গার্মেন্টস শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি ভাবুন
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ১, ২০২১ , ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
করোনাকালীন নানা দুর্ভোগ আর শঙ্কার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের। পেটের দায়ে কাজ করতে গিয়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। মৃত্যুবরণও করছে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ থেকে তৈরি পোশাকশিল্প খুলছে। সংক্রমণের লাগাম টানতে চলমান লকডাউনের মেয়াদ আরো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে, এমতাবস্থায় গার্মেন্টস খুলে দেয়া কতটা প্রাসঙ্গিক। জানা গেছে, আগামী ৫ আগস্টের পরও দুই সপ্তাহ কঠোর বিধিনিষেধ অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র বলছে, ‘জীবন-জীবিকার সমন্বয় করে’ কিছু বিষয় শিথিল করে বিধিনিষেধ অব্যাহত রাখার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সামনে আসছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সুরক্ষায় বিষয়। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে আমাদের ভয়াবহ বিপর্যয় দেখতে হবে হয়তো। শ্রমিকরা অভিযোগ করছেন, লোক দেখানোর নামে কারখানা গেটে স্বাস্থ্যবিধি লিখে রাখলেও কারখানার ভেতর শ্রমিকদের বসার ক্ষেত্রে নিরাপদ দূরত্ব রাখছে না। মাস্ক নেই, নেই পিপিই। বিশেষ করে শ্রমিকরা কারখানায় আসা-যাওয়ায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। বাস না থাকায় অনেকে কর্মস্থলে হেঁটে আসছেন। অনেকে আবার একই রিকশায় গাদাগাদি করে বসে আসছেন। এমন অবস্থা যদি হয় কারখানাগুলোর ব্যবস্থাপনার চিত্র, তাতে শঙ্কা বেড়ে যাবে স্বাভাবিক। আমাদের দেশে পোশাক খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে। বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ এবং দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ জোগান দেয় এ খাত। এই বিপুল মুনাফার জোগান আসে মূলত শ্রমিকদের সস্তা শ্রম থেকে। বছরের পর বছর সরকার বাজেটের মাধ্যমে গতানুগতিক পথে, এছাড়া বিভিন্ন অর্থনৈতিক অজুহাতে এ শিল্পের মালিকদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। কিন্তু দেখা যায়, পোশাক শ্রমিকদের বেতনভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তা লেগেই থাকে। করোনা ইস্যুতে নতুন করে সংকটে পড়ছে তৈরি পোশাক খাত। করোনার প্রভাবে সরকারের ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যে কোনো ধরনের শিল্প-কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই না করতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর শিল্পমালিকদের নির্দেশনা দিয়েছিল। কিন্তু এ নির্দেশনা উপেক্ষা করেই কিছু গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। চাকরি হারানোর ভয়ে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে থাকা লাখ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক লকডাউনের মধ্যে ঢাকার পথে রওনা হওয়ার চিত্র আমরা দেখেছি গতকাল। এ ধরনের ঘটনা অমানবিক। এ খাত দেশের জন্য গুরুত্বপুর্ণ হলেও শ্রমিকরা বরাবরই উপেক্ষিত। নেই কোনো নিশ্চয়তা। আমরা বলব, এ সময়ে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে। কর্মক্ষেত্রে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, নিয়মিত মেঝে পরিষ্কার করা, পুরো কর্মস্থল পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা, হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজেশনের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সরবরাহ করা এবং যেখানে প্রয়োজন সেখানে বিনামূল্যে কর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই) সরবরাহ করতে হবে। কারখানার নিজস্ব ব্যবস্থায় পরিবহনের দিকটিও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।