কিশোর গ্যাং কালচার রুখতে হবে
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মার্চ ৩১, ২০২১ , ১২:১২ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
গ্যাং কালচার সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক ও জাতীয় উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে কিশোর-তরুণরা বিভিন্ন গ্যাংয়ের মাধ্যমে অপরাধ করছে। এমনকি খুনাখুনির মতো ঘটনাও ঘটছে। সর্বশেষ সূত্রাপুরে কিশোর গ্যাংয়ের বিরোধে অনন্ত (১৭) নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় সাজু আহমেদ (১৪) নামে আরো একজন আহত হয়েছে। সোমবার রাতে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের ফরাশগঞ্জঘাট এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের বিরোধে একাধিক খুনাখুনির ঘটনা ঘটেছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কিশোর সন্ত্রাস নতুন একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জানা যায়, ২০১০ সালে রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় সক্রিয় কিশোর সন্ত্রাসীদের একটি তালিকা তৈরি করেছিল পুলিশ, তাতে ৫১৬ জনের নাম ছিল। ঢাকার উত্তরা, ধানমন্ডি, তেজগাঁও, কাফরুল, মোহাম্মদপুর, তুরাগ, নিউমার্কেট ও গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকায় সক্রিয় ছিল গ্রুপগুলো। এরপর দীর্ঘ ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। এ সময় কেবল অপরাধের সংখ্যাই বৃদ্ধি পেয়েছে তা নয়, অপরাধের ধরনও পাল্টেছে। তারা দলবেঁধে মাদক সেবন করার পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় নারীদের উত্ত্যক্ত, কটূক্তি, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাইক ও কার রেসিং তাদের এক প্রকার ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের তথ্য মতে, গত ১০ বছরে রাজধানীর আলোচিত হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই কিশোর অপরাধীদের হাতে ঘটেছে। এটি খুবই ভয়ঙ্কর তথ্য। প্রশ্ন হচ্ছে, যে বয়সে নিজেকে গড়ে তোলা ও পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার কথা, সে বয়সে ছেলেমেয়েদের এমন অপরাধে জড়ানোর কারণ কী? বিশেষজ্ঞদের মতে, শিথিল পারিবারিক বন্ধন, মা-বাবার সন্তানকে সময় না দেয়া, সামাজিক অবক্ষয়, স্বল্প বয়সে স্মার্টফোনসহ উন্নত প্রযুক্তি উপকরণের নাগাল পাওয়া, সঙ্গদোষ ইত্যাদি কারণে কিশোরদের অপরাধে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এছাড়া কিশোরদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা দেয়া, যৌক্তিকতা বিচার না করেই সব আবদার পূরণ করা এবং সন্তান কী করছে সে বিষয় পর্যবেক্ষণ না করায় অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে বলে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন। কিশোররা যেন অপরাধে জড়াতে না পারে এবং কেউ তাদের অসৎ কাজে ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। এ জন্য সবার আগে পরিবার তথা মা-বাবাকে এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানরা কী করে, কার সঙ্গে সময় কাটায়Ñ এসব খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানদের অযৌক্তিক আবদার পূরণ করার আগে ভাবতে হবে। স্কুল কারিকুলামের বাইরে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আকৃষ্ট করা এবং যুক্ত করার সুযোগ বাড়াতে হবে। কিশোর অপরাধ রুখতে ছিন্নমূল শিশু-কিশোরদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। যারা ইতোমধ্যে অপরাধ চক্রে জড়িয়ে গেছে, তাদের জন্য উপযুক্ত কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।