চাকরি পাওয়া কঠিন, অভিনব পেশা বেছে নিচ্ছেন তরুণ চীনারা
পোস্ট করেছেন: delwer master | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ৩০, ২০২৩ , ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সারাবিশ্ব
দিনের শেষে ডেস্ক : কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে নিজের পেশা ছেড়ে দিয়েছিলেন ফটোগ্রাফার লিটস্কি লি। সামনে এসেছিলো একটি লোভনীয় প্রস্তাব। ঘরে থেকে পরিবারের পরিচর্যা করার জন্য তাঁকে দেয়া হবে বেতন, যা প্রদান করবেন তাঁর বাবা- মা। ২১ বছরের লি এখন পরিবারের জন্য লুওয়াং শহরে মুদির দোকানে কেনাকাটা করতে যান, তার ডিমেনশিয়া আক্রান্ত দাদির যত্ন নেন। পরিবর্তে তার বাবা-মা তাকে মাসে ৬,০০০ ইউয়ান (৮৩৫ ডলার) বেতন দেন, যা লি-এর এলাকায় মধ্যবিত্তর মজুরি হিসেবে বিবেচিত হয়। হাই স্কুলের স্নাতক লি বলছেন, ”আমার বাড়িতে থাকার কারণ হল আমি কাজের চাপ সহ্য করতে পারছিলাম না। আমি আমার সমবয়সীদের সাথে তীব্রভাবে প্রতিযোগিতায় নামতে চাই না। তাই আমি পরিবারের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার উচ্চ বেতনের চাকরি বা আরও ভাল জীবনের প্রয়োজন নেই।”
লি একা নন। কর্মক্ষেত্রে অসন্তোষের জেরে অনেকেই পূর্ণ-সময়ের পুত্র এবং কন্যা হবার পেশাকে বেছে নিচ্ছেন। বিষয়টি গত বছরের শেষের দিকে জনপ্রিয় চীনা সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ‘ডোবানে’ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন হাজার হাজার তরুণ-তরুণী রয়েছেন যাঁরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন, কারণ তারা কাজ পাচ্ছেন না। শহুরে এলাকায় ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের বেকারত্বের হার গত মাসে ২১.৩% ছুঁয়েছে। কোভিড-পরবর্তী সময়ে গার্হস্থ্য খরচ, ব্যক্তিগত শিল্পের পশ্চাদপসরণ এবং সম্পত্তি বাজারে টানাপোড়েনের কারণে যুব বেকারত্ব বেড়েছে।
পিকিং ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ঝাং ড্যানডান গত সপ্তাহে নিউজ আউটলেট কাইক্সিনের জন্য একটি প্রতিবেদনে লিখেছিলেন- ”যদি ১৬ মিলিয়ন তরুণ-তরুণী এভাবে বাড়িতে থাকে বা তাদের পিতামাতার উপর নির্ভর করে এবং সক্রিয়ভাবে কাজের সন্ধান না করে, তাহলে তরুণদের জন্য সত্যিকারের বেকারত্বের হার মার্চ মাসে ৪৬.৫% পৌঁছে যেতে পারে”।
ডাউবানে, “পূর্ণ-সময়ের সন্তানদের কাজের যোগাযোগ কেন্দ্র” নামে একটি গ্রুপের প্রায় ৪,০০০ সদস্য তাদের দৈনন্দিন কর্মজীবনের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করে। বিষয়টি অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়েছে। তরুণদের মধ্যে চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় লাইফস্টাইল শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ঢরধড়যড়হমংযঁ-এ বর্তমানে “পূর্ণকালীন পুত্র ও কন্যা” হ্যাশট্যাগের অধীনে ৪০,০০০টিরও বেশি পোস্ট রয়েছে। একসময়ে চীনা তরুণদের মধ্যে ক্যারিয়ার গড়ার হিড়িক ছিলো, আজকের পেশাদার তরুণরা পিতামাতার সাথে সময় কাটায় এবং আর্থিক সহায়তার বিনিময়ে বাড়ির কাজ করে। তাদের জীবনযাত্রার খরচ আংশিকভাবে বাবা-মায়েরা পরিশোধ করেন”। সমাজবিজ্ঞানীরা বলেছেন যে কঠোর মহামারীর সময়ে চীনাদের অভিজ্ঞতাগুলি তাদের জীবনের লক্ষ্যগুলিকে আমূলভাবে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে।
ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ফ্যাং জু- এর মতে, ”মানসিকভাবে, চীনের লোকেরা এখনও কোভিড -১৯ মহামারীর প্রভাব থেকে নিজের পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।” চীনা তরুণরা এমন একটি সঙ্কুচিত অর্থনীতির মুখোমুখি হচ্ছে যা কয়েক দশক ধরে এগিয়ে ছিল। এই বছরের শুরু থেকে চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি ধীর হয়ে গেছে এবং ব্যবসায়িক আস্থা দুর্বল হতে শুরু করেছে। বেসরকারী খাত, অর্থনীতির মেরুদণ্ড এবং কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় উৎস, ২০২০ সালের শেষের দিক থেকে ব্যাপক ক্র্যাকডাউনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পূর্ব জিয়াংসি প্রদেশের বছর ২৪- এর ন্যান্সি চেন জানাচ্ছেন, কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পরে একটি প্রাইভেট টিউটরিং স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। কিন্তু ২০২১ সালে যখন কর্তৃপক্ষ লাভজনক টিউটরিং পরিষেবাগুলি নিষিদ্ধ করেছিল তখন তিনি তার চাকরি হারান। সেইসময়ে পারিবারিক দায়িত্বের পাশাপাশি, তিনি সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করতেন এবং স্নাতক স্কুলের পরীক্ষা দিতে ব্যস্ত ছিলেন। চেন বলেছেন যে “তীব্র প্রতিযোগিতার” কারণে তিনি এখনও কোনো চাকরি পাননি। তার প্রদেশের একটি মিউনিসিপ্যাল গভর্নমেন্টে সাম্প্রতিক তিনটি চাকরির শূন্যপদের জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা ছিলো ৩০ হাজার।
যদিও হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ইয়া-ওয়েন লেই আশা করেন ‘পেশাদার সন্তানদের’ এই প্রবণতা বেশিদিন স্থায়ী হবে না। এই সামাজিক প্রেক্ষাপটে তারা তাদের পিতামাতার কাছ থেকে যে সমর্থন পায় তা আশ্চর্যজনক নয়, কারণ অনেক চীনা অভিভাবক তাদের সন্তানদের জীবনের বিভিন্ন দিক যেমন আবাসন, বিবাহের ব্যয় এবং শিশু যত্নে সহায়তা করেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির চায়না সেন্টার এবং লন্ডনের এসওএএস ইউনিভার্সিটির গবেষণা সহযোগী জর্জ ম্যাগনাস বলেছেন,” এটি চীনে চাকরির সমস্যার একটি কার্যকর সমাধান নয়। এটি একটি স্বল্পমেয়াদী সমাধান মাত্র। তরুণরা যদি শ্রমবাজারে দক্ষতা অর্জন না করে এবং আরও ভালো সুযোগের সন্ধান না করে, তাহলে তারা বেকার হয়ে যেতে পারে।” সূত্র : সিএনএন