আজকের দিন তারিখ ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
/////হাইলাইটস///// কে দেয় কারে দায়?

কে দেয় কারে দায়?


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১৮, ২০২০ , ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////


শ্যামল দত্ত, সম্পাদক :  এই ধরনের ঘটনা সম্ভবত বাংলাদেশেই সম্ভব। এবং একমাত্র বাংলাদেশেই। চুক্তি করেছে অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয় জানে না। আবার অধিদপ্তর বলছে, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে চুক্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বলতে কী বোঝানো হয়েছে -তা জানতে শোকজ করা হয়েছে অধিদপ্তরের ডিজিকে। ডিজি বলেছেন, প্রাক্তন স্বাস্থ্য সচিবের মৌখিক নির্দেশে এই চুক্তি করা হয়েছে। প্রাক্তন সচিব বলছেন, মৌখিক নির্দেশে কখনো এই ধরনের চুক্তি হতে পারে না। এরকম তুঘলকি কাণ্ড ঘটল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও তার অধীনস্থ বিভাগ স্বাস্থ্য দপ্তরের মধ্যে। একটি মন্ত্রণালয় ও তার একটি বিভাগের মধ্যে ক্লাইমেক্স- এন্টি ক্লাইমেক্সে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী। সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গণমাধ্যমকে বলেছেন, রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে কী চুক্তি হয়েছে, তা কিছুই জানতাম না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গিয়েছিলাম একটি সমন্বয় সভায়। করোনা চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি হবে শুনে খুশি হয়ে উপস্থিত থাকলাম। রিজেন্ট হাসপাতাল সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। এই হচ্ছে বাংলাদেশের সরকারি পর্যায়ে কাজের ধরন। করোনা চিকিৎসার জন্য একটি বেসরকারি ক্লিনিককে যুক্ত করে চুক্তি স্বাক্ষর হচ্ছে, সরকারি কোষাগার থেকে এজন্য প্রতিমাসে ওই প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিতে হবে, অথচ মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রী কিছু জানেন না। এটা একমাত্র বাংলাদেশেই সম্ভব। রিজেন্ট হাসপাতাল- যে হাসপাতালটির হাসপাতাল হিসেবেই অনুমোদন নেই, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি হিসেবে অনুমোদন ছিল ২০১৪ সাল পর্যন্ত, তার সঙ্গে চুক্তি করে ফেলল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জেকেজি অর্থাৎ জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা, যার একমাত্র অভিজ্ঞতা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের- তার সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চুক্তি করল করোনার নমুনা সংগ্রহের মতো অত্যন্ত জটিল একটি বিষয়ের। মহাখালীর তিতুমীর কলেজে জেকেজির স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করা হলেও নানা কেলেঙ্কারিতে তিতুমীর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলো, অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোনো তদন্ত করল না। সাধারণ মানুষ নানা অভিযোগ দায়ের করলেও নির্বিকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া কর্মকাণ্ড ধরা পড়ার পর পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি ক্লাইমেক্স সিচুয়েশন তৈরি হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে আবার এন্টি ক্লাইমেক্স তৈরি করলেন স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী। গত মঙ্গলবার আবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি নেই। এন্টি ক্লাইমেক্স আর কাকে বলে? এই ক্লাইমেক্সের নতুন মাত্রা যোগ করেছে রিজেন্ট হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযান, জেকেজির আরিফুল হক চৌধুরী ও ডা. সাবরিনার গ্রেপ্তার। এই ক্লাইমেক্স চূড়ান্তে উঠেছে, যখন বেশভূষা পাল্টিয়ে, চুলে কলপ দিয়ে, গোঁফ কামিয়ে, নানা চতুরতায় সাতদিন অবাধে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম থেকে নরসিংদী, কক্সবাজার, কুমিল্লা সাতক্ষীরা ঘুরে বোরকা পরা অবস্থায় সীমান্তের কাছাকাছি একটি নৌকার মধ্যে ধরা পড়লো রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. শাহেদ অথবা শাহেদ করিম।

এই ক্লাইমেক্স -এন্টি ক্লাইমেক্সের মধ্যে দিশাহারা দেশের সাধারণ মানুষ। তারা বুঝতেই পারছেন না, কে দেয় কারে দায়? সরকারের মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর একে অপরকে দায়ি করছে। প্রকৃত দায়িত্বটা তাহলে আসলে কার? ভুয়া করোনা সার্টিফিকেটের কারণে ইতালিতে বাংলাদেশি যাত্রী বহনকারী বিমান নামতে দিচ্ছে না। চীনে নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে যাওয়া অধিকাংশ যাত্রীর করোনা পজিটিভ পাওয়া গেল। বন্ধ হয়ে গেল বিমান যোগাযোগ। জাপান চার্টার্ড ফ্লাইট পর্যন্ত বন্ধ করে দিল। জাপানি কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিতে মেগা প্রজেক্টের অনেক কাজ বন্ধ। ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট পাওয়া যায়- এমন অভিযোগে বাংলাদেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে অধিকাংশ দেশ। বিশ্বখ্যাত পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস গতকাল রিপোর্ট করেছে, ভুয়া করোনার সার্টিফিকেট তৈরি বাংলাদেশে এখন এক লাভজনক ব্যবসা। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি লুটিয়ে নয়, শুইয়ে পড়েছে এই ঘটনায়। এর দায়িত্ব কে নেবে? প্রবাসী বাংলাদেশি কাজে ফিরতে পারবে না, এই দায়িত্বটা কার? এই ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট দেয়ার কারণে যিনি নেগেটিভ, তিনি হয়ে গেলেন পজেটিভ। তার যে মানসিক যন্ত্রণা, তার এই দায় কে নেবে? আর যাকে দেয়া হলো ভুয়া নেগেটিভ সার্টিফিকেট, তিনি যে রোগ ছড়ালেন, তার দায় কে নেবে? কেউ ভুয়া নেগেটিভ হওয়ার কারণে চিকিৎসা না নিয়ে যদি মৃত্যুবরণ করে, তার দায়ভার কার? এরকম হাজারো প্রশ্নের কোনো উত্তর মিলছে না কোথাও। তাই প্রশ্ন উঠছে কে দেয় কারে দায়? এরকম অসংখ্য প্রশ্ন গণমাধ্যম করেই যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় প্রশ্ন করাটাই তো গণমাধ্যমের কাজ। বাংলাদেশ তো চীন নয়। চীনের উহানে করোনা ভাইরাসের তথ্য গণমাধ্যমে জানিয়ে দেয়ায় ডা. লি ওয়েন ইয়ানের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ এনেছিল চীন সরকার। শেষ পর্যন্ত সেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জীবন দিলেন ডা. লি ওয়েন। তার জীবনের বিনিময়ে তার দেয়া তথ্যের সত্যতা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়ে গেলেন তিনি। চীনের পুলিশ তার বিরুদ্ধে তথ্য ফাঁসের অভিযোগ আনলেও প্রশ্নহীন, গৌরব আর অহংকার মেশানো জীবনের অবসান এই মৃত্যু। চীনের স্বাধীন গণমাধ্যম নেই। তাই এই নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকারও কারো নেই। কিন্তু রক্তে অর্জিত গণতন্ত্রের বাংলাদেশে প্রশ্ন তুলছে সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশের এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা নিয়ে মানুষের জবাব না পাওয়া হাজারো প্রশ্ন, মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে গণমাধ্যম করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। মানুষের মনের অব্যক্ত অনেক প্রশ্নের মধ্যে মৌলিক দুটি প্রশ্নকে সামনে আনতে চাই।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা নিয়ে মানুষের জবাব না পাওয়া হাজারো প্রশ্ন, মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে গণমাধ্যম করবে, এটাই তো স্বাভাবিক।

প্রশ্ন এক:
রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করার আগে এটি আদৌ হাসপাতাল কিনা এটা দেখার দায়িত্ব কারো ছিল না? করোনা চিকিৎসার জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না- এই যুক্তিতে করোনা চিকিৎসার মতো একটি বিশেষায়িত চিকিৎসার ব্যবস্থা কি যেকোনো কারো সঙ্গে করা যায়? চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে ভুয়া চিকিৎসার প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করা কোনো রোগীর আত্মীয় যদি অবহেলাজনিত কারণে হত্যা মামলা দায়ের করে, তাহলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কি এর দায় এড়াতে পারবে? স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রিজেন্ট ও জেকেজির প্রতারণার শিকার হয়েছে- এই ব্যাখ্যা দিয়ে কি দায় এড়ানো সম্ভব? প্রতারণার সহযোগী হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায় এড়ানোর সুযোগ কোথায়? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের আগে নানা অভিযোগ পাওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে ব্যবস্থা নিল না, তার দায় কার? নিপসম যখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে একমাস আগে জানালো যে রিজেন্ট হাসপাতাল পরীক্ষা না করে ভুয়া সার্টিফিকেট দিচ্ছে, তারপরও রিজেন্টের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার দায় স্বাস্থ্য বিভাগ কীভাবে এড়াবে। র‌্যাবের অভিযানের আগে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তো কোনো হুঁশ ছিল না। রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করার পর তাদের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত হাস্যকর মনে হচ্ছে অনেকের কাছে। মানুষের জীবন নিয়ে এমন অবহেলা ও কর্মকাণ্ড চরম দায়িত্বহীনতার দায় কার?

প্রশ্ন দুই:
ওভাল গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ‘জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা’ যাকে সংক্ষেপে জেকেজি নামেই চেনে সবাই। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কীভাবে চুক্তিতে গেল? চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা শামীম হোসাইন গণমাধ্যম দাপিয়ে বেড়িয়েছেন গত তিন মাস। তার ল্যাপটপে পাওয়া গেল করোনার ১৫ হাজার ৬শ ২৪টি ভুয়া সার্টিফিকেট। প্রতারণার অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানলো তিনি একজন সরকারি চিকিৎসক? রাজধানীর হৃদরোগ হাসপাতালের একজন সার্জন সরকারি চাকরিতে থেকে আবার বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে -এই দায় কার? তেজগাঁও থানা পুলিশ নানা অভিযোগে স্বামী আরিফুল হক চৌধুরী ও পরে ডা. সাবরিনাকে গ্রেপ্তার করল। ডা. সাবরিনাকে নিয়ে ডাক্তারদের সংগঠনের বিভিন্ন নেতার নানা কাহিনী ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক গণমাধ্যমে। আরিফুল হক চৌধুরীর চতুর্থ স্ত্রী ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী তার দ্বিতীয় স্বামীকে নিয়ে করোনা পরীক্ষার নামে যে কেলেঙ্কারি তৈরি করল, তার দায় কার? গ্রেপ্তারের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ডা. সাবরিনাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিল। তার আগে কি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানত না যে তাদের একজন ডাক্তার বেসরকারি একটি সংস্থার চেয়ারম্যান হয়ে করোনা চিকিৎসার নামে অসৎ প্রক্রিয়ায় লিপ্ত আছে? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি কোনো তদন্ত করার ব্যবস্থা নিয়েছে? স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বিনা পয়সায় করোনার নমুনা সংগ্রহের দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠান বুকিং বিডি ও হেলথ কেয়ার নামে দুটি সাইট বানিয়ে প্রতারণা করে কোটি টাকা কামিয়ে নিল, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের গ্রেপ্তারের আগে তাদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো পদক্ষেপ তো মানুষ দেখল না। এভাবে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে হাজারো মানুষের প্রতারণার দায় কার? হৃদরোগ হাসপাতাল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের?

শেষ প্রশ্ন:
লেখাটির শিরোনাম দিয়েছি প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়ে। ‘কে দেয় কারে দায়?’ শেষও করতে চাই প্রশ্ন উত্থাপন করে। করোনার এই দুর্যোগে অসহায় মানুষের মনে নানা প্রশ্ন। কী করে রাজনীতির উজ্জ্বল পথটি এমন পঙ্কিল হয়ে গেল? কোন প্রক্রিয়ায় রাজনীতিতে বিষবৃক্ষ হিসেবে জন্ম হয় মো. সাহেদদের। আওয়ামী লীগের মতো বর্ণাঢ্য, ঐতিহ্যবাহী একটি দলের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া কী করে জন্ম দিচ্ছে এ ধরনের প্রতারকদের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক চেষ্টা সত্ত্বেও তার সহযোগীরা কি সঠিক কাজটি করছেন? যাচাই-বাছাই বা অতীত রেকর্ড দেখার কোনো প্রক্রিয়া কি নেই দলে? যে কেউ দলে ঢুকে যেতে পারে উপকমিটির নামে? তাই মানুষ এই প্রশ্ন তুলতেই পারে- এই দায়িত্ব কার? প্রশ্ন উঠছে, কী কারণে দেশের তারকা হাসপাতালগুলোকে করোনা চিকিৎসায় বাধ্য করা গেল না। পৃথিবীর অনেক দেশে করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আর বাংলাদেশের উদাহরণ হচ্ছে, করোনা চিকিৎসায় সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল একতরফা চুক্তি বাতিল করে ১৫ দিনের মাথায় রোগীদের কাছ থেকে বিল নেওয়া শুরু করলো, অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর কোনো দায়িত্ব নিল না। গণমাধ্যমে হৈ-চৈ তোলার পর টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হল কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল। চুক্তিবদ্ধ ভুয়া রিজেন্ট হাসপাতাল বিল নিচ্ছে রোগীদের কাছ থেকে, আবার পাওনা দাবি করে বিল জমা দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কিছু করার নেই। টাকার বিনিময়ে করোনার ভুয়া রিপোর্ট দিচ্ছে জেকেজি। কিছুই করার নেই কারো। তাই অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যম প্রশ্ন তুলতে পারে, তুলেই যাচ্ছে।

নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন লকডাউন ভঙ্গ করার অভিযোগ ওঠার পর। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে একবার ট্রেন দুর্ঘটনার পর তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পদত্যাগের দাবি উঠেছিল জাতীয় সংসদে। জবাবে তিনি বলেছিলেন, আমি পদত্যাগ করলে যদি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটবে না -এমন নিশ্চয়তা দেয়া যায়, তাহলে আমি পদত্যাগ করতে রাজি আছি। পদত্যাগ করলে হয়তো ট্রেন দুর্ঘটনা বন্ধ হবে না কিন্তু নৈতিক দায়িত্ব বলে তো একটা কথা আছে। পৃথিবীর অনেক দেশে এর উদাহরণ আছে। কেউ এটা অনুভব করে, কেউ করে না। তফাৎ শুধু এটুকুই।

শেষ করব মহাভারতের একটা কাহিনী বলে। মহাপরাক্রমশালী পাণ্ডবদের অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া আটকে দিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হেরে গিয়েছিল মহেশমতি রাজ্যের রাজা শ্রী নীলধ্বজ। রাজা এই পরাজয় মেনে নিলেও রাজপুত্র প্রবীর এবং রানী জনা কিছুতেই এই পরাজয় মেনে নিতে পারেননি। রানি জনা মনে করতেন, পরাধীন থাকার চাইতে বেঁচে না থাকাই শ্রেয়। পরাধীন মানুষের কোনো সম্মান থাকে না। সম্মানহীন জীবন থাকা না থাকা একই। তাই রানী জনা গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে সম্মান বাঁচিয়েছিলেন। নিজের দেশের প্রতি ভালোবাসা আর দেশপ্রেমের প্রতীক হয়ে উঠেছিল রানী জনার এই আত্মহনন। আত্মসম্মান যে অনেক বড় বিষয়, সেটা হয়তো অনেকে উপলব্ধি করেন না। কেউ মন্ত্রিত্ব ধরে থাকবেন, না ব্যর্থতার নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করে আত্মসম্মান রক্ষা করবেন- সেটা তো প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব বিবেচনার বিষয়। সকল জায়গায় প্রশ্ন তোলা গেলেও, এখানে সম্ভবত কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা ঠিক হবে না।