আজকের দিন তারিখ ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
/////হাইলাইটস///// চলতি বছর ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রাণহানি

চলতি বছর ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রাণহানি


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: নভেম্বর ১০, ২০২২ , ৪:৫১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////


দিনের শেষে প্রতিবেদক : চলতি বছর ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রাণহানি ঘটেছে। এর আগে ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু কখনও হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, এর আগে ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল। সে বছর সর্বোচ্চ ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন আক্রান্ত এবং ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আবহাওয়া, মশা মারার পরিকল্পনা সব মিলিয়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ কবে নাগাদ কমতে পারে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই কারও কাছে। নভেম্বর মাসে প্রকোপ কমে আসার কথা বলা হলেও প্রতিদিনই ৮০০-৯০০ রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। আর এর সঙ্গে মৃত্যু তো আছেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত ২০-২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে এ বছর। অক্টোবর মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে প্রায় ২২ হাজার মানুষ। এরমধ্যে গত মাসেই মারা গেছেন ৮৬ জন। এ বছর ৫ নবেম্বর পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ি ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১৭০ জন। তার মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ মারা গেছেন ৯ জন। অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশের ৫৭টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু।

অর্থাৎ এসব জেলায় বর্তমানে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। অথচ এক বছর আগেও অল্প কয়েকটি জেলায় ডেঙ্গু সীমাবদ্ধ ছিল। যেসব জেলায় বর্তমানে রোগী নেই সেগুলো হলো- চুয়াডাঙ্গা, জয়পুরহাট, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও সিলেট। ২০১৯ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে গত বছর বিশ্বব্যাংকের গবেষণা বলছে- সারা দেশে যত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল, তার অর্ধেকই ঢাকার। আর ঢাকায় ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার ছিল সারা দেশের ৭৭ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলেছে, ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় ভারী বর্ষণের সঙ্গে পরের মাসগুলোর অনুকূল তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তারে ভূমিকা রেখেছিল। আর আবহাওয়া যেভাবে বদলে যাচ্ছে, তাতে ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোতে বর্ষাকালে ডেঙ্গুর মতো বাহকনির্ভর রোগের প্রকোপ বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের গবেষণা বলেছে, আর্দ্রতা কমে আসার পাশাপাশি তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের মাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতে রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে। মশা মরছে না কেন, ২০১৯ সালে জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। ২০১৯ সালে হাইকোর্ট জানতে চাওয়ার ১৪ মাস আগেই গবেষকরা বলেছেন—মশার ওষুধ কাজ করছে না। দীর্ঘদিন একই ওষুধ ব্যবহারের ফলে মশা হয়ে উঠেছে সেই ওষুধ প্রতিরোধী। অপরদিকে কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন মশা মারার পদ্ধতিগত সমস্যার কথা। কীটতত্ত্ববিদ ড. জি এম সাইফুর রহমান বলেন, মশা নির্মূলে কার্যকর কোনও পদ্ধতি নিয়ে আমরা কাজ করছি না। যখন রোগী বাড়ছে, মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন আমাদের কিছু কার্যক্রম দেখা যায় মশা মারার জন্য।

কিন্তু মশা মারার জন্য যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার, তা করা হচ্ছে না। যখন মশা কম থাকে তখন প্রজনন স্থান খোঁজা দরকার। কিন্তু সেটি তো করা হচ্ছে না। এটি বাড়ছে এবং আগামীতে আরও বাড়বে। মশা মারার জন্য একটি ওষুধ বেশি দিন ব্যবহার করা যাবে না। সেজন্য পরিকল্পনা থাকতে হবে, এ বছর এক ওষুধ ব্যবহার করা হবে, আগামী বছর আরেকটি। এভাবে আমাদের এগোতে হবে। যখন দেখা যায় যে মশা মরছে না, তার মানে ওই ওষুধ রেজিস্টেন্স হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রবণতা হচ্ছে ওষুধ দিয়ে চলে আসা, তাতে মশা কিংবা প্রজনন ধ্বংস হচ্ছে কিনা, তা মনিটর করা হয় না। আগে বছরে ২-৩ মাস ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যেতো। এখন সারা বছরই পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি বছর এই সংখ্যা বাড়ছে। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি কবে নিয়ন্ত্রণে আসবে, তা বলা যাচ্ছে না। কারণ, এখনও নিয়মিত আক্রান্ত ও মারা যাচ্ছে মানুষ। তিনি বলেন, কেন এ সময়ে এসেও আক্রান্ত কমছে না, তা আরও ভালো বলতে পারবেন কীটতত্ত্ববিদরা। তবে চিকিৎসার দিক থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোনও ঘাটতি নেই। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।

মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে ডেঙ্গু শনাক্ত না হওয়া এবং হাসপাতালে দেরিতে আসায় ঝুঁকি বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুও।’ উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদফতর একসঙ্গে কাজ করছে বলে তিনি জানান। গত ৩ নভেম্বর মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীদের দেখতে ও হাসপাতাল পরিদর্শনে যান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। সেখানে তিনি বলেন, মানুষের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনও পোকামাকড় মারার ওষুধ বাতাসে ছিটানো যাবে না। মশা হয়তো মরে যাবে, কিন্তু মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। সেসব দিক বিবেচনা করে সিটি করপোরেশনকে আমরা সঠিক ওষুধ নির্ধারণ করে দিয়েছি। মশা মারার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেসব ওষুধ অনুমোদন দেয়, সেই ওষুধগুলোই প্রথম থেকে আমদানি করা হচ্ছে। তাজুল ইসলাম ওই সময় আরও জানান, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের সিটি করপোরেশনগুলোর প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি জোনে ভাগ করে মশক নিধন কার্যক্রম আরও বেশি জোরদার করা হচ্ছে। সেখানে কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে স্থানীয় ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করে জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা চলছে।