গুপ্তহত্যায় জড়িতদের খুঁজে বের করব: প্রধানমন্ত্রী
পোস্ট করেছেন: admin | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১১, ২০১৬ , ৩:০২ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////,জাতীয়
কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক: যারা গুপ্তহত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের ‘খুঁজে খুঁজে’ বের করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, “এদের খুঁজে খুঁজে আমরা বের করব। বাংলাদেশে যাবে কোথায়?
“কেউ পার পাবে না। বাংলাদেশ ভূখণ্ডের দিক দিয়ে ছোট। এখানে সবাই সবাইকে চিনতে পারে বা জানতে পারে। এগুলো খুঁজে বের করা খুব কঠিন কাজ না। এর শাস্তি তারা পাবেই।”
শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রারম্ভিক বক্তব্যে একথা বলেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “সরকার যদি প্রকাশ্যে হত্যা বন্ধ করতে পারে, তাহলে এই গুপ্তহত্যাও আমরা বন্ধ করতে পারবে, ইনশাল্লাহ, সময়ের ব্যাপার।”
গত এক বছরে লেখক, প্রকাশক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের হত্যার পাশাপাশি বিদেশি, হিন্দু পুরোহিত, খ্রিস্টান যাজক, বৌদ্ধ ভিক্ষু আক্রান্ত হওয়ার পর সম্প্রতি চট্টগ্রামে একই কায়দায় এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী খুন হন।
বাংলাদেশে এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচনা চলছে। এসব হত্যাকাণ্ডে আইএস ও আল কায়দার মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর নামে দায় স্বীকারের বার্তা হলেও সরকার তা নাকচ করছে।
এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা রয়েছে, তাদেরকেও খুঁজে বের করার কথা বলেন শেখ হাসিনা।
“এদের সূত্রটা কী? কোথা থেকে টাকা আসছে? কাদের মদদে এটা করতে চাচ্ছে? সে সূত্রগুলোও আমরা বের করব।”
কিছু তথ্য এর মধ্যেই সরকারের কাছে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তার কিছু কিছু সূত্র আছে। আমরা পাচ্ছি। সব এক সময় বের হবেই।”
দেশি-বিদেশি যারাই এর পেছনে থাক, বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
“যারা উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে, তাদের কোনো ক্ষমা নেই। এই বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলবে না।”
গুপ্তহত্যা বন্ধে দেশবাসীকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কেউ যখন আঘাত করবে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দয়া করে দেখবেন না। বরং সবাই একজোট হয়ে সেটাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করবেন।
“আমরা সাথে থাকব। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাথে থাকবে।”
বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রতিহত করার মতো গুপ্তহত্যাও প্রতিহত করার আহ্বান জানান তিনি।
“যারা এগুলো করে পালাতে চাইবে.. আমি রাস্তায় যারা থাকে, তাদের বলব, এদের অন্তত ধরার চেষ্টা করবেন। তাদেরকে প্রতিরোধ করবেন। ঠিক যেভাবে করেছিলেন, ২০১৫-এর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত।”
গুপ্তহত্যায় জড়িতদের হুঁশিয়ার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে পুলিশের পরিবারের উপর আঘাত করা হয়েছে। যারা এটা করে, তারা ভুলে যায় কেন যে তাদেরও পরিবার আছে। তাদেরও বাবা-মা আছে, ভাই-বোন আছে, ছেলে-মেয়ে আছে।
“আঘাত দিলে প্রতিঘাত কিন্তু পেতেই হবে। তারা কী তাদের পরিবারকে এভাবে বিপদে ফেলতে চায়?”
জঙ্গিবাদী কার্যক্রমে যেন সন্তানরা জড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য অভিভাবকদের সজাগ থাকার আহ্বানও জানান তিনি।
ইসলামের নামে হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইসলাম ধর্ম তো কাউকে খুন করতে বলেনি। অহেতুক নিরীহ মানুষগুলোকে খুন করা, এটা কোন ধরনের ধর্ম পালন?
“আল্লাহ বলেছেন, তিনিই বিচার করবেন। যেখানে আল্লাহ বলেছেন, তিনিই বিচার করবেন। আর, সেই বিচারের ভার যখন বান্দা নিয়ে নেয়, তখন তো সে আল্লাহকেও মানে না, রসুলকেও মানে না। সে ইসলাম ধর্মই মানে না।”
বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র নস্যাতের পরিকল্পনা থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের উপর হামলা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সব গুপ্তহত্যার জন্য আবারও বিএনপিকে দায়ী করে শেখ হাসিনা বলেন, “যত হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে হচ্ছে, প্রত্যেকটার মদদদাতা তারা। অস্বীকার করবে কীভাবে?
“জনগণ যদি একটু ভালো ভাবে দেখে, তাহলে দেখবে কারা রক্তপাত ঘটায়, কারা মানুষ পুড়িয়ে মারে?”
আন্দোলনে প্রকাশ্যে ‘মানুষ হত্যা’ করে প্রতিরোধের মুখে পড়ে এখন বিএনপি-জামায়াত গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গুপ্তহত্যার পর যারা সরকারের সমালোচনা করেছেন, তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “যখন বিএনপি শত শত মানুষ পুড়িয়ে মারল, তখন কিন্তু তাদের কণ্ঠ অতটা সোচ্চার ছিল না।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্প্রতি গুপ্তহত্যার জন্য সরকারি দলকে দায়ী করেছেন।
তার বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “খুন করার অভ্যাস আমার নাই। তার আছে। তারা আমাকে খুন করার চেষ্টা করেছে।”
বিভিন্ন সময়ে নিজের ওপর হামলার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “যেদিন থেকে বাংলাদেশে যেদিন পা দিয়েছি, সেদিন থেকে শুরু। এমন কোনো জেলা নেই যে, আমাকে বাধা না দিয়েছে, আক্রমণ না করেছে।”
জিয়াউর রহমানের আমলে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
“খুনের মদদ তারা করে, এটা প্রমাণিত। এটা সবাইকে বুঝতে হবে। এরাই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের লালন-পালন করেছে, পুরস্কৃত করেছে। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে বিচারের হাত থেকে রক্ষা করেছে।”
“জিয়াউর রহমান তাদের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। আর, খালেদা জিয়া ওই খুনি ফারুক আর রশিদকে ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে পার্লামেন্টে বসিয়েছে।”
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সরকারের মদদ না থাকলে, তার নিজের মদদ না থাকলে, তার ছেলের মদদ না থাকলে, এই ধরনের হামলা হয় কীভাবে?
“যে গ্রেনেড যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহার করা হয়, প্রকাশ্য দিবালোকে সে গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে ঢাকা শহরের রাজপথে।”
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “শুধু সাজুগুজু করার জন্য আয়নায় শুধু চেহারা দেখেন না। কী কী করেছেন, তা স্মরণ করার জন্য চেহারাটা একটু আয়নায় দেখেন। আয়নায় খুনের চেহারাটাই ভেসে উঠবে। মনের আয়নাটা দেখেন। কীভাবে খুনিদের মদদ দিয়েছেন।”
গুপ্তহত্যার পেছনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর ষড়যন্ত্রও কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
“যাদের মন্ত্রী বানিয়েছিল, তাদের যুদ্ধাপরাধী হিসাবে তারা ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলছে। খালেদা জিয়া এই ব্যথা কী ভাবে ভুলবে বলেন? খালেদা জিয়া এই প্রতিশোধ নেবে না? সে প্রতিশোধ সে নিচ্ছে, এটা তো বাস্তব কথা।”
গণভবনে বৈঠকের শুরুতেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের ১১ মাস পর ২০০৮ সালের ১১ জুন তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।