর্থাৎ একেবারে না হওয়ার চেয়ে দেরি করে শুরু করা ভালো। তাই গুতেরেসের এ চেষ্টাকে স্বাগত জানানো ছাড়া কোনো পথ খোলা থাকছে না।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর দুই মাস পার হয়ে গেছে। এরই মধ্যে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়ে দেশ ছেড়েছেন লাখ লাখ ইউক্রেনীয়। যারা দেশের অভ্যন্তরে রয়েছেন, তাদের ভেতরে আতঙ্ক- কখনো রাশিয়ার ফেলা বোমা তাদের প্রাণ কেড়ে নিয়ে যায়!
যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমের বিশ্ব, কার্যত এসব নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপরও। বিশ্বব্যাপী বেড়ে গেছে তেল, গ্যাস, স্টিল ও খাদ্যপণ্যের মূল্য। কারণ, রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল রপ্তানিকারক দেশ। একইসঙ্গে বিশ্বে উৎপাদিত গমের একটি বড় অংশ আসে রাশিয়া থেকে।
শুক্রবার জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস এ সপ্তাহেই রাশিয়া ও ইউক্রেন সফর করবেন। এসব সফরে তিনি দুই দেশের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
গুতেরেস দুইদিনের মস্কো সফরের পর বৃহস্পতিবার জেলানস্কি ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করবেন। পুতিন মঙ্গলবার গুতেরেসের সাথে সাক্ষাত করবেন- এমন খবর নিশ্চিত করেছে ক্রেমলিন।
জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস
সূত্র জানায়, এ যুদ্ধের কারণে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা আংশিকভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এ পরিষদের সদস্য দেশগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন ও রাশিয়া। এদের মধ্যে রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে চীন। তারা বলছে, এটি মস্কোকে দুর্বল করার পশ্চিমা প্রচেষ্টার অংশ। এক্ষেত্রে রাশিয়া হচ্ছে ভূক্তভুগি দেশ।
যা হোক, একটু দেরি হলেও সমঝোতার প্রচেষ্টায় সরাসরি মাঠে নেমেছে জাতিসংঘ। এর আগে তারা যে কোনো চেষ্টা চালাননি- এমন নয়। কিন্তু সেসব চেষ্টার চেয়ে এবার সরাসরি ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে জাতিসংঘ মহাসচিবকে। ফল কী আসে, তা হয়তো সময়ই বলে দেবে?
শেষ হোক ইউক্রেনে রক্তক্ষয়ী লড়াই। সেখানে মানুষ স্বাভাবিত জীবনে ফিরুক। আর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ভয়ঙ্কর ভবিষ্যদ্বানী মিথ্যা প্রমাণিত হোক। চলতি সপ্তাহে ভারত সফরে থাকা বরিস বলেছেন, আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতে পারে ইউক্রেন যুদ্ধ। এমনটা হলে আরও অনেক ক্ষতি দেখতে হবে বিশ্বকে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমএম