বরিশালে দুই মেয়র সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ১০
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ২২, ২০২৩ , ১২:১০ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ
বরিশাল অফিস : বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের নতুন কমিটি গঠন ও নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের দাবির পৃথক কর্মসূচি চলাকালে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে এ ঘটনা ঘটে। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ওই এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করে। এসময় প্রায় ঘন্টাব্যাপী বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে বাস চলাচল বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠিচার্জ ও আলোচনার মধ্য দিয়ে টার্মিনালের পরিস্থিতি শান্ত করে।
উপস্থিত শ্রমিকরা জানায়, গত বৃহস্পতিবার ২০ জুলাই মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। যেখানে সভাপতি করা হয় সদ্য বিলুপ্ত মহানগর শ্রমিক লীগ কমিটির সাধারন সম্পাদক পরিমল দন্দ্র দাসকে ও সাধারন সম্পাদক করা হয়েছে সদ্য বিলুপ্ত মহানগর ছাত্রলীগ কমিটির আহবায়ক রইজ আহমেদ মান্নাকে। সদ্য বিলুপ্ত মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন নতুন কমিটির ব্যাপারে কিছুই জানেননা দাবী করে প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার নগরীর নথুল্লাবাদ ও রুপাতলী বাস স্ট্যান্ডে মানববন্ধনের ঘোষনা দেন। অপরদিকে সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ অনুসারী শ্রমিক নেতা ও কাশিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিটন মোল্লার নেতৃত্বে বাস শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন চেয়ে ৬ দফা দাবিতে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি পালনের জন্য শ্রমিকদের নিয়ে নথুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ডে উপস্থিত হয়। এসময় হঠাৎ করেই আফতাব ও লিটন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। টার্মিনালের নিয়ন্ত্রন নিয়ে দফায় দফায় হাতাহাতি – ধস্তাধস্তি চলে। দুইদল শ্রমিকের দফায় দফায় মারামারির জেরে নগরীর নথুল্লাবাদ থেকে অভ্যন্তরীন রুটের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকরা রাস্তায় গাড়ি এলামেলো করে রাখে। এতে ঢাকা-বরিশালসহ দক্ষিনাঞ্চলের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় একঘন্টা পর বেলা ১২ টার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনলে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়।
টার্মিনাল সুত্রে জানা গেছে, বিবাদমান শ্রমিকের একপক্ষ নবনির্বাচিত সিটি মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লার সমর্থক। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আফতাব হোসেন। অপরপক্ষের নেতা কামাল হোসেন লিটন মোল্লা বর্তমান সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সেরনিয়াবত সাদিক আবদুল্লাহ অনুসারী। পরে ঘটনাস্থলে আসেন সদর আসনের এমপি পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুকের অনুসারী ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব, নবনির্বাচিত সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ অনুসারী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন ও বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মঈন তুষারসহ বেশ কিছু সংখ্যক নেতাকর্মী। তারা আফতাব হোসেনের সাথে টার্মিনাল অফিসে অবস্থান নেন। এসময় বিপুল পরিমান পুলিশ ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়। বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আফতাব হোসেন জানান, তিনি বাস স্ট্যান্ডে প্রবেশের সাথে সাথে লিটন মোল্লার নেতৃত্বে কিছু লোক তার উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে। একই সাথে তারা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন দাবী করে। আফতাব বলেন, শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন দেয়ার এখতিয়ার তার না থাকলেও সেই ইস্যুতেই হামলা চালানো হয়। পরে পুলিশ তাকে রক্ষা করেছে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, বিদায়ী মেয়র সাদিকের ইন্ধনে লিটন মোল্লা টার্মিনালে অরাজকতার চেষ্টা চালাচ্ছে। শ্রমিক নেতা ও কাশিপুর ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন লিটন মোল্লা বলেন, শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের জন্য ৬ দফা দাবিতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সাধারণ শ্রমিকদের নিয়ে বাস টার্মিনালে সংবাদ সম্মেলন করার জন্য এলে টার্মিনালে আগে থেকে অবস্থান নেয়া আফতাব ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমিসহ শ্রমিকদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় পুলিশ সদস্যরা আমাকে রক্ষা করলেও আমার শ্রমিকদের অনেকেই আহত হয়েছে। এ বিষয়ে আমি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। লিটন মোল্লা বলেন, তিনি শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন দাবী করায় আফতাবের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়েছে। জানা গেছে, সিটি নির্বাচনের পর সাদিক অনুসারীদের হটিয়ে টার্মিনালের নিয়ন্ত্রন নেন আফতাব হোসেন। সাদিকপন্থীরা পুনরায় টার্মিনালের নিয়ন্ত্রন নেয়ার চেষ্টার করলে গত কয়েকদিন যাবত টার্মিনাল এলাকায় উত্তেজনা চলছিল। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলী আশরাফ ভূঞা ও উপ-কমিশনার (উত্তর) আশরাফ উল্যাহ তাহের জানান, অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। বর্তমানে বাস টার্মিনাল এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে, বাসসহ যানবাহন চলাচল করছে।