আজকের দিন তারিখ ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সারাদেশ ঝালকাঠিতে লাশের মিছিল: তদন্ত কমিটি গঠন

ঝালকাঠিতে লাশের মিছিল: তদন্ত কমিটি গঠন


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ২২, ২০২৩ , ৬:৪৩ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ


বরিশাল অফিস : বরিশাল-খুলনা মহাসড়কের ঝালকাঠি সদর উপজেলার ছত্রকান্দা এলাকার গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের পাশে বাসার স্মৃতি নামের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে যায়। এ ঘটনায় হুহু করে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এ পর্যন্ত সেখান থেকে ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাণহানি আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল এখন যেন লাশের মিছিলে পরিণত হয়েছে। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে সদর হাসপাতালসহ আশপাশ এলাকাসমূহ। এছাড়া এ ঘটনায় ৩০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। নিমজ্জিত গাড়িটি রেকার দিয়ে উপরে তুলেছে জেলা পুলিশের উদ্ধারকারী একটি টিম। উদ্ধার অভিযানে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিটসহ র‌্যাব, পুলিশ প্রশাসন, রেড ক্রিসেন্ট এবং ও স্থানীয়রা। এদিকে এ ঘটনায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন। এছাড়া বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নিহতদের মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম ও জেলার সিভিল সার্জন এইচ এম জহিরুল ইসলাম।
স্থানীয়রা ও পুলিশ জানায়, বাশার স্মৃতি পরিবহন (ঢাকা মেট্রো-ব, ১৪-৬৫৪৯) নামে যাত্রীবাহী বাসটি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। শনিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার ছত্রকান্দা এলাকার গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের পাশে বাসটি উল্টে পুকুরে পড়ে যায়। বাসে আনুমানিক যাত্রী ছিল ৫০-৬০ জন। এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৮ জন নারী, ৬ জন পুরুষ ও ৩ জন শিশু। এদিকে উদ্ধার কাজ চলায় দুর্ঘটনার পর থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তিন ঘন্টা রাজাপুর-ঝালকাঠি আঞ্চলিক মহাসড়কের যানচলাচল বন্ধ ছিল। প্রায় ৬ কিলোমিটার লাইনে সারি বেঁধে দাড়িঁয়ে ছিলো কয়েক শতাধিক গাড়ি। ফায়ার সার্ভিসের ঝালকাঠির ষ্টেশন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ৭ ইউনিট উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছে। নিমজ্জিত গাড়িটি উপরে তোলা হয়েছে গাড়ির মধ্যে আর কোনো যাত্রী নেই। তবে পুকুরের মধ্যে কোন যাত্রী আছে কিনা তা খুজতে আমরা ৩ টি পাম্প দিয়ে পানি অপসারন করতেছি। পানির সেচ শেষ হলে বলা যাবে আর কোনো মরদেহ আছে কিনা। হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া আহতরা জানান, কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের পুকুরে পড়ে যায়। তবে মাঝপথে যাত্রী তোলার কারণে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগে। এ জন্য বাসটি বেপরোয়া গতিতে চালানো হচ্ছিল। এদিকে হাসপাতালে আহাজারী করছেন নিহতদের স্ব^জনরা। তাদের সান্তনা দিতে এবং আহতদের খোজ নিতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন হাসপাতালে ছুটে যান। ঝালকাঠি থানার ওসি নাসির উদ্দিন সরকার জানান, ঝালকাঠির ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাসের ভেতর থেকে যাত্রীদের উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে শিশুসহ ১৭ জনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক আবুয়াল হাসান। দুর্ঘটনায় আরো ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা।  ওসি জানিয়েছেন, নিহত ১৭ জনের মধ্যে ১৩ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। এরা হলেন- ভান্ডারিয়ার রাবেয়া (৮০) মো. ছালাম (৬০), সুমাইয়া (৬), তারেক (৪৫), মো. শাহিন (২৫), রহিমা বেগম (৬০) ও আবুল কালাম, চর বোয়ালিয়ার আব্দুল্লাহ (৮), মেহেন্দিগঞ্জের রিপা মনি (২) ও আইরিন আহমেদ (২০) এবং রাজাপুরের নয়ন (১৬), খুশবু (১৯) ও খাদিজা বেগম (৫৫)।
ঝালকাঠিতে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন নিহত হন। নিহতরা হলেন ২০ বছর বয়সী আইরিন আক্তার, ১৬ বছর বয়সী মো. নয়ন এবং ১৮ মাস বয়সী শিশু রিপা মনি। এদের মধ্যে আইরিন ও নয়ন সম্পর্কে ভাই-বোন। আর শিশু রিপা আইরিনের মেয়ে। আইরিনের স্বজনরা জানান, আইরিন তার ছোট্ট শিশুকে নিয়ে গত এক মাস যাবত রাজাপুর উপজেলার বলাইবাড়ি নামক গ্রামে বাবার বাড়িতে ছিলেন। তার স্বামী রিপন হাওলাদার পেশায় ট্রলারচালক। তার স্বামীর বাড়ি বরিশালের হিজলা এলাকায়। শুক্রবার স্ত্রী আইরিনকে ১৮ মাসের শিশু রিপাকে নিয়ে বাড়িতে আসতে বলেন রিপন। স্বামীর বাড়ি ফেরার পথে বাস দুর্ঘটনায় তিনজনই নিহত হন।
এদিকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আল মামুন (৩৯) ও তার স্ত্রী শিল্পী বেগম (২৫)। তারা একই পরিবারের ৪ সদস্য ডাক্তার দেখানোর জন্য ওই বাসে বরিশালে আসছিলেন। মামুন ও শিল্পী আহত হলেও মামুনের মা রহিমা বেগম ও তার স্ত্রীর বড় ভাই কালাম হোসেন মারা গেছেন। মামুনের স্বজন ইয়াসমিন জানান, নিহত রহিমা বেগমের চিকিৎসা করাতে বরিশাল আসার পথে তার পরিবারের দুই সদস্য মারা গেছেন। দুইজনকে শেবাচিতে ভর্তি করা হয়েছে। শেবাচিম হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মফিজুল ইসলাম জানান, মামুন তার হাতে, ঘাড়ে, মাথায় আঘাত পেয়েছেন। শিল্পী কোথাও আঘাতপ্রাপ্ত না হলে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এছাড়া আট বছরের ছেলে নাইমকে ডাক্তার দেখাতে বরিশালের বাসে উঠেছিলেন পিরোজপুরের দক্ষিণ ভান্ডারিয়ার বাসিন্দা তারেক (৪০)। ভান্ডারিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে সকাল ৯টায় বাশার স্মৃতি পরিবহন নামের বাসটির যাত্রী হন তারা। এদের মধ্যে তারেক মারা গেলেও শিশু নাইমকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।