কৌশল পাল্টাচ্ছে সরকার
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ২২, ২০২০ , ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে ডেস্ক : প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের বিস্তৃতি থামাতে ‘লকডাউন’ পদ্ধতির কৌশল পাল্টাচ্ছে সরকার। এরফলে আপাতত দেশে লকডাউন কার্যকর হচ্ছে না। নতুন কৌশল প্রণয়ন করতে আরো দিনদশেক সময় লাগবে। তারপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রশাসনের কাছে এটি তুলে দেবে। প্রশাসন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এর বাস্তবায়ন করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এছাড়াও দেশে বর্তমানে কত লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন; এরমধ্যে কী পরিমাণ উপসর্গ নিয়ে আর কী পরিমাণ উপসর্গ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন, কোন এলাকায় আক্রান্তের হার বেশি, মৃত্যুহার যা আছে তাই থাকবে না ভবিষ্যতে আরো বাড়বে, বাড়লেও কোন কোন এলাকায় এর প্রভাব পড়বে বেশি- এসব জানতে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (আইইডিসিআর) দিয়ে একটি জরিপ করাচ্ছে সরকার। জরিপের ফলাফল পাওয়ার পরই সরকার পরিকল্পনা করে নতুন কৌশলে লকডাউন কার্যকরের পথে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট ওই সূত্র জানিয়েছে। তবে এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কদিন আগে ঢাকার রেড জোনে লকডাউন কার্যকর করার জন্য একটি তালিকা দিয়েছিল। কিন্তু আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সেই তালিকা স্থগিত করে দিয়ে বলা হয়, আগেরমতো বড় এলাকাজুড়ে আর লকডাউন হবে না। জীবন ও জীবিকাকে প্রাধান্য দিয়ে ছোট ছোট এলাকা ধরে লকডাউন করা হবে। লকডাউন কার্যকরের জন্য এই ছোট এলাকা চিহ্নিত করে দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার পরই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগের তালিকা প্রত্যাহার করে নেয়। লকডাউন কার্যকরের জন্য এখন নতুন তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে।
জানতে চাইলে মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবশ্যই লকডাউন হবে। তবে এই লকডাউন আগের মতো হবে না। কীভাবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন কৌশলে লকডাউন এলাকা থেকে কারা বাইরে বেরোতে পারবে আর কারা পারবে না, যে এলাকা লকডাউন হবে সেই এলাকায় যদি কোনো সরকারি কর্মজীবী, গণমাধ্যমকর্মী, ফায়ার ব্রিগেডের লোকজন বাস করেন তারা কীভাবে অফিস করবেন- সেসব পরিকল্পনা হচ্ছে। সবমিলিয়ে এটি একটি বড় প্রক্রিয়া। প্রক্রিয়ার কাজ শেষ হলেই লকডাউনের জন্য নতুন ঘোষণা দেয়া হবে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সরকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বলেছে, জীবন ও জীবিকা রক্ষা করে লকডাউনের কৌশল নির্ধারণ করে দিতে। সরকারের এমন বক্তব্য পাওয়ার পর ২/৩ দিন আগে থেকে নতুন প্রক্রিয়ায় লকডাউনের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। লকডাউনের নতুন কৌশল প্রণয়ন করতে আরো ৭/৮ দিন সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীসহ দেশজুড়ে যেসব এলাকায় রেড জোন চিহ্নিত হয়েছে সেখানে লকডাউন কার্যকরের কথা বলেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু সম্প্রতি এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বলে দেয়া হয়েছে, লকডাউনের জন্য বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে তালিকা প্রণয়ন করেছে সেটিতে পরিবর্তন আনতে হবে। পুরো এলাকা লকডাউন না করে ছোট ছোট এলাকা লকডাউন করতে হবে। আর সেই ছোট ছোট এলাকার তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকেই প্রণয়ন করতে হবে। ওই বৈঠকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে, জীবন থেমে থাকতে পারবে না। জীবনকে চালিয়েই করোনাকে মোকাবিলা করার জন্য যে কৌশল দরকার সেটি যেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করে দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে ইউরোপ-আমেরিকার মতো লকডাউন কখনোই কার্যকর করা সম্ভব নয়। চাইলেও পুরো দেশকে লকডাউন কিংবা অবরুদ্ধ করা সম্ভব নয়। কাজেই ওই লকডাউনের পথে না হেঁটে নতুন কৌশলে পথচলা হবে। এর ব্যাখা দিয়ে তিনি বলেন, নতুন কৌশলে লকডাউন হওয়া এলাকায় সবই চালু থাকবে, আবার সবকিছু নিয়ন্ত্রণও করা হবে। এই দুইয়ের সমন্বয়েই লকডাউন হবে।
এদিকে, গত ১০ জুন থেকে রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনে পূর্ব রাজাবাজার এলাকা এবং ঢাকার বাইরে তিন জেলার নির্বাচিত এলাকাগুলোয় জোনিং সিস্টেম চালু করার নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঢাকার বাইরে জেলা তিনটি হলো-সরকার গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং নরসিংদী। পরে গত ১৩ জুন শনিবার ঢাকা শহর ও এর আশপাশের এলাকা এবং চট্টগ্রামের ‘রেড জোন’ তালিকা সংশ্লিষ্ট মেয়রদের কাছে পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৭টি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৮টি এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১১টি এলাকাকে সবচেয়ে ঝুঁঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসন সংক্রমণের মাত্রা অনুযায়ী জোনিং সিস্টেম অর্থাৎ লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেবে।
অধিদপ্তরের নির্দেশনায় গতকাল রবিবার পর্যন্ত ঢাকার মধ্যে কেবল পূর্ব রাজাবাজারে লকডাউন শুরু করা গেছে। গতকাল রাজাবাজারে লকডাউনের ১৩ দিন পার হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে চার জেলার মাত্র পাঁচটি ওয়ার্ড ও একটি ইউনিয়ন, অর্থাৎ ছয়টি রেড জোন এলাকায় লকডাউন শুরু হয়েছে। অথচ ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশনের চিহ্নিত রেড জোনের সংখ্যা ৪৫টি এবং ঢাকার বাইরে ৭৩টি। এর মধ্যে চট্টগ্রামে চিহ্নিত ১১টি রেড জোন এলাকার মধ্যে মাত্র ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে গত মঙ্গলবার রাত থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। গাজীপুরের পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন মিলে মোট ১৯টি রেড জোনের মধ্যে গত ১২ জুন মধ্যরাত থেকে কালীগঞ্জ পৌরসভার ৪, ৫ এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডে লকডাউন শুরু হয়েছে। একইভাবে নরসিংদীর ছয় উপজেলার ১৪ রেড জোন এলাকার মধ্যে মাত্র মাধবদী পৌরসভার ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর বিরামপুর ও দক্ষিণ বিরামপুরকে আংশিক রেড জোন করে লকডাউন শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। করোনার হটস্পট নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশন পুরো ২৭টি ওয়ার্ড এবং আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ উপজেলার পুরোটা রেড জোন। এর মধ্যে গত ১৬ জুন থেকে মাত্র রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ ইউনিয়নে লকডাউন শুরু হয়েছে। এসব জেলার অন্য রেড জোনগুলোতে ঠিক কবে থেকে লকডাউন শুরু হবে সে ব্যাপারে সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। তাদের মতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এখন অবধি নতুন করে লকডাউনের কোনো নির্দেশনা তারা পাননি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, এগুলোর কার্যক্রম আপাতত আমরা স্থগিত রেখেছি। নতুন তালিকা হওয়ার পর সবকিছু দেখা হবে। তবুও ঢাকার বাইরে স্থানীয় প্রশাসনকে আমরা বলেছি, যেখানে লকডাউনের খুব বেশি প্রয়োজন অর্থাৎ আক্রান্ত বেশি হলে লকডাউন ঘোষণা করে দিতে।