আজকের দিন তারিখ ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
/////হাইলাইটস///// গুজবে অস্থির ওষুধের বাজার

গুজবে অস্থির ওষুধের বাজার


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ২১, ২০২০ , ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////


দিনের শেষে প্রতিবেদক : করোনার এখনো কোনো ভ্যাকসিন বা ওষুধ বের হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে করোনা প্রতিরোধে নানা ধরনের ওষুধ নিয়ে বাজারে প্রচারণা চলছে। চিকিৎসা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওষুধ নিয়ে ‘গুজব’ ছড়িয়ে অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে। কেউ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসকেরা স্বাভাবিক কিছু ওষুধ দিচ্ছেন। তাতে অনেকেই ভালো হয়ে যাচ্ছেন। এতেই কিছু মানুষ সেই সব ওষুধ কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। ফলে অখ্যাত কোম্পানির কিছু ওষুধও ১০ গুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। অথচ ঐ ওষুধগুলো আক্রান্তদের প্রয়োজন। কিন্তু তারা কিনতে পারছেন না। অথচ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ওষুধ না খেতে বারবার নির্দেশনা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এসব ওষুধে নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার কথাও বলছেন চিকিৎসকেরা। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ  বলেন, ‘কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া যাবে না। প্রত্যেক ওষুধের একটা প্রতিক্রিয়া আছে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খেলে কিডনি, লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া বিকলাঙ্গ হওয়ারও আশঙ্কা আছে। তাই আন্দাজে ওষুধ না খেয়ে প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। তাহলে ওষুধ লাগবে না।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন খেতে শুরু করেছেন। কয়েক জন চিকিৎসক আক্রান্ত রোগীদের ওপর নোভার্টিজ গ্রপের অ্যাজিথ (৫০০ এমজি), ডেলটা গ্রপের স্ক্যাবো ৬ (৫ এমজি), অপসোনিনের ডক্সিন (১০০ এমজি) প্রয়োগে ভালো ফল পেয়েছেন। ফলে তারা রোগীদের উপসর্গ অনুযায়ী এসব ওষুধ খেতে বলছেন। এখন সাধারণ মানুষও কোনো ধরনের উপসর্গ ছাড়াই এসব ওষুধ খেতে শুরু করেছেন। আবার ভিটামিন সি ও ভিটামিন ডি (জিংক) অনেকেই খাচ্ছেন। এতে বাজারে এই ওষুধগুলোর সংকট তৈরি হয়েছে। অনেকে প্রয়োজন হওয়ার পরও পাচ্ছেন না। আবার ভারতের কিছু দৈনিকের খবর দেখে অনেকে প্রতিষেধক হিসেবে হোমিওপ্যাথি আর্সেনিকাম অ্যালবাম-৩০ খেতে শুরু করেছেন। কেন তারা এসব ওষুধ খাচ্ছেন নিজেরাও জানেন না। নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক ও নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম ইত্তেফাককে বলেন, ‘যেসব ওষুধের কথা বলা হচ্ছে সেগুলো খেলে নানা ধরনের নিউরোলজিক্যাল সমস্যা হতে পারে। দুর্বল রোগীরা হার্ট অ্যাটাকও করতে পারেন। মস্তিষ্কে নানা ধরনের অসুবিধা হতে পারে। তাই অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া উচিত হবে না। আসলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ওষুধের দরকার নেই। আবার কোনো কোনো চিকিৎসক দাবি করেছেন, করোনা ভাইরাস পজিটিভ রোগীর ওপর উকুন কিংবা খোস-পাঁচড়ায় ব্যবহূত ওষুধ ডক্সিসাইক্লিন ও আইভারমেকটিন প্রয়োগে অল্প সময়ে সুস্থ হওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন। এখন অনেকেই করোনা পজিটিভ হওয়ার পর চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই এই ওষুধ খেতে শুরু করেছেন। ফলে বাজার থেকে এই ওষুধও মুহূর্তের মধ্যে উধাও হয়ে গেছে। এতে অনেকেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, কেউ কোনো ওষুধ খেয়ে ভালো হলে তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। মুহূর্তেই সেটা ছড়িয়ে পড়ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে কিছু না বুঝেই অনেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। ফলে সাধারণ মানুষ সেই সব ওষুধ কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। কয়েক জন চিকিৎসক বলেছেন, এমন অনেক অখ্যাত কোম্পানি আছে, যাদের ওষুধ বিক্রি হয় না। তারা এই সুযোগে ফেসবুকে ‘গুজব’ ছড়িয়ে নিজেদের ওষুধ বিক্রি করে ফায়দা তুলে নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নজরদারি থাকার কথা। কিন্তু তাদের কোনো হস্তক্ষেপ চোখে পড়ছে না। এমনকি ‘গুজব’ সৃষ্টি করা ওষুধ নিয়ে তারাও নীরব ভূমিকা পালন করছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, এখন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে এসব ওষুধের ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করতে হবে। তাদের এগিয়ে আসতে হবে, যেন সাধারণ মানুষ এসব ওষুধ খেয়ে বিপদে না পড়ে।