আজকের দিন তারিখ ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার, ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অন্যান্য দিন দিন পর্যটক হারাচ্ছে বকশীগঞ্জ লাউচাপড়া অবসর বিনোদন কেন্দ্র

দিন দিন পর্যটক হারাচ্ছে বকশীগঞ্জ লাউচাপড়া অবসর বিনোদন কেন্দ্র


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ২৭, ২০২৩ , ৪:৪৮ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অন্যান্য


বকশীগঞ্জ প্রতিনিধি : ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গারো পাহাড়ের সারি আর বনভূমি। ১৯৯৬ সালে উপজেলার ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নের লাউচাপড়ায়, লাউচাপড়া অবসর বিনোদন কেন্দ্রটি গড়ে তোলে জামালপুর জেলা পরিষদ। প্রতি বছর লাউচাপড়া অবসর বিনোদন কেন্দ্রে সমাগম ঘটে ভ্রমণ পিয়াসীদের। তবে দিন দিন পর্যটক হারাচ্ছে এই বিনোদন কেন্দ্রটি। পর্যটকরা বলছেন- বিশাল এই পর্যটন কেন্দ্রে রয়েছে শুধু মাত্র দুইটি ওয়াচ টাওয়ার ও একটি কৃত্রিম লেক। এখানে অভাব রয়েছে বিশুদ্ধ পানির, ক্যান্টিন, মসজিদ ও আধুনিক শেয়ার রাইডার। তাই দিন দিন পর্যটক কমছে এই বিনোদন কেন্দ্রটিতে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিনোদন কেন্দ্রের ইজারাদাররা। ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থেকে বেড়াতে আসা নাঈম ইসলাম বলেন- এত বড় বিশাল পর্যটন কেন্দ্রে কোনো কিছুই নেই। শুধু মাত্র দুইটি টাওয়ার আছে। কোনো কিছু না থাকার কারণে পর্যটক আসতে চায় না। সরকার এই পর্যটন কেন্দ্রের প্রতি সুনজর দিলে আমাদের সকলের জন্যে সুবিধা হতো। টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলা থেকে ঘুরতে আসা সাহেলা বেগম বলেন-এখানে শুধু একটা পাহাড়, পাহাড়ের উপর থেকে আসার পরে দেখার আর কিছু নাই। আর এখানে খাবারের পরিবেশটা ভালো না। যদি এই রিসোর্টে খাবারের একটি ক্যান্টিনের ব্যবস্থা থাকতো, সুন্দর হতো। তাহলে আমাদের ঘুরতে আরো ভালো লাগতো জামালপুর শহর থেকে আসা শাওন মোল্লা নামে একজন বলেন- এখানে যদি ভালো একটা নলক‚পের ব্যবস্থা থাকতো, একটা মসজিদ থাকতো তাহলে আমাদের খাবারের পানির সমস্যা থাকতো না। নামাজের সময় নামাজ পরতে পারতাম। এগুলার ঘাটতি আছে এখানে। স্থানীয়রা বলছেন- কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে দীর্ঘদিন যাবত উন্নয়ন না হওয়ায় দিন দিন পর্যটক শূন্য হয়ে পড়ছে এই বিনোদন কেন্দ্রটি। লাউচাপড়ার বাসিন্দা রাত্রি বলেন- “আমাদের লাউচাপড়া বিনোদন কেন্দ্র দীর্ঘ দুই যুগ ধরে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এই জায়গায় কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এবং বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং, শিশু পার্ক না থাকার কারণে এবং লাউচাপড়া পর্যবেক্ষণ না করার কারণে দিন দিন পর্যটক শূণ্য হয়ে যাচ্ছে। পর্যটক না থাকায় প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় ব্যবসায়ী ফারুক মিয়া বলেন-এখন লোকজন না আসলে ব্যবসা আমরা কেমনে করবো? এখন ব্যবসায় লাল বাতি জ্বলছে। মনে করেন- আগে বিক্রি করেছি ৫-১০ হাজার টাকা দৈনিক। আর এখন বিক্রি করছি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। কোনো দিন ৫০০ টাকাও বিক্রি হয় না।
আরেক ব্যবসায়ী হোসেন আলী বলেন-পর্যটক আসে না তাই ব্যবসা একদম কম। ঘর ভাড়াই দিতে পারে না ব্যবসায়ীরা। এইভাবে চলতে থাকলে এখান থেকে ব্যবসা গুটিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না আমরা। এই বিনোদন কেন্দ্রে পর্যটক বাড়াতে হলে প্রয়োজন ঝুলন্ত ব্রীজ, বিভিন্ন রাইডারসহ বিনোদনের সকল ব্যবস্থা। এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় বাসিন্দা জয় দাংগো বলেন- “আমাদের স্পটে একটা ঝুলন্ত ব্রীজ করার কথা। যদি সেটাও হয়তো তাহলে দর্শনার্থীরা আমাদের স্পটে আসতো। আর এখানে বড় ধরনের শাপলা, চিড়িয়াখানা গড়ে তোলা হলে আমাদের স্পটে লোক আসতো।
লাউচাপড়া অবসর বিনোদন কেন্দ্রের ইজারাদারদের একজন ছামিউল মিয়া বলেন-আমরা ২৩ লাখ টাকা দিয়ে এবার বিনোদন কেন্দ্রটি ডেকে নিয়েছি। দিন দিন পর্যটক খুব কম আসছে। এবার কমপক্ষে ৭-৮ লাখ টাকা লস হবে আমাদের। গতবারও আমরা কয়েক লাখ টাকা লস খেয়েছি। এভাবে চলতে থাকলে আমরা আর কোনো বিনোদন কেন্দ্র ডেকে নিব না। তবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এসব বিষয়ে জামালপুর জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন মুন জাহান লিজা বলেন- “লাউচাপড়ার অবসর বিনোদন কেন্দ্র নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এখানে অর্থ প্রাপ্তির বিষয় রয়েছে। বরাদ্দের বিষয় রয়েছে। আমরা সামনে ইনশাল্লাহ এটার উন্নয়ন করবো। বিনোদন প্রেমীদের দাবি বকশীগঞ্জ লাউচাপড়া অবসর বিনোদন কেন্দ্রটি দর্শকদের জন্য বিনোদনের সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। যত দ্রুত এটিকে দর্শকবান্ধব করে তোলা যাবে ততই ভালো। এতে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব বাড়বে অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঘুরতে আসা মানুষও বিনোদন কেন্দ্রটি ঘুরে আনন্দ পাবে।