পদ্মা সেতু: পিরোজপুরের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে লাভবান হবেন
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১৩, ২০২২ , ৪:০০ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য
দিনের শেষে ডেস্ক : আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে ততোই আবেগে, উচ্ছ্বাসে, উত্তেজনায় আনন্দে অবগাহন করছে পদ্মা নদীর এপাড়ের ২১ জেলার কোটি-কোটি মানুষ, যারা যুগের পর যুগ ধরে এই একটি সেতুর অভাবে সীমাহীন দূর্ভোগ সহ্য করেছেন নীরবে। এসব মানুষের মধ্যে আত্মপ্রত্যয় দৃঢ় ছিল যে একদিন না একদিন বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরেই উত্তাল পদ্মার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এমন একটি সেতু যেটা হবে আমাদের গর্বের ধন। ২৫ জুন যে মুহুর্তে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করবেন, সেই মুহুর্তটি আমাদের ইতিহাসের পাতায় আরেকটি গৌরবদীপ্ত স্থান পেয়ে যাবে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পিরোজপুর থেকে গুলিস্থান যেতে কতো সময় লাগবে? ভোরে রওনা দিয়ে অফিস আদালতের কাজ সেরে বাড়ি এসে রাতের খাবার খাওয়া যাবেতো? ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার বিকেলে রওনা হয়ে রাত ৭টা-৮টার মধ্যে বাড়ি এসে মায়ের হাতের রান্না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে পারবেতো? অফিস আদালতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা রোববার ভোরে বাসে চেপে রাজধানীতে পৌঁছে সঠিক সময়ে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হতে আর বাঁধা থাকছে নাতো?
এসব আলোচনা ছাপিয়ে আরও যে সব বিষয় প্রাধান্য পাচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- বাংলার আপেলখ্যাত পিরোজপুরের পেয়ারা ও আমড়া। এছাড়া পিরোজপুরের বিভিন্ন অঞ্চলের উৎপাদিত শাক-সবজি, মাছ, মুরগী, দুধ, ডিম এখন সরাসরি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাবে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে।
পিরোজপুর অঞ্চলের পেয়ারার সুনাম রয়েছে দেশের সর্বত্র। দ্রুত পচনশীল কিন্তু স্বাদে-গন্ধে অদ্বিতীয় এ পেয়ারাটি শুধুমাত্র পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার একটি বিরাট এলাকা এবং তৎসংলগ্ন ঝালকাঠীর কিছু এলাকায় ব্যাপকভাবে উৎপাদন হয়ে থাকে।
এতদিন পদ্মায় সেতু না থাকায় ফেরী পারাপারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে এই পেয়ারাবাহী ট্রাকগুলোর অনেক পেয়ারা পচে অখাদ্য হয়ে যেতো। এ কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মূখীন হতে-হতে এক পর্যায়ে পিরোজপুরের এ পেয়ারা ক্রয়-বিক্রয় থেকে বিরত থাকতো। এর ফলে পেয়ারার বাজারে ধ্বস নেমে হাজার-হাজার পেয়ারা চাষী বিপুল পরিমাণ অর্থের ক্ষতির সম্মূখীন হয়ে নিঃস্ব হয়েছে।
এ পেয়ারা উৎপাদিত অঞ্চলগুলোতে এখন আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। মধ্য আষাঢ়ে পেয়ারা পাকা শুরু করলে চাষীরা এবার পেয়ারার ন্যায্য মূল্য পাবেন- ফলে তাদের সংসারে ফিরে আসবে স্বচ্ছলতা। স্বরূপকাঠী উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার জানান- শুধু পেয়ারা চাষীরাই নয়, পেয়ারা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সবাই এ বছর থেকে আর্থিকভাবে ব্যাপক লাভবান হবে। এ অঞ্চলের এই সুমিষ্ট পেয়ারা ছড়িয়ে পড়বে দেশের বড়-বড় শহর বন্দর অঞ্চলে। বাংলার আপেলখ্যাত পেয়ারা উৎপাদনের এ উপজেলার নামও সঙ্গে ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশে। স্বরূপকাঠী উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের আদাবাড়ি গ্রামের নিত্যানন্দ সমদ্দার জানান- পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের অনেক পরিশ্রমে উৎপাদিত এ ফল বাগান বিক্রি করে আমরা লাভবান হতে পারবো।
স্বরূপকাঠীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোশারফ হোসেন আশা প্রকাশ করে বলেন- পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবার পর থেকেই এ অঞ্চলের ফলমূল, শাক-সবজি চাষীদের এবং ব্যবসায়ীদের জীবনে ব্যাপক অর্থনৈতিক পরিবর্তন সাধিত হবে। স্বরূপকাঠী উপজেলা কৃষি অফিসার চপল কৃষ্ণ নাথ জানান, এ অঞ্চলে ৬৫০ হেক্টরে ৬ হাজার ৫০০ টন সু-স্বাদু পেয়ারা এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে এবং পেয়ারা চাষীরা লোকসান কাটিয়ে উঠে লাভের মুখ দেখতে পাড়বে।
তিনি আরও জানান, স্বরূপকাঠী অঞ্চলে স্বাদ ও গন্ধের আরও একটি কৃষিপণ্য হচ্ছে ঘৃতকাঞ্চন জাতের বোম্বাই মরিচ। ৭০ হেক্টরেরও অধিক জমিতে ৪০০ টন বোম্বাই মরিচ উৎপাদিত হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যার কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা না আসায় মরিচ চাষীরা নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হতো। এখন থেকে বোম্বাই মরিচ চাষীরাও অনেক লাভবান হবে।
পিরোজপুরের সুস্বাদু আমড়ার ব্যাপক উৎপাদন হয়ে থাকে স্বরূপকাঠী ও কাউখালী উপজেলায়। এ বিষয় জানতে চাইলে স্বরূপকাঠীর উপজেলা কৃষি অফিসার জানান- শুধুমাত্র স্বরূপকাঠীতেই ১৬০ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ২০০ টন আমড়ার উৎপাদন হয়ে থাকে। এখন থেকে পচনশীল এ ফলটিও সরাসরি পদ্মা সেতু পেরিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে এবং আমড়া চাষীরাও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।