আ.লীগের সম্মেলন : কারা আসছে নতুন নেতৃত্বে
পোস্ট করেছেন: admin | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১, ২০১৬ , ৪:৩০ অপরাহ্ণ | বিভাগ: রাজনীতি
অনলাইন ডেস্ক: ২০তম জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে দলের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত নেতৃত্ব গঠনে তৎপর হয়ে উঠছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে আগামী দিনে তরুণ ও মেধাবীদের দলে জায়গা করে দেয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছে দলটির নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২০১৯ সালে অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলকে আরো গতিশীল ও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে ইতোমধ্যে বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
আর এসব বিষয়কে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে গঠনতন্ত্রেরও সংশোধন করাসহ কমিটির আকার বড় করার বিষয়টি নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ।
২০তম সম্মেলনকে ঘিরে দলীয় কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে পুরনো কমিটি পুনঃগঠন করা হবে- নাকি নতুন মুখ আসবে। নতুন মুখ হিসেবে কাদের রাখা হতে পারে তা নিয়েও চলছে গুঞ্জন। পুরনোদের জায়গাটা ‘পরিপক্ক’ না ‘অকালপক্ক’ তা নিয়ে কথা উঠছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেতৃত্ব সংযোজন করা হবে নাকি সাংগঠনিক পারফরমেন্সের উপর ভিত্তি করে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে ‘ভুল’ সংশোধন করা হবে।
এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান করে নিতে পদ-প্রত্যাশীদের মধ্য চলছে দৌড়ঝাঁপ। ভ্রাতৃপ্রতিম ও সংগঠনের সাবেক নেতারা মূল দলে জায়গা করে নিতে প্রভাবশালী নেতাদের পাশাপাশি দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। এ লক্ষ্যে ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে নিয়মিত যাতায়াত করছেন। আবার কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ পদোন্নতির জন্য নিজেদেরকে শাণিত করছেন। তারাও আগের চেয়ে দলীয় কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এবারের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে একঝাঁক নতুন নেতৃত্ব আসবে এবং প্রবীণরাও থাকবেন। প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসবে। শুধু প্রবীণ দিয়ে আওয়ামী লীগের মত একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল চলবে না। কাজেই নতুদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব তৈরি করতেই এবারের সম্মেলনে তাদের (নতুনদের) একটা চমক থাকছে।’
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলের সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করা হবে। এর জন্য দলের গঠনতন্ত্রের বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধন করা হবে। দলের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাককে সভাপতি করে গঠনতন্ত্র উপ-পরিষদ গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটি সম্প্রসারণ, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ, দলীয় মুখপাত্র, তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদকের পদ যুক্তসহ বেশ কিছু পরিবর্তনের চিন্তা মাথায় রেখে কাজ করছে কমিটি।
ড. আব্দুর রাজ্জাক জানান, বিশ্বের প্রাচীন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল কংগ্রেস, বিজেপি, লেবার পার্টি, কনজারভ্যাটিভ পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেসসহ কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মত দেশগুলোর দলীয় গঠনতন্ত্র আমরা সংগ্রহ করেছি। এগুলো দেখে আমাদের গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য মতামত উপস্থাপন করব। গঠনতন্ত্রে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সংখ্যায় বাড়তে পারে। এছাড়া দেশে নতুন বিভাগ হওয়ায় বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বাড়ানো হতে পারে। দলকে আরো শক্তিশালী ও সুদৃঢ় করতে আগামী ১৫ জুনের মধ্যে গঠনতন্ত্র উপ-পরিষদ রিপোর্ট জমা দিবে। তারপর দলের কার্য-নির্বাহী ও নীতিনির্ধারক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গঠনতন্ত্রে কী পরিবর্তন আসবে তা জানা যাবে।
সম্মেলন সফল করতে গঠিত ১১টি উপ-কমিটির সব কটিই ইতোমধ্যে পৃথক বৈঠক করেছে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে সাংগঠনিক জেলাগুলোর সম্মেলন শেষ করা হয়েছে। সম্মেলন উপকমিটির সিংহভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এবারের সম্মেলনে বিদেশি বন্ধু ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। সম্মেলনে আগত অথিতিগণ তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পারবেন।
অভ্যর্থনা উপ-কমিটির সদস্য সচিব ডা. দীপু মণি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী ছাড়া দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। সম্মেলনে যোগদানের জন্য ১৫ থেকে ২০টি বিদেশি রাষ্ট্রকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’
সম্মেলনের প্রস্তুতির ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হানিফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন উপ-কমিটির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে কাজের প্রাথমিক ধারণা নেয়া হয়েছে। আর যে কাজগুলো অসম্পূর্ণ আছে সেগুলো খুব দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রত্যেকটি উপ-কমিটি তাদের দায়িত্ব প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সম্পন্ন করে ফেলেছে। সম্মেলন উপলক্ষে যে সকল প্রস্তুতি দরকার তার চেয়েও আমাদের উপ-কমিটিগুলো অনেক বেশি কাজ করেছে। যাতে আমরা নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন যথাযথভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে করতে পারি।’
সম্মেলনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সম্মেলন তো বিরাট ব্যাপার। আওয়ামী লীগের সম্মেলন মানেই বাংলাদেশের অস্তিত্ব। আওয়ামী লীগের সম্মেলন মানেই ইতিহাস। অতীতে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা বাস্তবায়নও হয়েছে। আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সিদ্ধান্ত থেকেই স্বাধীনতা আন্দোলনের সিদ্ধান্ত, রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্মেলন হবে। সেখান থেকে নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সমাজ বিষয়ে জনমুখি সিদ্ধান্তও নেয়া হতে পারে।’
তবে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বে কারা আসছেন, ক’জনের সমন্বয়ে কমিটি হবে, সেটি এখন জানার কোনো সুযোগ নেই। কাউন্সিলেই নেতা নির্বাচিত হবে। তাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কে আসছে সেটি জানতে কাউন্সিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান সৈয়দ আশরাফ।