আজকের দিন তারিখ ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য করোনায় চার ধাতুর দাপট

করোনায় চার ধাতুর দাপট


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ২, ২০২০ , ৯:৪৯ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


দিনের শেষে ডেস্ক :  করোনাকালে যখন আমদানি-রপ্তানি, উৎপাদন-সরবরাহ সবখাতেই স্থবিরতা, মন্দার মুখে বিনিয়োগ। তখন চড়চড় করে বাড়ছে সোনা-রূপাসহ বিভিন্ন ধাতুর দাম। বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে এই মহামারির মধ্যেও নিজেদের দিকে খুব বড় আকারে বিনিয়োগকারীদের টানছে এসব ধাতু। এতেই বাজারে চাহিদার বিপরীতে দাম বৃদ্ধির রেকর্ড করছে সোনা-রূপা, প্লাটিনাম-প্যালাডিয়াম।
সোনা: 
আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, করোনাকালে ২০ মার্চ প্রতি আউন্স সোনা বিক্রি হয়েছে ১৪৮৪ ডলারে। চলতি বছরে সোনার এই দামই ছিল সর্বনিম্ন। এর থেকেই বড় উত্থান আর ছোট পতনের মধ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করে মন্দাকালে বাজার দখলে নিতে শুরু করে ধাতুটি। এর ঠিক এক মাস পরে ২০ এপ্রিল প্রতি আউন্স সোনার দাম দাঁড়ায় ১৬৯১.৪৫ ডলারে। অর্থাৎ একমাসের ব্যবধানে আউন্স প্রতি দাম বাড়ে ২০৭.৪৫ ডলার। আর ২০ মে-তে ১৭৪৬.৩১ ডলারে উঠে সোনা।

এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ওঠানামার মধ্য দিয়ে হাত বদল হতে থাকা সোনা ২২ জুনে বিক্রি হয় ১৭৫৫.৬১ ডলারে। মোটামুটি উর্ধমুখী প্রবণতায় ২০ জুলাই এসে বিক্রি হয় ১৮১৭.৩০ ডলারে। আর লাগাতার বাড়তে থাকা প্রতি আউন্স সোনা ৩১ জুলাই ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম ১৯৭৪ ডলারে হাত বদল হয়। করোনা মহামারির মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন মাসে আভিজাত্যের প্রতীক এই ধাতুর দাম বেড়েছে ৪৯০ ডলার।

রূপা: 
সোনার পাশাপাশি রূপাও দাম বেড়েছে করোনাকালে। সাড়ে তিন মাসে এই ধাতুর দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুনের বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরে রূপার সবচেয়ে কম দাম ছিল ১৮ মার্চ। এদিন প্রতি আউন্স কেনাবেচা হয় ১১.৭৪ ডলারে। একমাস পর ২০ এপ্রিল দাম উঠে ১৫.২৬ ডলারে। ২০ মে-তে রূপা দাঁড়ায় ১৭.৫০ ডলারে। দাম বেড়ে ২২ জুন ১৭.৫৬ ডলারে বিক্রি হয় এই ধাতুটি। ২২ জুলাই ২২.৯৮ ডলার আর ২৭ জুলাই প্রতি আউন্স রূপা বিনিয়োগকারীদের হাতে যায় ২৪.৭৩ ডলারে। গেল পাঁচ বছরের মধ্যেই এটিই আলঙ্কারিক ধাতু রূপার সর্বোচ্চ দাম।

প্লাটিনাম: 
সাদা রংয়ের মূল্যবান ধাতু। এটি দুষ্প্রাপ্য ধাতু বটেও। দীর্ঘ দিনের ব্যবহারেও প্লাটিনামের ক্ষয় প্রায় হয় না বললেই চলে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এর কদর রয়েছে অনেকটা। তবে, এর ব্যবহারে কারিগড়দের অনেক দক্ষ হতে হয়। গত ২০ মার্চ বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স প্লাটিনাম বিক্রি হয় ৫৮৯.১১ ডলারে। চলতি বছরের মধ্যে এটি প্লাটিনামের সবচেয়ে কম দাম। দাম বেড়ে একমাস পর ২০ এপ্রিলে ধাতুটির দাম ৭৬৭.৫ ডলার। দামের উর্ধমুখী প্রবণতা ধরে রেখে ২০ মে-তে প্রতি আউন্স এই ধাতুর দাম উঠে ৮২৩.৮১ ডলার।

২২ জুনে ৮২৯.২৭ ডলার আর ২২ জুলাই প্রতি আউন্সের দাম পড়ে ৮৫৪.৩৮ ডলার। চলতি বছরের সর্বোচ্চ দাম উঠে ২৭ জুলাই। সেদিন প্রতি আউন্স এই ধাতুটি বিক্রি ৯৬২.৮৫ ডলারে। উর্ধ্বমুখী প্রবণতায় বাজার ধরে রাখার ঈঙ্গিত দিয়েছে ধাতুটি। অর্থাৎ গেল সাড়ে তিন মাসে এর দাম বেড়েছে ৩৭৩.৭৪ ডলার।

প্যালাডিয়াম: 
গাড়ির একটা গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ ‘ক্যাটালিটিক কনভার্টার’ তৈরিতে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হয়। প্যালেডিয়ামের ৮০ শতাংশের বেশি এই যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়। যা কার্বন মনোঅক্সাইড এবং নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডকে কম ক্ষতিকর নাইট্রোজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং জলীয় বাষ্পে রূপান্তরিত করে। সম্প্রতি এই ধাতুর দাম বেড়ে যাওয়ায় গাড়ির ক্যাটালিটিক কনভার্টার চুরির ঘটনাই বেড়ে গেছে। এটিও দেখতে সাদা চকচকে ধাতু।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায় চলতি বছরের ১৬ মার্চ সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হয়েছে প্যালাডিয়াম। সেদিন প্রতি আউন্স এই ধাতুর ছিল ১৫৩৫.৬৭ ডলার। এক মাসের ব্যবধানে ৬৮৭.৬৭ ডলার বেড়ে ১৬ এপ্রিলে এসে ২২২২.৭৪ ডলার ছঁয়ে ফেলে দাম। এরপর আবার বাজার চাহিদা কমতে থাকে। নিম্নমুখী প্রবণতায় ২০ মে-তে দাম নেমে যায় ২০৯৫.৮২ ডলারে। পরের মাসে দাম কমতির দিকে থাকে। ২২ জুন ১৯৫০.২৫ ডলারে বেচাকেনা হয় প্রতি আউন্স প্যালাডিয়াম। এর পর থেকে আবার বাড়তে দাম। ২৭ জুলাই প্রতি আউন্স প্যালাডিয়াম হাত বদল হয় ২৩৩৩.১৮ ডলারে। এই ধাতুটিও বাজারে লাগাতার বিনিয়োগকারীদের টানছে। মাত্র সাড়ে তিন মাসের ব্যবধানে সাদা এই ধাতুর দাম বেড়েছে প্রায় ৮শ’ ডলার (৭৯৭.৫১)। তবে, করোনার প্রকোপ শুরুর দিকে গেল ফেব্রুয়ারিতে (৩ ফেব্রুয়ারি) এ যাবতকালের সর্বোচ্চ দাম ২৬১০.১১ ডলার উঠেছিল প্রতি আউন্স প্যালাডিয়ামের দাম।