‘হাওয়া’ সিনেমার বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদ শিল্পী সংঘের
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ২৪, ২০২২ , ৫:৩৭ অপরাহ্ণ | বিভাগ: বিনোদন
দিনের শেষে প্রতিবেদক : দেশ জুড়ে প্রদর্শিত হওয়া ‘হাওয়া’ সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার। সোমবার (২২ আগস্ট) রেজিস্ট্রি ডাক ও ই-মেইলের মাধ্যমে তিনি এ নোটিশ পাঠান। এতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এবার এ নোটিশের প্রতিবাদ জানিয়েছে অভিনয় শিল্পী সংঘ। ছোট পর্দার শিল্পীদের সংগঠনটির সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম ও সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসানের স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবাদলিপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। শিল্পী ও কলাকুশলীরা এটি শেয়ার করে সমর্থন জানাচ্ছেন।
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যখন কয়েকজন তরুণ, মেধাবী, শিক্ষিত শিল্পী, নির্মাতার হাত ধরে ধ্বংসস্তূপ থেকে আবার নতুনভাবে একটু একটু করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে, আবার যখন সিনেমা হলে মানুষের জোয়ার নেমেছে, মানুষ দলে-বলে সিনেমা দেখতে আসছেন, ঠিক তখনই এ জোয়ার বন্ধ করার ষড়যন্ত্র নিয়ে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে এ অশুভ শক্তি বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার জন্য জঘন্যতম তৎপরতা চালিয়ে আসছে। এবার তারা আইনের ধারা-উপধারাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যে হাওয়ায় পুরো বাংলাদেশ ভাসছে, সেই হাওয়াকে রুদ্ধ করার ষড়যন্ত্রের নকশা নিয়ে উপস্থিত। বলা হচ্ছে হাওয়া চলচ্চিত্রের সব ধরনের প্রদর্শনী বন্ধ করতে হবে। বলা হচ্ছে, বন্যপ্রাণী আইন লঙ্ঘন হয়েছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
এতে আরও বলা হয়, শিল্পী সাহিত্যিক সংস্কৃতিকর্মী মানেই তারা সমাজের সবচেয়ে সচেতন জনগোষ্ঠীর অংশ। আমরা কখনো আমাদের সমাজ, পরিবেশ ও প্রকৃতিবিরুদ্ধ কোনো কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করি না। বরং সব ধরনের সমাজ সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে শিল্পীরাই সর্বাগ্রে সবসময় ভূমিকা পালন করে আসছে। নাটক চলচ্চিত্র নির্মাণে কখনো শিল্পী নির্মাতারা পশু-পাখি, প্রাণী হত্যা ও নির্যাতন করেন না। গল্পের প্রয়োজনেই কখনো কখনো পশু-পাখিদের দেখানো হয়ে থাকে, যা হাওয়া চলচ্চিত্রে ঘটেছে।
‘জেলেরা গভীর সমুদ্রে হারিয়ে গেলে পাখি ছেড়ে দিয়ে দেখেন কাছাকাছি কোনো স্থলভূমি আছে কি না, যা এ চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে। এটি জীবনেরই অংশ। চলচ্চিত্রে ঘোষণাই দেওয়া হয়েছে, এখানে কোনো বন্যপ্রাণীর ক্ষতি সাধন করা হয়নি। জন্মলগ্ন থেকে আমরা বিভিন্ন নাটক চলচ্চিত্রে দেখে আসছি, এমন কত দৃশ্য। সেগুলো নিয়ে আপত্তি উঠলো না কেন! সরকার নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রযোজিত ভীষণ জনপ্রিয় নাটক বহুব্রীহির সেই খাঁচায় বন্দি টিয়া পাখির তুই রাজাকার সংলাপ এখনো আমাদের স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে।’
প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, এমন হাজারো ঘটনায় কর্তৃপক্ষ তখন কোথায় ছিল? এ ঘটনায় চলচ্চিত্রের প্রযোজক, পরিচালককে ডেকে কথা বলা যেতো। আইন লঙ্ঘন হয়ে থাকলে কীভাবে তা শুধরানো যায়, সেই আলোচনা ও পদক্ষেপ নেওয়া যেতো। তা না করে ২০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী বন্ধের জন্য আইনি তলব এসবই আমাদের শিল্প সংস্কৃতির কণ্ঠ রুদ্ধ করার, শিল্প-সাহিত্যের চর্চাকে নিরুৎসাহিত করার ষড়যন্ত্র হিসেবেই আমরা দেখছি।
‘নাট্য নির্মাতা অনন্য ইমনের বিরুদ্ধে ১৫ কোটি টাকার মামলা, মেজবাউর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে ২০ কোটি টাকার মামলা ও হাওয়া সিনেমা প্রদর্শনী বন্ধের ষড়ষন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। আমাদের সংস্কৃতি চর্চার পথকে রুদ্ধ করার সব অপচেষ্টাকে রুখে দেওয়ার জন্য আমরাও বদ্ধপরিকর।’
‘হাওয়া’ সিনেমার বিরুদ্ধে মামলায় বাদী হয়েছেন বন্য প্রাণী পরিদর্শক নারগিস সুলতানা। সাক্ষী করা হয়েছে তদন্ত কমিটিতে কাজ করা অন্য তিন সদস্য আব্দুল্লাহ আস সাদিক, অসীম মল্লিক ও রথিন্দ্র কুমার বিশ্বাসকে।