বরিশালে আট মাসে সড়কে ঝড়েছে শতাধিক প্রাণ
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ১৭, ২০২৩ , ৬:১৮ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ
বরিশাল অফিস : অতিরিক্ত গতি ও সড়কের সামঞ্জস্য না থাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে দিন দিন বাড়ছে দুর্ঘটনা। আর এতে করে সড়কে ঝড়ছে অসংখ্য তাজা প্রাণ। চলতি বছর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে একাধিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ। আর এসব দুর্ঘটনার তদন্তে উঠে আসছে চালকের অদক্ষতা, বেপরোয়া গতি আর ফিটনেসবিহীন পরিবহন চলাচল। এদিকে ফিটনেসবিহীন কতগুলো বাস ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে চলাচল করছে তার সঠিক হিসাব নেই বরিশাল বিআরটিএ এর কাছে। হাইওয়ে থানা সূত্র জানায়, চলতি বছরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের শুধুমাত্র গৌরনদী উপজেলাতেই ঘটেছে ৩৫টি দুর্ঘটনা। আশুকাঠি থেকে ভুরঘাটা সড়কে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত ২৫ জুলাই মহাসড়কে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার আশোকাঠী এলাকায় দুই পরিবহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ইলিশ পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস উল্টে ডোবায় পড়ে কমপক্ষে ২০জন আহত হয়। একদিন পরেই ২৬ জুলাই মহাসড়কের মাহিলাড়া এলাকায় বাস-কাভার্ড ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়। এছাড়া গত ২ আগস্ট মহাসড়কের আশোকাঠী এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এনা পরিবহনের বাস উল্টে পুকুরে পড়ে। এ সময় বাসের চাপায় এক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত হয় কমপক্ষে ১২ জন । গত ৫ আগস্ট মহাসড়কের ইল্লা নামক স্থানে যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাক্টর দিয়ে তৈরি অবৈধ ট্রলির সংঘর্ষে বাসযাত্রী এক যুবক নিহত হয়। আহত হয় বাসের অন্তত ১৫ যাত্রী।
সবশেষ, গত ৬ আগস্ট রাত আটটার দিকে মহাসড়কের কসবা এলাকায় নসিমন-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়। এরমধ্যে দু’জনকে আশংকাজনক অবস্থায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একই দিন ভোররাতে আশোকাঠী এলাকায় মালবাহী একটি মিনি ট্রাক উল্টে খাদে পড়ে যায়। হাইওয়ে পুলিশের হিসেবে গত ৮ মাসে নিহতের সংখ্যা ১৭ জন। এছাড়া সর্বশেষ উজিরপুরে গত শনিবার সাকুরা পরিবহনের চাপায় একজন ইজিবাইক চালক নিহত হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২২ সালে বরিশাল জেলায় ১৬৮টি দুর্ঘটনায় ১৮৩ জন মারা গেছেন। ভোলায় ৪৮ দুর্ঘটনায় ৪৪ জন, ঝালকাঠিতে ২২ দুর্ঘটনায় ২৪ জন, পটুয়াখালীতে ৫২ দুর্ঘটনায় ৫৩ জন, পিরোজপুরে ৪৭ দুর্ঘটনায় ৫৪ জন এবং বরগুনায় ৪৫ দুর্ঘটনায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়।
সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি অধ্যাপিকা শাহ্ সাজেদা বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলেও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙা থেকে বরিশাল পর্যন্ত সড়কটি সরু। তাছাড়া এ সড়কে বর্তমানে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। কিন্তু চালকের অদক্ষতা, বেপরোয়া গতি আর ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ করা না গেলে দুর্ঘটনা কমবে না। তিনি বলেন, অধিকাংশ দুর্ঘটনার তদন্ত রিপোর্টে এসব বিষয় উঠে আসলেও কার্যকরি কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় দিন দিন দুর্ঘটনা আর প্রাণহানী ঘটছে। এক্ষেত্রে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বরিশাল অংশে দ্রুত ফোরলেন চালুর দাবি জানান তিনি।
হাইওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম বলেন, মাওয়া থেকে স্পিডওয়েতে ভাঙ্গা পর্যন্ত এসেই দুই লেনের সড়কের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে পারেন না বেশিরভাগ চালক। এর ওপর কিছু চালক অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। বরিশালে সর্বশেষ বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে ঝালকাঠির ছত্রকান্দায়। ১৭ জনের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। চলতি বছরের ২১ জুলাই এই দুর্ঘটনায় আহত হয় আরো ১৮ জন। এর আগে মাদারীপুরের শিবচরেও বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।