তেলের তেলেসমাতি দৌড়াচ্ছে পেঁয়াজ, আলু, ডিম
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ১৩, ২০২২ , ৫:১৬ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
সানি আজাদ : কয়েকদিনের ব্যবধানে রাজধানীর খুচরা বাজারে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এখনও অস্থিরতা কাটেনি সয়াবিন তেলের দামেও। সয়াবিন তেলের সংকটের মধ্যেই বেড়েছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। বিক্রেতারা জানান, মাত্র তিন চার দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা। পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আলু ও ডিমের দাম। হঠাৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যগুলোর দাম বাড়ায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভোক্তারা। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে দোকান ভেদে ১১৫/১২০ টাকা ডজন। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়ত থেকে আমরা বেশি দামে কিনেছি, তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। দাম কেন বাড়ল তারাই জানেন। আড়তদাররা বলছেন, স্থলবন্দরের আশপাশের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুত করে বেশি দামে বিক্রি করছেন, পাশাপাশি সরকার নতুন করে পেঁয়াজ ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) না দেয়ায় দাম বাড়ছে। এদিকে, চট্টগ্রামের বৃহত্তম পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম দু’দিনে বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। সপ্তাহের শুরুতে খাতুনগঞ্জে যে পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিতে ২৫ থেকে ২৮ টাকা, গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা। চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। কিছুটা স্বস্তি এসেছে সবজির বাজারে। দাম কিছুটা ঢেড়স, পটল ও করলার দামে। তবে দাম বেড়েছে পেঁপের।
বাজারে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে। বাজারে মুরগি ও গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে আগের চড়া দামেই। বিক্রেতারা জানান, সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে এসব পণ্যের। এদিকে, বাড়তি মুনাফার আশায় ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা কারসাজি করছে। আগের কম মূল্যে কিনে বর্তমান বাড়তি দরে বিক্রির জন্য দেশজুড়ে তেলের অবৈধ মজুত গড়ে তোলা হয়। এই পরিস্থিতিতে বাজার একেবারে তেলশূন্য হয়ে পড়ে। ক্রেতাদের নাজেহাল অবস্থা তৈরি হয়। সমস্যা সমাধানে মাঠে নামে বাজার তদারকির একাধিক সংস্থা। তারা অবৈধভাবে মজুত করা তেল বের করতে শুরু করে। পরিস্থিতি এমন- গত পাঁচ দিনে ৬ লাখ ৮৬ হাজার ২৬৮ লিটার তেল জব্দ করে অসাধুদের শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার এই দুদিনে সারা দেশে প্রায় ৫ লাখ ৬৬ হাজার ২৬৮ লিটার তেল উদ্ধার করে সাধারণ ভোক্তার মাঝে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করে। বাকি তেল গত সোম ও মঙ্গলবার জব্দ করা হয়। সূত্র জানায়, গত দুদিনে ৫ লাখ ৬৬ হাজার ২৬৮ লিটার তেলের মধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ২ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪৮ লিটার তেল উদ্ধার করে সাধারণ ভোক্তার মাঝে আগের দরে বিক্রি করে। পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযানে এক লাখ ৩০ হাজার ৭০০ লিটার তেল উদ্ধার করে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত ৭৫ হাজার ১২০ লিটার তেল ও র্যাবের পক্ষ থেকে এই দুদিনে ২৪ হাজার ৯৫০ লিটার তেল জব্দ করা হয়। জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, দেশে তেলের কোনো সংকট নেই। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দেশে তেলের সংকট তৈরি করে রেখেছে। তারা অবৈধ মজুত করে অস্থিরতা তৈরি করে বেশি দরে বিক্রি করতে চেয়েছে। কিন্তু আমরা তা হতে দেব না। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাঠ প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করছে। দেখা গেছে, এই অভিযানে একদিনেই (বৃহস্পতিবার) সারা দেশে প্রায় পাঁচ লাখ লিটার তেল উদ্ধার করে অসাধুদের শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। পাশাপাশি উদ্ধর করা তেল দাম বাড়ার আগে যে মূল্য ছিল সেই দরে বিক্রি করা হয়েছে। এদিকে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য মতে- গত বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করে ১০১ ড্রাম সয়াবিন ও ১৩০ ড্রাম পাম অয়েল জব্দ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় মজুত করার দায়ে অসাধুদের ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি খাগড়াছড়িতে ৩৭ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাড়ে ৪ হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করে বাজারে বিক্রি করে ভোক্তা অধিদপ্তর। পাবনায় ৫ ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে এক লাখ ২৭ হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ ও ভোক্তা অধিদপ্তরের তদারকি দল। খুলনায় এদিন তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২ লাখ ৪৬ হাজার লিটার তেল উদ্ধার করে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করে র্যাব-৬ এর তদারকি দল। এছাড়া বরিশালের বাবুগঞ্জে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিদপ্তর। সেখানে ৬১৫ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া কিশোরগঞ্জ থেকে ৪ হাজার লিটার, মাদারীপুর থেকে ৯৭২ লিটার এবং আরও চারটি অঞ্চল থেকে ১০৯, ৫১৫, ৫ হাজার, ৭৫৩, ৩০ হাজার, ১০ হাজার ও ৩ হাজার ৫০ লিটারসহ মোট ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৩৮ লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়।
বিভিন্ন সংস্থার তথ্য মতে, গত বুধবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সারা দেশ থেকে ৭৪ হাজার ৯১০ লিটার তেল উদ্ধার করা হয়। র্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে ৩৭ হাজার লিটার তেল উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের প্রেক্ষিতে আরও এক হাজার ৪২০ লিটার তেল উদ্ধার করে সাধারণ ভোক্তার মাঝে প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন ১৩৬ টাকা ও বোতল সয়াবিন ১৬০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি অসাধুদের বিভিন্ন ধারায় জরিমানা করা হয়। এ ধরনের অনিয়ম আবারও করলে জেলে পাঠানোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। কনজুমাসর ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন মালেক বলেন, এ ধরনের অভিযান সত্যিই প্রশংসনীয়। কারণ মজুত করা তেল বের করে ন্যায্য দরে বিক্রি করা হচ্ছে। অসাধুদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। তবে যে হারে শাস্তি হওয়ার কথা সে হারে হচ্ছে না। অসাধুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা দরকার। যাতে কোনো পণ্য নিয়ে অসাধুরা কারসাজি না করতে পারে।