‘গুণ’ বেড়ে বেগুনের দাম দ্বিগুণ
পোস্ট করেছেন: admin | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ৭, ২০১৬ , ১২:৪৫ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য
কাগজ অনলাই্ন প্রতিবেদক: সারাবছর যেমনই চলুক, রমজান মাসে ভোজনরসিক মানুষের ইফতারে বেগুনের বেশ কদর। সঙ্গে বেড়ে যায় দামও।
রাজধানীর কাচাবাজারগুলোতে দু’চারদিন আগেও যে লম্বা বেগুন বিক্রি হতো ২৫ টাকা থেকে ৩৫ টাকায় তা মঙ্গলবার (৭ জুন) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকায়।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। শুধু বেগুনই নয় ইফতারসামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার হয় এমন সব সবজির দাম কয়েকগুন বাড়িয়ে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। আর এতে সমস্যায় পড়ছে স্বল্প আয়ের মানুষ।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘রমজানে কয়েকটি পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে। বিশেষ করে ইফতার আইটেমের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ সুযোগে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি সেগুলো পাইকারী বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে খুচরা বাজারে তা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
পাইকারী ব্যবসায়িরা তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ‘চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম সামান্য বেড়েছে। তবে কৃত্রিম সঙ্কট নয়, আমদানি ঘাটতি থাকায় সামান্য বেড়েছে পণ্যের দাম।’ তবে রমজানের প্রথম সপ্তাহেই এ চাপ থাকবে। পরে পণ্যের দাম স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তারা।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, স্বামীবাগ, কাপ্তানবাজার, সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিকেজি কাচামরিচ ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিকেজি পেপে ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকায় (গত সপ্তাহে ছিল ৩০ টাকায়), শশা ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকায় (গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা), গাজর ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা (গত সপ্তাহে ছিল ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা), ধনিয়া পাতা ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
গরুর মাংস : সিটি করপোরেশন থেকে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৪২০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও দুয়েকটি বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা বিক্রি করতে দেখা গেছে।
ছোলা: আগেই ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন রমজানে ছোলার দাম ১০০ টাকা ছাড়াবে, আর তাই হয়েছে। বাজারে অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা ভাল মানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা থেকে ১১৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মানভেদে প্রতিকেজি ছোলার ৯৫ টাকা থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা ছোলা খোলা বাজারে ট্রাক সেলে প্রতিকেজি ৭০ টাকায় বিক্রি করছে।
চিনি: খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চিনি ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত সপ্তাহে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৬০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে চিনির দাম বেড়েছে ৫ টাকা। টিসিবি প্রতিকেজি চিনি দেশী চিনি ৪৮ টাকায় বিক্রি করছে।
ডাল : খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি মসুর ডাল ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া অ্যাংকর (বুটের) ডাল ৬০-৬২ টাকায়, খেসারির ডাল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, বুটের ডালের বেসন ১২০ টাকা, অ্যাংকর ডালের বেসন ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। টিসিবি মশুর ডাল ৮৯ টাকা ৯৫ পয়সায় বিক্রি করছে।
পেয়াজ: খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি দেশি পেয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বিক্রি করতে দেখা গেছে।
রসুন: বাজারে চীন থেকে আমদানি করা রসুন ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় এবং দেশি রসুন ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগি: বাজারে দুয়েকদিন আগের চেয়ে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। মঙ্গলবার প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ টাকা থেকে ১৮৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
সয়াবিন তেল : বাজারে প্রতিকেজি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা থেকে ৯৫ টাকায় (সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ টাকা বেড়েছে)। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা থেকে ৪৫৫ টাকায়। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯২ টাকা থেকে ৯৫ টাকায়। তবে সরকারি সংস্থা টিসিবি প্রতিলিটার সয়াবিন তেল বিক্রি করছে ৮০ টাকায়।
কয়েকজন ভোক্তার সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, আসলে বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। সরকার বলেছে রমজানের আগে বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে না অথচ বাজারে ঠিকই বেশি দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। যদিও দুয়েকটি বাজারে মনিটরিং করতে দেখা গেছে। কিন্তু রাজধানীর সব বাজারে তো তারা মনিটরিং করছে না। বিভিন্ন বাজারে সবজির দাম বাড়তি হলেও মনিটরিং কমিটির খুব বেশি তৎপরতা লক্ষ্য যাচ্ছে না। এই সুযোগে পণ্যের দাম অতিরিক্ত নিচ্ছে ব্যবসায়িরা। এতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ভোক্তাদের।
যাত্রাবাড়ী পাইকারী কাচাবাজার আড়তের ব্যবসায়ী নেতা নরু হাজী জানান, আসলে রমজান মাসে পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে। একারণে পাইকারী বাজারে বেগুন, কাচামরিচ, শসাসহ কয়েকটি পণ্যের সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে সামান্য দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘পাইকারী বাজারে সামান্য দাম বাড়লেই এই অজুহাতে খুচরা ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি দাম বাড়িয়ে দেয়। বিষয়টি সরকার সঠিক ভাবে মনিটরিং করলেই বুঝতে পারবে পাইকারী ও খুচরা তফাৎ কী পরিমাণ।’ আর এতে ভোক্তারা সুফল পাবে বলে মনে করেন তিনি।