করোনাকালে শারদীয় উৎসব : শুভ চেতনা সঞ্চারিত হোক সবার মনে
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: অক্টোবর ২৪, ২০২০ , ২:১৬ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়েছে। আজ এমন এক সময়ে মা দুর্গা পৃথিবীতে এলেন, যখন চারদিক করোনার বিষাক্ত মহামারিতে আক্রান্ত। এবার তাই বিগত দিনগুলোর মতো নেই তেমন কোনো আনন্দ, নেই সেরকম উৎসবমুখর কোনো পরিবেশ। মন্দিরে মন্দিরে ঠিকই ঢাক বাজছে, কাঁসর বাজছে; পুরোহিত পূজা করছেন, ভক্তরা মনভরে দেবীর আরাধনা করছেন, ভক্তিভরে অঞ্জলি দিচ্ছেন। কিন্তু সবার মধ্যেই একটা ভয়- করোনায় আক্রান্তের ভয়। চলছে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা, মুখে মাস্ক পরে বের হওয়ার চেষ্টা। সামাজিক দূরত্ব কতটুকু মানা যায় সেটা এখন দেখার বিষয়। দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে। সারাদেশে এবার ৩০ হাজার ২১৩টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। আর ঢাকা মহানগরে এবার পূজামণ্ডপের সংখ্যা ২৩২, গত বছর যা ছিল ২৩৮। পূজা শেষ হবে ২৬ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে। এর মধ্যে সপ্তমীর দিনে করোনা থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি এখন সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। অশুভ অসুর শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শুভ দেবশক্তির চূড়ান্ত বিজয়ের দিন হিসেবেই দুর্গাপূজার দশমীর দিনটিকে বলা হয় ‘বিজয়া দশমী’। অসুরকুলের দম্ভ-দৌরাত্ম্য থেকে দেবকুলকে রক্ষায় মাতৃরূপী ও শক্তিরূপী দেবী দুর্গার আগমন। অসুরদের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা দেবকুলকে রক্ষা করেন। অন্যায় ও অশুভকে পরাস্ত করার মাধ্যমে ন্যায় ও শুভবোধের প্রতিষ্ঠা ঘটে। দেবী দুর্গা সত্য, শুভ ও ন্যায়ের পক্ষের সংগ্রামে মর্ত্যরে মানুষকেও সাহসী করে তোলেন। দূর করে দেন যত গ্লানি, হিংসা-দ্বেষ, মনের দৈন্য ও কলুষ। যাবতীয় মহৎ গুণাবলির প্রতি দেবী দুর্গা মানুষকে আকৃষ্ট করেন। বর্তমানে এ দেশে দুর্গোৎসব কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের আচার-অনুষ্ঠান ও আনন্দ-উৎসব উদযাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। দেশের মিডিয়াগুলোও এটিকে সার্বজনীন উৎসব গণ্য করে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সাজায়। এটি অনুপম সম্প্রীতি চেতনারই বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু এই সম্প্রীতিও মাঝে মাঝেই অসুরের অবাঞ্ছিত কালো ছায়ায় ঢাকা পড়ে। দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর শুভবোধসম্পন্ন সব মানুষকেই লজ্জিত, আহত এবং শঙ্কিত করে। তারই প্রেক্ষাপটে সরকার পূজা উপলক্ষে নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করেছে। এর মাঝেও দেশের কয়েকটি স্থানে মন্দিরে হামলা-মণ্ডপ ভাঙচুরের বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এগুলো দুঃখজনক। সবাই মিলে এই উৎসব পালনের মধ্য দিয়েই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং পারস্পরিক সৌহার্দের বন্ধন আরো দৃঢ় করতে হবে। পাশাপাশি এবারের পূজাতে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখি। দেবী দুর্গা অবশ্যই নিধন করবে অসুররূপী এই শক্তিশালী করোনা ভাইরাসকে। সেই প্রত্যাশায় রইলাম।