খরচ কমিয়েও যেন চলা দায়, অনেকেই পরিবার পাঠিয়ে দিচ্ছেন গ্রামে
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: অক্টোবর ২৩, ২০২২ , ৬:০৭ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে প্রতিবেদক : ‘চাল, ডাল থেকে শুরু কইরা সব জিনিসের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে ছয়জনের পরিবারের খাবারই জোগাইতে পারতাছি না। আলু ভর্তা, ডাইল, কম দামি সবজি খাইয়া না খাইয়া দিন কাটাচ্ছি। চা, বিড়ি খাওয়া কমাই দিছি। এত কিছুর পরও চলতে পারতাছি না। রাজধানীর নতুনবাজার বাসস্টেশনসংলগ্ন ফুটপাতে ভাসমান শ্রমিক হাটে গতকাল সকাল ৭টার দিকে কথাগুলো বলছিলেন আব্দুর নূর (৫০)। দিনমজুরি করে চলা আব্দুর নুর জানান, তাঁর বাড়ি সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায়। নদ্দা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, গ্রামে আমার চাষবাসের জমি নাই। ১০-১২ বছর ধইরা এই হাটে আসি। ইদানীং জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, এরপর থেইকা এই হাটে লোকজন বাইড়া গেছে। আগের মতো কাজ পাই না। তাই পরিবার নিয়া চলতে পারতাছি না। ছেলে দুইটা ছোট, দুই মেয়ের জন্যও কোনো কাজ পাইতাছি না। তাই ছেলে-মেয়ে-বউরে গ্রামের বাড়ি পাঠায় দিতে হইবো। আমার লগে এই হাটে আসা দুই-একজন এরই মধ্যে পরিবার গ্রামে পাঠায় দিছে। আব্দুর নূরের সঙ্গে আলাপকালে অনন্ত ২০ জন শ্রমিক এসে এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান কাজের লোক লাগবে কি না। এদের একজন ভাটারা নয়ানগর থেকে আসা টাঙ্গাইলের কালিহাতীর মিজানুর রহমান বলেন, এই হাটে শ্রমিকের চাহিদা প্রায় ৫০০। আগে এখানে ৭০০ থেকে হাজারখানেক লোক আসত।
ইদানীং প্রায় দুই হাজার লোক আসে। তাই বেশির ভাগই কাজ পায় না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে কম মজুরিতেও কাজে চলে যায়। সকাল ৭টায় দেখা গেল, হাটে হাজারের বেশি নারী-পুরুষ। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রম বিক্রি করতে এসেছেন। পাশ দিয়ে প্যান্ট-শার্ট পরা কোনো লোক যেতে দেখলে বা মোটরসাইকেল থামলেই তাঁরা হুমড়ি খেয়ে জানতে চান, কাজের লোক লাগবে কি না। এই হাটের শ্রমিকরা ইট, বালু, সিমেন্ট ওঠানো-নামানো, ভবন ঢালাই, মাটি কাটা, ইট পরিষ্কার ও ভাঙানো, টাইলস পরিষ্কার, রাজমিস্ত্রির সহযোগী, বাসা-বাড়ি ধোয়ামোছা, রান্নাবান্না, টাইলস পুডিংসহ অনেক কাজই করতে পারেন। গত চার দিন টানা হাটে এসে কাজ পাননি জাকেরুল (২৫) নামের এক শ্রমিক। তিনি বলেন, আগে রোজ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় কামে যাইতাম, এখন ৫০০ হইলেও চইলা যাই। তার পরও পাই না। এখন আগের চাইতে লোক বেশি হইয়্যা যায়। গেরাম থেকে আইয়্যা রিকশা না পাইলে এইখানে আইয়্যা পড়ে। এ ছাড়া বড়লোকরা দালানকোটা করা কমাই দিছে মনে হয়।
ইয়াছমিন নামের এক শ্রমিক বলেন, আগে বুয়ার কাজ করতাম ছাত্রদের মেস আর বাসায়। এখন সেগুলা থেকে বাদ দিয়া দিছে। স্বামী একা সংসার চালাইতে পারছে না। তাই বাধ্য হইয়া এই হাটে আসি। মাঝে মাঝে কাজ পাইলেও এই টাকা দিয়ে খাবারদাবার কিনতেই পারছি না। মাছ-মাংস তো স্বপ্নের মতো হয়ে যাচ্ছে। আলু আর পাতলা ডাইলই ভরসা। জয়নাল নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘করোনার সময়ও খাবারের জন্য এমন কষ্ট করছি না। তখন সরকার ও বড়লোকরা খাবারদাবার দিয়া সাহায্য করছে। এহন কেউ সাহায্যও করে না। এই হাটে শুধু জয়নাল, আব্দুর, মিজানুর, ইয়ামিনের না, অন্যদের অবস্থাও প্রায় একই। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাঁদের। আলাপকালে তাঁরা জানান, তাঁদের কারোই নিজের জমি নেই। তাই গ্রামে কাজ না পেয়ে কেউ ঢাকায় এসেছেন অনেক আগে, কেউ এসেছেন ইদানীং। অনেকে রাজধানীর বাসা-বাড়ির কাজ হারিয়েছেন। সূত্র : কালের কণ্ঠ।