‘তামাকে সুনির্দিষ্ট কর আরোপে বিনামূল্যে হৃদরোগ চিকিৎসা সম্ভব’
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ২৬, ২০২২ , ৭:২৮ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অন্যান্য
দিনের শেষে প্রতিবেদক : জনস্বাস্থ্য রক্ষায় আসন্ন অর্থবছরে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলোর প্রস্তাবিত সুনির্দিষ্ট তামাক কর আরোপ হলে সরকারের প্রায় ৩৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে। যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা বেশি। অতিরিক্ত এ রাজস্ব আয়ের মাত্র ৪.৪৫ শতাংশ ব্যয় করলে দেশের সকল রোগীদের হৃদরোগ চিকিৎসা বিনামূল্যে সম্ভব বলে জানিয়েছেন দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ২৬ এপ্রিল ২০২২, মঙ্গলবার সকাল ১০.৩০ টায় “বিনামূল্যে হৃদরোগের চিকিৎসা নিশ্চিতকরণে তামাকজাত দ্রব্যের কর ব্যবস্থাপনা : সম্ভাবনা ও করণীয়“ শীর্ষক এক অনলাইন কনসালটেশন মিটিংয়ে তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর), বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) এবং বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) এর উদ্যোগে অনলাইন মিটিং সফটওয়ার জুমে এ কনসালটেশন মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। মিটিংয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিইআর এর ফোকাল পার্সন ড. রুমানা হক। অনুষ্ঠানে বিষয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ডিপার্টমেন্ট অব ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম। এছাড়া অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম কর্মী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও তামাক বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি অংশনেন। মূল বক্তব্যে ড. রুমানা হক আসন্ন অর্থবছরের জন্য তামাক কর প্রস্তাব তুলেধরেন। প্রস্তাবে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য নিম্ন স্তরে ৫০ টাকা, মধ্যম স্তরে ৭৫ টাকা, উচ্চ স্তরে ১২০ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে যথাক্রমে ৩২.৫০ টাকা, ৪৮.৭৫ টাকা, ৭৮.০০ টাকা এবং ৯৭.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেন। এছাড়া ফিল্টারবিহীন বিড়ির ক্ষেত্রে কেবল ২৫ শলাকার প্যাকেট রেখে তার খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক এবং ফিল্টারযুক্ত বিড়ির ২০ শলাকার খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেওয়া হয়। বাজেট প্রস্তাবে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি তামাকের সাদা পাতাও করের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানানো হয়। এছাড়া সকল তামাকজাত দ্রব্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ পূর্বের ন্যায় বহাল রাখারও প্রস্তাব জানান তারা। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এই প্রস্তাব অনুসারে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কর আরোপ করা হলে প্রায় ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় সম্ভব। যার একটি অংশ সরকার তামাক ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যায় করতে পারে। বক্তারা বলেন, এই অতিরিক্ত রাজস্ব আয় থেকে মাত্র ৪১০ কোটি টাকা ব্যায় করে সকল রোগীর হৃদরোগ চিকিৎসা বিনামূল্যে নিশ্চিত করা সম্ভব। বর্তমানে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৭ শতাংশ নাগরিকদের ব্যয় করতে হয়। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে কল্যাণকর রাষ্ট্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। নাগরিকদের কল্যাণে রাষ্ট্র নানা দায়িত্ব নিচ্ছে। এমন উদ্যোগ জন-কল্যাণে একটি অনন্য উদ্যোগ হয়ে থাকবে। বক্তারা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে তিন ধরণের হৃদরোগ চিকিৎসায় (এনজিওগ্রাম, রিং পরানো ও বাইপাস সার্জারি) রোগিরা গত ২৮৬.৬১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে যা তামাক খাত থেকে কাঙ্ক্ষিত অতিরিক্ত রাজস্ব আয়ের মাত্র ৩.১২%। ওই তিন হাসপাতালে দেশের ৭০% হৃদরোগি চিকিৎসা নেন। সে হিসাবে দেশের সকল হৃদরোগীর অনুরূপ চিকিৎসা নিতে ব্যয় হবে ৪১০ কোটি টাকা যা ওই অতিরিক্ত রাজস্ব আয়ের ৪.৪৫% মাত্র। তারা আরও বলেন, মূল্য কারসাজি করে তামাক কোম্পানীগুলো প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এই ফাঁকি রোধ করে ওই টাকাও স্বাস্থ্য সেবায় ব্যায় করা যেতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাক মুক্ত করতে অনুষ্ঠানে প্রস্তাবিত কর কাঠামো বাস্তবায়ন, সুনির্দিষ্ট কর আরোপ, তামাক কাম্পানীর মূল্য কারসাজি প্রতিরোধ, তামাকজাত দ্রব্য থেতে আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব আয়ের একটি অংশ তামাক ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যয় করা এবং একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় তামাক কর নীতি প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়।