আজকের দিন তারিখ ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
/////হাইলাইটস///// করোনা ধাক্কা সামলে উঠলেও ডেঙ্গুতে নাকাল মানুষ

করোনা ধাক্কা সামলে উঠলেও ডেঙ্গুতে নাকাল মানুষ


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: ডিসেম্বর ৩০, ২০২২ , ২:৫৬ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////


দিনের শেষে প্রতিবেদক : সারা দেশে করোনার সংক্রমণ কিছুটা থাকলেও মৃত্যু একেবারেই শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। সরকারের ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় বিশ্বের অনেক দেশের আগেই করোনা ধাক্কা সামলে উঠেছে বাংলাদেশ। তবে, এরই মধ্যে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে এডিস মশাবাহিত ভাইরাস ডেঙ্গু। করোনা ঝক্কি সামলে এখন ডেঙ্গুতে নাকাল সাধারণ মানুষ। চলতি বছরের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ২৯ হাজার ৪৩৯ জন। এই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৪৬ এবং সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৮৭ হাজার ৪৪৭ জন। আর মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক কোটি ৫১ লাখ ৬২ হাজার ৩৪৪ জনের। অপরদিকে, উল্লেখিত সময়ে ডেঙ্গু —আক্রান্ত হয়ে দেশে মারা গেছেন ২৮১ জন। এর আগে, ২০১৯ সালে ভাইরাসটিতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন এবং সে বছর মারা যায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭৯ জন। করোনা টিকার প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ নেওয়া, মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত পরিষ্কার পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ —নানাবিধ সচেতনতার কারণে দেশের মানুষ করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু থেকে বাঁচতে পেরেছে। অথচ সিজনাল রোগ হিসেবে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মাসের হিসেবে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নভেম্বরে দেশে ১১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে কোনও মাসে মশাবাহিত রোগটিতে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে, গত অক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩৫৯ জন। এর মধ্যে ঢাকার ৫৩টি সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২৪৯ জন।

দেশের অন্যান্য বিভাগে ভর্তি আছেন ১১০ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬২ হাজার ৩২১ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৩৯ হাজার ১৪৪ জন এবং ঢাকার বাইরের ২৩ হাজার ১১৩ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর এই সময়ে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৬১ হাজার ৬৮১ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৩৮ হাজার ৮৪৫ জন এবং ঢাকার বাইরের ২২ হাজার ৮৩৬ জন। এই বছর ডেঙ্গুতে প্রথম মৃত্যু হয় গত জুন মাসে। পুরো জুন মাসে এক জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর জুলাইয়ে ৯, আগস্টে ১১, সেপ্টেম্বরে ৩৪ এবং অক্টোবরে সর্বোচ্চ ৮৬, নভেম্বরে ১১৩ এবং ডিসেম্বরের ২৮ তারিখ পর্যন্ত মারা গেছেন ২৮১ জন। দিনের হিসেবে ডেঙ্গুতে এক দিনে সর্বোচ্চ মারা গেছেন ৮ জন (১৩ অক্টোবর)। গত অক্টোবর এবং নভেম্বর— পুরো দুই মাস ডেঙ্গুরোগীতে ভরে গিয়েছিল রাজধানীর হাসপাতালগুলো। বিশেষ করে মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং শিশু হাসপাতালে প্রতিদিনই আসতে থাকে আক্রান্তরা। নির্ধারিত সিট না পেয়ে ফ্লোরে থেকেও চিকিৎসা নিয়েছেন অনেকে।

এসব হাসপাতালে প্রতিদিন যত ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষ সুস্থ হয়েছেন, তার চেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। যার কারণে দিনশেষে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রতিদিনই চাপ বেড়েছে হাসপাতালগুলোতে। হাসপাতালের শয্যার চেয়ে বেশি রোগী আসার কারণে পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এক পর্যায়ে মহামারির মতো ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে অনুযায়ী ২৩ অক্টোবর থেকে ওই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য চারটি ইউনিট চালু করা হয়। একই সঙ্গে ১২ জন চিকিৎসককে তিন শিফটে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রাকৃতিক নিয়মে ডেঙ্গু সংক্রমণ সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ধীরে ধীরে কমে যাওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান বছরের চিত্র ছিল ভিন্ন। সেপ্টেম্বরে কমে তো না-ই, বরং সংক্রমণ বেড়েছে দিনকে-দিন। যার রেশ দেখা গেছে অক্টোবর-নভেম্বর মাসেও। কেবল নভেম্বর মাসেই ডেঙ্গুতে মারা গেছেন নভেম্বরে ১১৩ জন। কবে নাগাদ ডেঙ্গু সংক্রমণ কমতে পারে—এমন প্রশ্নের সঠিক কোনও জবাব দিতে পারেননি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা রাজধানীর দুটি সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং সিটি করপোরেশনের ভাষ্য মতে, সাধারণত সেপ্টেম্বরে কমার কথা থাকলেও সেটা বরং বেড়েছে। অক্টোবর ও নভেম্বরে আয়ত্তের বাইরে চলে গেছে। তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, অসময়ে বৃষ্টিপাত, পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি অব্যাহত না রাখা, নাগরিকদের যথেষ্ট সচেতনতার অভাব, সিটি করপোরেশন নিয়মিত ওষুধ না ছিটানোসহ বিবিধ কারণে নভেম্বরেও ডেঙ্গু—আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে এবছর সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন প্রায় শতভাগ রোগী। তবে মুগদা হাসপাতালে কোনও ডেঙ্গুরোগীর মৃত্যু হয়নি বলেও জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ডেঙ্গুরোগী ভর্তির হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতালটিতে মোট ভর্তি রোগীর মধ্যে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এই হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাদের হাসপাতালে ডেঙ্গু—আক্রান্ত ভর্তি রোগীদের মধ্যে ১৪টি শিশু মারা গেছে। সবমিলিয়ে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ১৯টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে চলতি বছর সর্বমোট ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছেন ১১ হাজার ৩০৭ জন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১০ হাজার ৪১ জন। আর এসব হাসপাতালে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৩৬ জন। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে উঠে এসেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৪টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুতে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে- ৭, ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ৩৪, ৩৮, ৩৯, ৪১, ৪২, ৪৮ এবং ৫১ নং ওয়ার্ড। অপরদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৩টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুতে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেগুলো হচ্ছে- ১, ১১, ১৪, ১৬, ১৯, ২০, ২১, ২৪, ২৮, ৩৩, ৩৪, ৩৫ এবং ৩৯ নং ওয়ার্ড। ডিএনসিসির উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্নেল ডা. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার দাবি করেছেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানোর জন্য তারা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। এর মধ্যে ছিল—নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ওষুধ ছিটানো এবং নগরবাসীকে সচেতন করার জন্য বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা। এ ছাড়াও মোবাইল কোর্টের অভিযান এবং জরিমানা করা হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।