কন্যা সন্তান জন্ম: স্বামীরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া সেই গৃহবধূর মামলা
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মার্চ ২২, ২০২১ , ১২:০৩ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ
গাইবান্ধা প্রতিনিধি : কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ায় স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের গৃহবধূ রোকসানা খাতুন অবশেষে আদালতে মামলা দায়েরের জন্য আবেদন করেছেন। রবিবার (২১ মার্চ) দুপুরে গাইবান্ধা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক আবদুর রহমানের আদালতে ১৩ দিনের শিশুকে কোলে নিয়ে গৃহবধূ রোকসানা হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে মামলা দায়েরের জন্য আবেদন করেন। গৃহবধূ রোকসানা খাতুনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাছিবুল হাসান হ্যাপী জানান, বিচারক আবেদনটি শুনানি শেষে আমলে নিয়ে সাদুল্লাপুর থানা পুলিশকে তদন্ত শেষে তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ২১ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এই মামলায় স্বামী, শ্বশুর, শ্বাশুরিসহ ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার আবেদনে রোকসানা অভিযোগ করেন, গত ৮ মার্চ রংপুরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে তিনি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। ৪ দিন পর স্বামীর বাড়ি সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রতাপ (ঘোড়ামারা) গ্রামে স্বামী রাজা মিয়ার বাড়িতে যান। কিন্তু তার শ্বশুর-শ্বাশুরীসহ পরিবারের অন্যরা তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। তখন থেকে তিনি বাবার বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সর্বানন্দ ইউনিয়নের ধনিয়ারকুড়া গ্রামে অবস্থান করছেন। আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ২০২০ সালের ১০ জুন প্রতাপ (ঘোড়ামারা) গ্রামের মাহাবুবুর আলীর ছেলে রাজা মিয়া’র সাথে তার বিয়ে হয়। এর কিছুদিন পর রোকসানা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এর মাস চারেক পর গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ পরিচয় জানতে তার স্বামী আল্ট্রাসনোগ্রাম করায়। আল্ট্রাসনোগ্রামে গর্ভের সন্তান মেয়ে জানার পর থেকেই রোকসানার সাথে তার স্বামী রাজা মিয়া ও পরিবারের লোকজন দূরত্ব তৈরি করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে স্ত্রী রোকসানাকে বাবার বাড়িতে রেখে স্বামী রাজা মিয়া ঢাকায় চলে যায়। এরপর তার উপর শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ও পরিবারের লোকজনের অন্যায় অত্যাচার বাড়তে থাকে। এক সময় তারা বাড়িতে পানি তোলার জন্য সচল বৈদ্যুতিক পাম্পও বন্ধ করে দেয়। রোকসানাকে টিউবওয়েল চেপেই খাবার ও সাংসারিক কাজের পানি নিতে বাধ্য করে। তার (রোকসানার) ধারণা ছিল সন্তান জন্মের পর হয়তো স্বামীর মন গলবে। কিন্তু না, ঘটল উল্টো ঘটনা। গত ৮ মার্চ প্রসব বেদনা উঠলে স্বামী-শ্বশুর-শ্বাশুড়ি পাশে দাঁড়ায়নি। ফুফা শ্বাশুড়ি কোহিনুর বেগম আর মাকে নিয়ে রোকসানা রংপুরে যান। সেখানে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে সিজার (অপারেশনে) করে তিনি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। কিন্তু তার মোবাইল নম্বর ব্লকলিস্টে রাখায় স্বামী-শ্বাশুড়ি কারও সাথেই যোগাযোগ করতে পারেননি রোকসানা। এক পর্যায়ে ফুফা শ্বাশুড়ি কোহিনুর বেগমও ক্লিনিক থেকে চলে যান। পরে তার মা ধার দেনা করে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করে মেয়ে আর নাতনীকে নিয়ে বৃহস্পতিবার (গত ১১ মার্চ) দুপুরে তার স্বামীর বাড়ি ফিরে আসেন। তখন রোকসানার মাহাবুবুর আলী দূর দূর করে তাকে তাড়িয়ে দিয়ে জানান তার ছেলে রাজা তিন মাস আগেই তাকে তালাক দিয়েছে। এরপর শ্বশুর-শ্বাশুড়িসহ সবাই বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে সটকে পড়েন। পরে বাধ্য হয়ে ৯৯৯-এ কল দিলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাদুল্লাপুর থানা থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু সেখানে কাউকে না পেয়ে রোকসানাকে বাবার বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন পুলিশ।
গৃহবধূ রোকসানা খাতুন বলেন, ‘আমার মতো কেউ যেন কন্যাসন্তান জন্ম দিয়ে এভাবে স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত না হয়। তিনি বলেন, আমি এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
রোকসানার মামা আবদুল লতিফ বলেন, ‘যৌতুকের জন্য আমার ভাগনিকে ভাগ্নিকে অমানবিক নির্যাতন করা হতো। চারদিনের কন্যাশিশুসহ তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন রোকসানার স্বামী বলছেন, তারা নাকি আমার রোকসানাকে তালাক দিয়েছেন। কন্যাশিশু জন্ম দেওয়ার কারণেই তারা রোকসানাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই।’ রোকসানার স্বামী রাজা মিয়া দাবি করেন, বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন তার স্ত্রী রোকসানা পেটে বাচ্চা নিয়ে তাকে বিয়ে করেন। তাই বিয়ের একমাস পরই তিনি স্ত্রী রোকসানাকে তালাক দেন। কিন্তু সন্তান সম্ভবা থাকা অবস্থায় তালাক দেয়া যায় না, সেজন্য তিনি তালাকের বিষয়টি গোপন রাখেন।