কোটা আন্দোলন: কবীর সুমনের করজোড়ে মিনতি
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১৮, ২০২৪ , ৪:৩১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: বিনোদন
দিনের শেষে প্রতিবেদক : সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার চেয়ে আন্দোলন করছেন দেশের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে সরব হলেন ভারতীয় সংগীতশিল্পী কবীর সুমন। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকালে ফেসবুক পোস্টে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন নন্দিত এই সংগীতশিল্পী। লেখার শুরুতে কবীর সুমন বলেন, “আমি ভারতের নাগরিক। বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী। তার বিষয়আসয়ে নাক গলানোর অধিকার আমার নেই। সেটা করতে চাইও না। তবু বাংলাদেশের অনেকের কাছ থেকে যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি, তা ভুলে থাকতেও পারছি না। ভুলবই বা কেন? ছবি দেখছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের; একটু আগেই দেখলাম। মিছিল করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। নেপথ্যে শোনা যাচ্ছে, কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহকপাট/ ভেঙে ফেল কর রে লোপাট’। মনে হচ্ছে, গানটি এডিট করে বসানো হয়েছে ভিডিওর সঙ্গে; ঠিক কাজই করা হয়েছে।”
মনে মনে নিজেকে বাংলাদেশের নাগরিক মনে করেন কবীর সুমন। তা উল্লেখ করে এই গায়ক বলেন, ‘কত সময়ে দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আমার গানের লাইন লিখে দিয়েছেন দেয়ালে। পশ্চিমবঙ্গে সে তুলনায় কিছুই দেখিনি। বলতে দ্বিধা নেই মনে মনে আমি বাংলাদেশেরও নাগরিক। আমার জীবনসায়াহ্ন কাটছে আমার মাভাষায় খেয়াল রচনা করে, গেয়ে, শিখিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের সরকার আমার বাংলা খেয়ালকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। যদিও তাঁদের পেটোয়া এক শিল্পী বাংলা খেয়াল নিয়ে এবং সেই সঙ্গে আমায় বিদ্রুপ করেছেন এবং এই রাজ্যের সরকারঘনিষ্ঠ একটি পত্রিকা সেই বিদ্রুপ ও মগজহীন উদ্ভট বক্তব্য ঘটা করে ছাপিয়েছেন- আমার একটি ব্যঙ্গচিত্র সমেত।’ বাংলাদেশের সঙ্গে ভালোবাসার বন্ধন কবীর সুমনের। এ কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমার জীবনের সেরা কাজ এবং আমার জীবনসায়াহ্নের প্রধান কাজ বাংলা খেয়াল বাংলাদেশে চর্চা করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের শিল্পী মরহুম আজাদ রহমান বেশ কিছু বাংলা খেয়াল রচনা করে গিয়েছেন বিভিন্ন রাগে। বাংলা ভাষা আর বাংলা খেয়ালের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে আমি বাঁধা- ভালোবাসার বন্ধনে। গতবার ঢাকায় গানের অনুষ্ঠান করতে গিয়ে যে সম্মান ও ভালোবাসা পেয়েছি তা ভারতে পেয়েছি কবার?’
করজোড়ে অনুরোধ করে কবীর সুমন বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় আমি চুপ করে বসে থাকতে পারি না। থেকেছি কয়েক দিন আর পারছি না। কিন্তু অবস্থাটা যে ঠিক কী, কী কী কারণে যে এমন হলো এবং হচ্ছে, কারা যে এতে জড়িত তাও তো ঠিকমতো জানি না। তাও পঁচাত্তর উত্তীর্ণ এই বাংলাভাষী করজোড়ে সব পক্ষকে মিনতি করছি; অনুগ্রহ করে হিংসা হানাহানি বন্ধ করুন। ঢাকা সরকারকে অনুরোধ করছি; বাংলা ভাষার কসম শান্তি রক্ষার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। আপনাদের ছাত্রবাহিনী যেন হিংসার আশ্রয় না নেন।’ আর কী বলি। আমি তো সশরীরে যেতে পারছি না ঢাকায়। পারলে যেতাম। রাস্তায় বসে পড়ে সকলকে শান্তিরক্ষার জন্য আহ্বান করতাম। হানাহানি বন্ধ হোক। বন্ধ হোক উল্টোপাল্টা কথা বলে দেওয়া। বাঁচুক বাংলাদেশ। বাঁচুন বাংলাদেশের সকলে। জয় বাংলাদেশ, জয় মুক্তিযুদ্ধ জয় অসংখ্য বাংলাদেশির শাহাদাত ও অপূরণীয় ক্ষতিস্বীকার। জয় বীরাঙ্গনারা। জয় বাংলা ভাষা!’ বলেন কবীর সুমন।
১৯৯২ সালে ‘তোমাকে চাই’ শিরোনামের একটি গানের অ্যালবাম প্রকাশ করে শ্রোতাপ্রিয়তার শীর্ষে চলে যান কবীর সুমন। জীবনমুখী বাংলা গানের প্রবর্তক হিসেবে তাকে দুই বাংলার শ্রোতারা সাদরে গ্রহণ করেন। একসময় স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। পরে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।