আজকের দিন তারিখ ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
/////হাইলাইটস///// ক্রান্তিকালে আশা জাগানিয়া বাজেট ঘোষণা বিকেলে

ক্রান্তিকালে আশা জাগানিয়া বাজেট ঘোষণা বিকেলে


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১১, ২০২০ , ২:৫৭ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////


দিনের শেষে প্রতিবেদক :  বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) দুর্যোগের মধ্যেই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। বিকেল সাড়ে ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে এ বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিজের দ্বিতীয় এবং দেশের ৫০তম বাজেটের জন্য মুস্তফা কামাল বাজেটের আকার ধরছেন ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার। ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যত পথ পরিক্রমা’ শীর্ষক এ বাজেটের প্রবৃদ্ধির হার ধরছেন তিনি ৮ দশমিক ২ শতাংশ। আর বাজেট ঘাটতি হচ্ছে জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ। তবে আগামী অর্থবছরের আয় চলতি অর্থবছরের তুলনায় বেশি ধরছেন না।

চলতি অর্থবছরের আয় ৩ লাখ ৭৭ হাজার কোটি ৮১০ কোটি টাকা থেকে মাত্র ৩০০ কোটি টাকা বেশি ধরছেন। বছর ঘুরলে যেহেতু ব্যয় বাড়ে, ফলে সেই ব্যয়ের মেটাতে তিনি দেশি-বিদেশি ঋণের ওপর বেশি ভরসা করছেন। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা আগামী অর্থবছরে অর্থমন্ত্রী দ্বিগুণ করতে যাচ্ছেন। এদিকে, চলতি অর্থবছর ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়ায় কমেছে আমদানি-রফতানি। সেইসঙ্গে ব্যাংকখাতের অবস্থাও নাজুক। একমাত্র প্রবাসী আয় ছাড়া অর্থনীতির প্রতিটি সূচকই নিম্নগামী। আর করোনা ভাইরাসের প্রভাবে প্রবাসী আয়ের এই ইতিবাচক সূচকটিও কমতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলবেন, দেশের মানুষের অন্ন ও বস্ত্রের জোগানের জন্য অর্থনীতির চাকা সচল রাখাই হবে আগামী বাজেট প্রণয়নে তার অগ্রাধিকার। এ জন্য তিনি বিভ্রান্ত, ভীত বা আতঙ্কিত হবেন না।

বাজেটের আকার

নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এই ব্যয় তথা আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। টাকার অংকে যা ৬৬ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা বেশি। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে এর আকার দাঁড়ায় ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।

করোনা ভাইরাসের আঘাতে সারাবিশে^ও ন্যায় বাংলাদেধের অর্থনীতিও বিপর্যস্ত। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের জীবন-জীবীকা টিকিয়ে রাখতে বাজেটে দিকনির্দেশনা আশা করছেন অর্থনীতিবিদরা। যদিও আগামী বাজেটের আকার বা ব্যয় ও আয়ের লক্ষ্যমাত্রার দিকে নজর দিলে করোনার তেমন কোনো প্রভাবই পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বাজেটে এ ধরনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণকে বাস্তবায়ন অযোগ্য বলছেন অর্থনীতিবিদরা। বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের অন্যতম প্রধান সংস্থা এনবিআরও বলছে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

আয়ের উৎস

আসছে বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া করবহির্ভূত অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা। প্রতি বছরেই রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি থেকে যায়। আর এ বছর করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সেই ঘাটতি আরও বেড়ে যাবে। রাজস্ব আদায়ে এই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ঠেকানোই এখন এনবিআরের বড় চ্যালেঞ্জ। এরই মধ্যে আসছে নতুন বাজেট। একদিকে করোনার প্রভাবে আগামী অর্থবছরে নতুন করারোপের চেয়ে বেশি কর ছাড় দেওয়ার চাপ, অন্যদিকে বাড়াতে হবে আদায়। এই চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখেই আগামী ১১ জুন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। এদিকে, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) যে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে তা অর্জন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে তিনি বিষয়টি জানান। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, বিভিন্ন সূচক বিবেচনায় নিয়ে গবেষণা ও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে জানা যায় যে, চলতি অর্থবছরের শেষে সর্বমোট ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব অহরিত হতে পারে। অর্থনীতিবিদরাও বলেছেন, রাজস্ব আদায়ের এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

সরকারের মোট ব্যয়

এবারের বাজেটে সরকার মোট ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। চলতি বাজেটে যা ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে সেটি কমিয়ে করা হয় ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।

আগামী বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয়বাবদ খরচ ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেতন-ভাতাবাবদ ব্যয় রাখা হচ্ছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সরবরাহ ও সেবাবাবদ ব্যয়ে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ঋণের সুদ পরিশোধবাবদ রাখা হচ্ছে ৬৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। সরকারি প্রণোদনা, ভর্তুকি ও অনুদানবাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ থাকছে ২ লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।

বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৬ শতাংশ

আগামী অর্থবছরের বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। আয় ও ব্যয়ের এ বিশাল ফারাকে এবারই প্রথম দেশের ইতিহাসে মোট বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর আগের বছরগুলোতে সাধারণত জিডিপির ৫ শতাংশ হারে ঘাটতি ধরে বাজেট প্রণয়ন করা হতো। এ বিশাল ঘাটতি পূরণে সরকার কোন খাত থেকে কত টাকা ঋণ নেবে তারও একটি ছক তৈরি করেছে। ছক অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের ঘাটতি পূরণে সরকার বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করবে, অংকে যা ৮৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা আছে ৬৭ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা।

এ ছাড়া বৈদেশিক অনুদান ধরা হচ্ছে ৪ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা রয়েছে ৩ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎস অর্থাৎ ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতির বড় একটি অংশ পূরণ করতে চায় সরকার। ব্যাংক খাত থেকে ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৮৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা ছিল ৭২ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের জন্য সরকার সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য খাত থেকে ঋণ নিতে চায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে (সংশোধিত) যা ছিল ১৪ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্তাবথায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এবার করোনা সংকটের কারণে আয়ের তুলনায় ব্যয় একটু বেশি হবে। রাজস্ব আদায় এমনিতেই কম। সামনে আরো কমার আশংকা রয়েছে। সে তুলনায় ব্যয় অনেক বেশি বাড়বে। কারণ দরিদ্র এবং নিম্ন আয়ের মানুষদেও সহায়তার জন্য সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম আরো বাড়াতে হবে। অর্থাৎ সামাজিক সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে সরকারকে আগের তুলনায় বেশি ব্যয় করতে হবে। ফলে বাজেটে ঘাটতির পরিমাণও অনেক বেশি বেড়ে যাবে। আর এই ঘাটতি অর্থায়নের জন্য ব্যাংকঋণের উপর খুব বেশি নির্ভর করা ঠিক হবে না। কারণ এমনিতেই ব্যাংকঋণের উপর নির্ভও করে সরকার অনেক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। ঘাটতি অর্থায়নের জন্য সরকারকে বৈদেশিক সাহায্যের উপরও বেশি জোর দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

প্রবৃদ্ধির অবাস্তব হার

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ধরা হচ্ছে ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রাক্বলিত জিডিপির আকার ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা থেকে তা ২ লাখ ৮৫ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের জিডিপি অবশ্য আগের বারের চেয়ে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা বেশি ছিল। তবে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের সমান অর্থাৎ ৮ দশমিক ২ শতাংশই ধরা হচ্ছে আগামী অর্থবছরে। যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রবৃদ্ধিও মোহ কাটিয়ে বাস্তবতার নিরিখে বাজেট ঘোষণা করতে হবে।

এদিকে, দেশী-বিদেশী গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, প্রবৃদ্ধিও হার এবার অনেক কমে যাবে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির মতে, চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি আড়াই শতাংশের বেশি হবে না। আর বিশ্বাসের মতে, চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হবে এক দশমিক ছয় শতাংশ আর আগামী অর্থবছর হবে এক শতাংশ। এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনীতির তুলনায় বাজেটের আকার খুব বেশি বড় না। তবে অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় বলেই আমাদের দেশে বাজেট বাস্তবায়ন হয় না। বরাবরের মতো এবারও প্রবৃদ্ধিও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। কোভিড-১৯ এর কারণে সারাবিশে^র মতো বাংলাদেশেও অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হচ্ছে। এই বাস্তবতায় এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য, দারিদ্র বিমোচন এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধার- এই তিনটি বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে নতুন কোন উদ্যোগ নেই। গতানুগতিক কাঠামোর মধ্যেই রাজস্ব আদায়ের বড় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। যা কখনোই আদায় করা সম্ভব হবে না। ফলে বাজেট বাস্তবায়নে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজেট বক্তব্যটি অর্থমন্ত্রী শেষ করবেন এভাবে-সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্টির অকল্যাণে কিছুই করেন না, যা করেন কল্যাণেই করেন। তিনি তাঁর কল্যাণের সুশীতল ছায়ায় করোনাভাইরাস থেকে সবাইকে পরিত্রাণ দান করবেন। আর আরা ফিরে যাব আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়।