চামড়ার বাজার শৃঙ্খলায় আগাম প্রস্তুতি দরকার
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১০, ২০২১ , ৩:২০ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে চামড়ার সিন্ডিকেট বাণিজ্য নতুন বিষয় নয়। প্রতি বছর এমন ঘটনা ঘটে থাকে। এবারো ব্যত্যয় হবে না। ব্যবসায়ীদের মধ্যেও এ নিয়ে অস্থিরতা আছে। করোনা ব্যাধি সংক্রমণের আশঙ্কায় এ বছর কুরবানি কম হবে। এতে চামড়া খাতে কাঁচামালের সরবরাহও কম হবে। ট্যানারি মালিকদের অভিযোগ, করোনাকালীন নানা প্রতিক‚লতা ছাড়াও সাভার শিল্পনগরীতে বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যার কারণেও পশুর চামড়া সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের করণীয় রয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পের পর সবচেয়ে জনসম্পৃক্ত খাত চামড়া শিল্প। আমাদের দেশের চামড়া খাত মূলত রপ্তানিনির্ভর। বিশ^ব্যাপী এ দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। করোনার কারণে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা কমেছে। গতবারের কুরবানির ঈদে সংগ্রহ করা পশুর কাঁচা চামড়া এখনো পণ্য তৈরিতে ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। নগরীর ট্যানারিগুলোতে বর্তমানে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার চামড়া জমে আছে। পণ্য বিক্রি না হওয়ায় ট্যানারির মালিকরা অর্থ সংকটে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে নতুন চামড়া সংগ্রহ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকবে, এটা স্বাভাবিক। বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন সূত্র জানায়, সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে ১৫৪টি ট্যানারি রয়েছে। অন্যগুলো উৎপাদনে যেতে পারেনি। এতে করে চামড়া সংরক্ষণে ব্যাঘাত হচ্ছে। অতীতে আমরা এমনটাই দেখেছি। কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতন ও চাহিদা কমার অজুহাত তুলে কুরবানির পশুর চামড়ার দাম কমিয়ে নির্ধারণ করছেন ট্যানারি মালিক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের চামড়ার মান ভালো অথচ দাম অনেক কম থাকায় প্রতি বছরই ভারতে চামড়া পাচার হয়ে যায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি শিল্প চামড়া খাতটি ধ্বংসের দিকে যাবে। এছাড়া কুরবানির পশুর চামড়ার বিক্রিকৃত টাকা এতিমখানা ও গরিব-দুস্থদের দান করাটাই নিয়ম। কুরবানির চামড়া থেকে প্রাপ্ত অর্থে এসব প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক খরচের একটি বড় অংশ নির্বাহ করা হয়। কিন্তু চামড়ার দাম প্রতি বছর কমতে থাকায় প্রতিষ্ঠান চালাতে হিমশিম খেতে হয়। জানা গেছে, কুরবানির চামড়া সংরক্ষণে কমপ্রেহেনসিভ মনিটরিং প্ল্যান করছে সরকার। পাঁচ মন্ত্রণালয় ও আরো কয়েকটি অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বিশেষ কমিটি কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ ও মজুতে বিশেষ কাজ করবে। এছাড়া লবণের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসহ সাপ্লাই চেইন স্বাভাবিক রাখতে সার্বক্ষণিক তদারকি করে বিষয়গুলো কঠোরভাবে মনিটরিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। শিগগিরই এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক করতে যাচ্ছে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আমরা মনে করি, একটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে আয়ের খাতগুলোর যেমন যথাযথ তত্ত¡াবধান নিশ্চিত করতে হয়, তেমনি সম্ভাবনাময় খাতগুলোর উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্প সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে পারলে জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখবে।