আজকের দিন তারিখ ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অন্যান্য চিকিৎসক বাবাকে মেয়ের চিঠি : ‘করোনাকে মেরে তাড়াতাড়ি চলে এসো’ আব্বু

চিকিৎসক বাবাকে মেয়ের চিঠি : ‘করোনাকে মেরে তাড়াতাড়ি চলে এসো’ আব্বু


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ১৫, ২০২০ , ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অন্যান্য


দিনের শেষে প্রতিবেদক : ৬ বছরের ফুটফুটে এক শিশু তার চিকিৎসক বাবার কাছে আবেগঘন চিঠি লিখেছে। চিঠিতে করোনাভাইরাসকে মেরে দিয়ে তাড়াতাড়ি বাবাকে বাসায় ফিরতে বলেছে সে। গত ২২ মার্চ থেকে এই চিকিৎসক তার একমাত্র মেয়ে ও পরিবারের অন্যদের থেকে দূরে থাকছেন। এদিনের পর তিনি কর্মস্থল গাজীপুর থেকে আর বাসায় ফেরেননি। তিনি গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত।  করোনাভাইরাস বিস্তারের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই চিকিৎসক গণমাধ্যমে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। তবে তিনি টেলিফোনে মেয়ের কাছ থেকে পাওয়া চিঠি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে চিকিৎসকদের নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হচ্ছে। বিভিন্ন আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে, চিকিৎসকেরা কর্মস্থলে যাচ্ছেন না। তবে ঢালাওভাবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। দেশের এই পরিস্থিতিতে যে চিকিৎসকই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন, তাদের এবং তাদের পরিবারের এমন গল্প আছে। তাই মেয়ের কাছ থেকে মেসেঞ্জারে চিঠি পেয়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। মেয়ে মেসেঞ্জারে চিঠি দেওয়ার পর ড্রাইভার আমার প্রয়োজনীয় জিনিস আনতে বাসায় যান। তখন মেয়ে আবার সেই চিঠি ড্রাইভারের কাছে দিয়ে দিয়েছে। আমি চিঠি পড়তে পারব কি না (মেয়ের ধারণা আমি বানান করে পড়তে পারব না), সে চিন্তাও সে করেছে।’

শিশুটি তার চিঠিতে লিখেছে :

‘৯/৪/২০২০

আব্বুজি
তুমি কেমন আছো? কতদিন হলো তুমি আসছো না। আমি কার সাথে খেলা কোরবো? আম্মু বোলেছে করোনা কে তুমি ঢিসুম দিতে হাসপাতালে গিয়েছো। করোনাকে মেরে দিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এসো। তুমি বোকা ছেলে। (…) ’

এই চিকিৎসক মেয়ের চিঠি পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার দাঁত ব্রাশ করার ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘বাসা থেকে বের হয়েছি গত মাসের ২২ তারিখ। আজ অবধি মেয়েটাকে একটু আদর করতে পারছি না। অথচ তার সাথে খুনসুটি না হলে আমার ঘুমই আসত না। দাঁত ব্রাশের ছবি কেন দিলাম? গত দুদিন আগে আমাকে ভিডিও কল দিয়ে বলছে…আব্বু তুমি আমার সাথে দাঁত ব্রাশ কর, তাহলে আমার মনে হবে তুমি আমার পাশেই আছ। তখন বাজে রাত ১২টা, আর আমার মনের অবস্থা কয়টা বাজে হতে পারে?…তার কণ্ঠে যখন বোকা ছেলে শব্দটা শুনি, আমার তখন মাকে খুব মনে পড়ে। কাল ডিউটিরত অবস্থায় চিঠি পাওয়ার পর আমার মনোযোগ হারাচ্ছিলাম বারবার। আবার ফোনে শাসন…চিঠি (হার্ড কপি) খোকন আংকেল কে দিয়ে পাঠিয়ে দিলাম, এই বোকা ছেলে তাড়াতাড়ি উত্তর দিবে কিন্তু। আমি ভাষা খুঁজে পাইনি বলে উত্তর দিতে পারিনি…জানিনা মা কবে করোনাকে মেরে আমরা তোমার কাছে ফিরতে পারব।’ এই চিকিৎসক বলেন, ‘আমি হাসপাতালের এমন জায়গায় কাজ করছি, যেখানে সব ধরনের রোগীকে দেখতে হচ্ছে। তাই মেয়ে ও অন্যদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করেই ঢাকায় আমার পরিবার থেকে দূরে থাকছি। বোনের বাসায় সম্পূর্ণ আলাদাভাবে থাকার সুযোগ পাচ্ছি। হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি না। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো রোগীরা করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকার পরও তথ্য গোপন করছেন। নিজের মনের সন্দেহ থেকে আমি নিজে আক্রান্ত কি না, তা একবার পরীক্ষা করেছি। ১৩ এপ্রিল এক নারী রোগী ও তার পরিবার দীর্ঘক্ষণ তথ্য গোপন করে পরে স্বীকার করেন করোনার উপসর্গের কথা। আর ততক্ষণে ওই কক্ষের কয়েকজন ওই রোগীর কাগজপত্র দেখাসহ বিভিন্নভাবে সংস্পর্শে এসে গেছেন। তাই ওই কক্ষের সংশ্লিষ্টদের আবার পরীক্ষার পালা, করোনা নেগেটিভ হলে তো কথাই নেই, আর পজিটিভ হলে…।’ এই চিকিৎসক ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) প্রসঙ্গে বলেন, উন্নত দেশেও পিপিইসহ সব প্রস্তুতি নিয়ে রোগী দেখার পরও চিকিৎসকেরা আক্রান্ত হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন। পিপিইতে শতভাগ নিরাপদ থাকা যাবে, তা বলার উপায় নেই। তাই রোগীর তথ্য আগেই জানা থাকলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা সম্ভব। আর এতে রোগীর পরিবার, আশপাশের স্বজনও নিরাপদ থাকতে পারবেন। মেয়ের কথা বলতে গিয়ে চিকিৎসক বললেন, ‘মেয়ে যখন ভালোভাবে হাঁটতে শেখেনি, তখনই কলিংবেলের শব্দ শুনে যেভাবেই হোক লুঙ্গি নিয়ে দরজার কাছে চলে আসত। বুঝতেই পারছেন মেয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কেমন। শুধু আমি কেন, প্রায় সব বাবার সঙ্গেই সন্তানের এমন সম্পর্ক থাকে। মেয়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা হয় প্রতিদিন। কিন্তু মেয়েকে কাছে নিয়ে আদর করতে পারছি না। মেয়ের চিঠি পাওয়ার পর আমি সেদিন রাতে ঘুমাতে পারিনি।’ এই চিকিৎসক বললেন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে তথ্য গোপন করছেন বলেই অন্যরা দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নির্দেশনা মেনে সতর্ক থাকলে এ ভাইরাস মোকাবিলা করা সহজ হবে। আর আক্রান্ত মানেই তো মারা যাবেন বা সব শেষ তা নয়। তাই নিয়ম মানাটা জরুরি।