কেপিসিএল ও অরিয়নের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধি এখনো নিশ্চিত নয়
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২১ , ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য
দিনের শেষে প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের দুই বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং খুলনা পাওয়ার লিমিটেডের (কেপিসিএল) চার বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। এ বিষয়ে এখনো বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছ থেকে কোম্পানি দুটিকে কোনো কিছু জানানো হয়নি। বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চিঠির জবাবে ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস ও কেপিসিএল-এর পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কেপিসিএল জানিয়েছে, সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইনের মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আইনটির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। ১১৫ মেগাওয়াটের কেপিসি ইউনিট-২ এবং নোয়াপাড়ার ৩০ মেগাওয়াটের কেপিসি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়টি পিপিএ নবায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। যদিও এখন পর্যন্ত বিপিডিবির কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এ অবস্থায় এ সংবাদের ভিত্তিতে কোম্পানির আর্থিক প্রভাব মূল্যায়নের বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক ও প্রযোজ্য নয়।
এদিকে ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়েছে, মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইনের মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের এখনো কিছু জানানো হয়নি। আইনটির মেয়াদ বাড়ানোর ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর সম্পর্ক নেই। সুতরাং এ সংবাদের ভিত্তিতে শেয়ার দর বাড়ার কোন যুক্তি নেই। একটি গোষ্ঠী শেয়ারবাজারকে প্রভাবিত করতে এ ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। এর আগে গত ০৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এক দশক আগে বিশেষ আইন দিয়ে দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে ‘কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট’ চালু করা হয়েছিল, সেই আইনের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হয়।
মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান)(সংশোধন) আইন, ২০২১’ এর নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তিনি বলেন, ‘জরুরি পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ঘাটতি মোকাবেলায় ২০১০ সালে বিশেষ আইনটি করার পর এর মধ্যেই কয়েকবার তার মেয়াদ বাড়ানো হয়। বর্তমান মেয়াদ ছিল ২০২১ পর্যন্ত।’ তিনি বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের এবং ২০৪০ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমাদের যে পরিকল্পনা আছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহে সেটা যাতে আমরা নির্বিঘ্নে সরবরাহ করতে পারি। এজন্য ২০২৬ সাল পর্যন্ত এটার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।’ দেশে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কিছুদিন আগেও উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ ছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, দেশে শিল্প-কারখানায় বিদ্যুতের চাহিদা আরও বাড়ছে। পদ্মা সেতু আগামী বছর শেষ হলে ওই পাড়ে যে পরিমাণ বিনিয়োগ শুরু হবে, তাতে ম্যাসিভ এনার্জির প্রয়োজন হবে। দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সহজলভ্য করতে আইনটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আইনটি সংশোধনের জন্য জাতীয় সংসদের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। সেই কারণে মন্ত্রীসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর অনুস্বাক্ষরের পর জাতীয় সংসদের অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু করবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ। সংসদের অনুমোদনের পর আইনটির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। এর আগে চলতি বছরের ২৯ মে কেপিসিএলের ৪০ মেগাওয়াট নোয়াপাড়া কেন্দ্র কেপিসিএল-তিন এবং এ বছরের ১ জুন থেকে কেপিসি ইউনিট-দুই ১১৫ মেগাওয়াট প্লান্টের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কেপিসিএলকে বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটির উৎপাদন মেয়াদ শেষ হওয়ার যথাসময়ে বন্ধ করে দেয়ার জন্য চিঠিও দেয় বিপিডিবি। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে গত বছরই কেপিসিএলের পক্ষ থেকে কেন্দ্র দুটির মেয়াদ আরো পাঁচ বছরের জন্য বাড়াতে বিপিডিবির কাছে আবেদন করা হয়। এরপর মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে সরকার ও বিপিডিবির সঙ্গে কোম্পানির আলোচনা চলমান থাকে।
এদিকে, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকেও তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। এক পর্যায়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম প্রধানমন্ত্রীরও নজরে আনেন। তারই ধারাবাহিকতায় সরকার ‘কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট’ আইনের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
মন্ত্রীপরিষদ সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রীসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুস্বাক্ষরের জন্য একটি সার-সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর পরবর্তীতে জাতীয় সংসদের অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগে প্রেরণ করা হবে। জাতীয় সংসদের অনুমোদনের পরই রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর নবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।