ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাত : ক্ষতিগ্রস্তের পাশে দাঁড়াতে হবে
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ২২, ২০২০ , ১০:২০ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
প্রবল শক্তি নিয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ আছড়ে পড়েছে সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের উপক‚লে। এর আগেও সিডর-বুলবুলের আঘাত আসে সুন্দরবনে। এই সুন্দরবনই বাঁচিয়ে দেয় হাজার হাজার মানুষের প্রাণ। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সুন্দরবনের কারণে বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়। তবে যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত ততটা প্রলয়ঙ্করী রূপ নেয়নি আম্ফান। এটি স্বস্তিদায়ক। এটাও ঠিক যে, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ এখন আগের চেয়ে সক্ষমতা অর্জন করেছে। আম্ফানের প্রভাবে গাছ ও দেয়ালচাপায় এবং নৌকাডুবিতে বিভিন্ন স্থানে ১৩ জনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রবল বেগের এই ঝড়ে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটসহ উপক‚লীয় এলাকা লÐভÐ করে দেয়। সুন্দরবন ঢাল হয়ে দাঁড়ানোয় উপক‚লীয় জনপদে জীবন ও সম্পদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে পড়েছে, বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে অনেক বাঁধ। সাতক্ষীরা, খুলনাসহ পশ্চিম উপক‚লে এ সময় ৫ থেকে ৭ ফুট উঁচু জলোচ্ছ¡াস বয়ে যায়। এতে প্লাবিত হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা। গাছপালা উপড়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এতে পটুয়াখালী, ভোলা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, বরগুনা, ল²ীপুর, নোয়াখালী ও বরিশালের কিছু অংশসহ উপক‚লীয় জেলাগুলোর প্রায় ৫০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন। এরপর আগাম সতর্কতায় উপক‚লীয় স্থানের বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়ার ফলে দুর্যোগ-পরবর্তী আঘাত সেভাবে বিপাকে ফেলতে পারেনি। পঞ্চাশ থেকে আশির দশক পর্যন্ত এ দেশের শহর ছাড়া সব বাড়িঘর বাঁশ, বেত, ছন ও মাটির ছিল। সাধারণত বৃষ্টি বা দমকা হাওয়ায় লÐভÐ করে দিত বাড়িঘর। এখন সে অবস্থানের অনেক পরিবর্তন আসছে। জানা গেছে, গত দশ বছরে দেশে মোট সাতটি বড় ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল ‘মোরা’। ২০১৭ সালের ৩০ মে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোরা আঘাত হেনেছিল। এর আগে ২০১৬ সালের ২১ মে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ আঘাত হানে। ২০১৩ সালের ১৬ মে আসে ‘মহাসেন’। আর ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই আসে ‘কামেন’। ২০০৯ সালের ২৫ মে আঘাত হানে ‘আইলা’। এরপর ফণী ও বুলবুল। সর্বশেষ আম্ফান। আম্ফানের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার। কিন্তু সুন্দরবনের গাছপালার কারণে সেটির প্রভাব ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৪০ কিলোমিটারের মতো অনুভ‚ত হয়। এতে আম্ফানের ছোবল থেকে উপক‚লীয় এলাকা রক্ষায় সুন্দরবন ঢাল হিসেবে কাজ করেছে। এই বন না থাকলে উপক‚লে বড় ধরনের তাÐব হতে পারত। আইলা, সিডরের সময় বাংলাদেশের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। সে সময় ক্ষয়ক্ষতি বেশি ছিল কারণ আমাদের প্রস্তুতি ছিল না। কিন্তু এখন বাংলাদেশ অনেক বেশি সক্ষমতা অর্জন করেছে। এ কথা অনস্বীকার্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কমবেশি আসবেই। প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি মানুষের চেষ্টায় যে কমিয়ে আনা সম্ভব তাতে সন্দেহ নেই। আমরা আশা করব সরকার আম্ফানের ছোবলে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবে পাশাপাশি যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে তা দ্রæত মেরামতের উদ্যোগ নিতে হবে।