হু হু করে বাড়ছে বন্যার পানি, ডুবছে সড়ক
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ২, ২০২৩ , ৬:২০ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : টানা কয়েকদিনের অতিবৃষ্টি ও মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির প্রবল বর্ষণে সুনামগঞ্জের নদ-নদী ও হাওরের পানি হু হু করে বাড়ছে। প্রবল বৃষ্টি ও উজানের ঢলের পানিতে ইতিমধ্যে নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর ও ধর্মপাশার উপজেলার শত শত গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এদিকে তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে আনোয়ারপুর ব্রিজ সংলগ্ন এবং সত্তিয়ারখলা একশো মিটার নামক স্থানটি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে যানবাহন চলাচল বিচ্ছিন্ন রয়েছে। প্রয়োজনের তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকাযোগে মানুষকে জেলা সদরে যেতে দেখা গেছে। আনোয়ারপুরে ব্রিজে এবং সত্তিয়ারখলার ওপারে অসংখ্য মালবাহী ট্রাক, অটো ও পিকআপ আটকা পড়েছে। এদিকে সীমান্তবর্তী ‘বাগলী থেকে বারেকটিলা’ পর্যন্ত রাস্তাটির বেশ কয়েকটি স্থান পাহাড়ি ঢলে ভেঙে এবং ডুবে গেছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার সোলেমানপুর বাজার সংলগ্ন পাটলাই নদীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ মিলিমিটার, ছাতকের সুরমা নদীতে ১৭ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ২৪ মিলিমিটার ও দিরাইয়ে সুরমা নদীর পানি ৩ মিলিমিটার ও যাদুকাটা নদীর পানি শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে ৪৪ মিলিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় লাউড়েরগড় পয়েন্টে ১৪১ মিলিমিটার, ছাতকে ৩০ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জে ১৫০ মিলিমিটার, দিরাইয়ে ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বৃষ্টিপাতের ফলে যাদুকাটা, চলতি খাসিয়ামারা, চেলা, মনাই, সোমেশ্বরীসহ সব পাহাড়ি নদীর পানি বেড়েছে। এদিকে সুনামগঞ্জের ছাতকে সুরমা নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বাকি সব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মূলত গত তিন দিনের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়েছে। দুদিনের টানা বর্ষণ ও সীমান্তের ওপারে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় পাহাড়ি ঢল নেমেছে। চলাচলের সড়ক ডুবিয়ে ঢলের পানি ডুকছে হাওর ও লোকালয়ে। গত বুধবার থেকে পাহাড়ি ছড়ার ঢলের পানি সীমান্তবর্তী তাহিরপুর, মধ্যনগর দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর দিয়ে নদ নদীতে প্রবেশ করছে। মধ্যনগর উপজেলার রবিন নামে একজন জানান, বুধবার থেকে টানা বৃষ্টি এবং উজানের পানি এসে এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। ঢলের প্রবল স্রোতে সীমান্তঘেঁষা মহেশখলা-বাঙ্গালভিটা ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের ৮ কিলোমিটার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এতে ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি, মহেশখলা, ঘোলগাঁও, রংপুর, বাঙ্গালভিটা, রূপনগর, রেঞ্জিপাড়া ও কলতাপাড়া গ্রামের লোকজনের চলাচলের একমাত্র সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। এলাকার লোকজন পানি মাড়িয়ে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করছেন। তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, পাহাড়ি ঢলে বাদাঘাট ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উজানের ঢলের প্রবল স্রোতে সড়কের মাটি সরে গিয়ে বাদাঘাট থেকে তাহিরপুর যাওয়ার একমাত্র রাস্তার একটি ব্রিজের মাটি সরে গেছে। নিজ উদ্যোগে বস্তা মাটি দিয়ে কোনো রকম আটকিয়ে মানুষ চলাচলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন খান বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বালিয়াঘাট নতুন বাজার থেকে শ্রীপুর বাজার এবং কাউকান্দি হয়ে বাদাঘাট যাওয়ার একমাত্র সড়কটি পানির স্রোতে কয়েকটি যায়গায় ভেঙে গেছে এবং অধিকাংশ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে, বাড়ি ঘরে এখনো পানি ঢুকেনি। হাওর এলাকার কিছু কিছু বাজারে পানি ঢুকেছে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, তাহিরপুরের সীমান্ত এলাকায় ঢল নামার ফলে মাটির সড়কগুলোর বেশ ক্ষতি হয়েছে। মধ্যনগর-মহিষখলায় বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। তাহিরপুর বাদাঘাট সড়কটি ডুবে এবং ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুল হাওলাদার বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে কোনও কোনও নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে। এদিকে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে গেলে পানি দ্রুত নেমে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।