দুই পুঁজিবাজারে দেশে-বিদেশে ২৮ ডিজিটাল বুথের অনুমোদন
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ২৬, ২০২১ , ১২:২০ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য
দিনের শেষে প্রতিবেদক : দেশের দুই পুঁজিবাজারও ডিজিটালাইজেশন করার চেষ্টা করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এরই ধারাবাহিকতায় পুঁজিজারের পরিধি বাড়ানো ও বিনিয়োগ আকৃষ্টে দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশে ‘ডিজিটাল বুথ’খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। তারই ধারাহিকতায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে, সক্ষমতা যাচাই সাপেক্ষে দেশে ও বিদেশে ডিজিটাল বুথ খোলার অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যভুক্ত ১০টি ব্রোকারেজ হাউজকে এই পর্যন্ত মোট ২৮টি ডিজিটাল বুথ খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশে ২টি ও দেশের অভ্যন্তরে ২৬টি ডিজিটাল বুথ রয়েছে বলে বিএসইসি জানিয়েছে।
ডিজিটাল বুথ খোলার অনুমোদন পাওয়া ব্রোকারেজ হাউজগুলো হলো—আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ, ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ, পদ্মা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড, বি রিচ, কবির সিকিউরিটিজ, রয়েল ক্যাপিটাল, গ্রিন ডেলটা সিকিউরিটিজ, ফখরুল ইসলাম সিকিউরিটিজ এবং স্কয়ার সিকিউরিটিজ লিমিটেড।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, ডিজিটাল বুথ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং বিদেশে খোলার ফলে স্থানীয়, প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়বে। পুঁজিবাজার সম্পর্কে গ্রামগঞ্জের মানুষও জানতে পারবে। এতে সকল শ্রেণীর মানুষ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। এতে করে পুঁজিবাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সর্বোপরি নিবাসী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বাড়লে পুঁজিবাজার আরও উন্নত হবে। অনুমোদন পাওয়া ডিজিটাল বুথগুলোর মধ্যে আইল্যান্ড সিকিউরিটিজের ১০টি, ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজের ৫টি, পদ্মা ব্যাংক সিকিউরিটিজের ১টি, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানির ১টি, বি রিচ এর ৩টি, কবির সিকিউরিটিজের ২টি, রয়েল ক্যাপিটালের ১টি, গ্রিন ডেলটা সিকিউরিটিজের ১টি, ফখরুল ইসলাম সিকিউরিটিজের ১টি এবং স্কয়ার সিকিউরিটিজের ১টি। ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডিজিটাল বুথ খোলার অনুমোদন পেয়েছে আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ। প্রতিষ্ঠানটি মোট ১০টি ডিজিটাল বুথের অনুমোদন পেয়েছে। এই ১০টি বুথের মধ্যে ভোলায় ১টি, রাঙামাটিতে ১টি, সাতক্ষীরায় ১টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১টি, হাজীগঞ্জে ১টি, সিরাজগঞ্জে ২টি, ফটিকছড়িতে ১টি, কক্সবাজারে ১টি এবং লক্ষীপুরে ১টি ডিজিটাল বুথ খুলবে। ডিজিটাল বুথ খোলায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ। প্রতিষ্ঠানটি মোট ৫টি বুথ খোলার অনুমোতি পেয়েছে। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত দুবাই ১টি, চট্টগামের খাতুনগঞ্জে ২টি, খুলনায় ১টি এবং বরিশালে ১টি।
ইউনাইটেড ফাইন্যান্স অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানি ও বি রিচ কোম্পানি ৩টি করে বুথ খোলার অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে ইউনাইটেড ফাইন্যান্স অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানি দেশের অভ্যন্তরে রংপুর, সিরাজগঞ্জ ও গাজীপুরে এই বুথ খোলার অনুমোদন পেয়েছে। আর বি রিচ চট্টগ্রামের সন্দীপ, নোয়াখালীর সুন্দরপুর ও সিলেটের দক্ষিণ ধোপার দিঘীর পাড়ে ডিজিটাল বুথ খুলবে। এছাড়া, কবির সিকিউরিটিজ চট্টগ্রামের নাজির হাট ও খাতুগঞ্জে ২ টি; রয়েল ক্যাপিটাল কক্সবাজারের ঝিলংজায়, গ্রিনডেল্টা সিকিউরিটিজ ঢাকার ধানমন্ডিতে এবং পদ্মা ব্যাংক সিকিউরিটিজ কানাডার টরেনটোতে, ফখরুল ইসলাম সিকিউরিটিজ সিলেটের বিয়ানী বাজারে, স্কয়ার সিকিউরিটিজ ইশ্বরদিতে ১টি করে ডিজিটাল বুথ খোলার অনুমোদন পেয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে আইল্যান্ড সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন শেয়ারনিউজকে বলেন, ‘ভোলা, রাঙামাটি, ফটিকছড়ি ও কক্সবাজারে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের আওতাভুক্ত ডিজিটাল বুথ আমরা চালু করেছি। এসব এলাকায় ডিজিটাল বুথ হওয়ার ফলে নতুন নতুন বিনিয়োগকারী বাড়ছে। আমরা ভালো করতে পারবো বলে বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, বিএসইসি ডিজিটাল বুথ অনুমোদন দিলেও স্টক এক্সচেঞ্জগুলো দ্রত সময়ের মধ্যে বাকি কাজ সম্পুর্ণ করে আমাদেরকে ট্রেডিংয়ের অনুমোদি দিতে পারছে না। স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে পযাপ্ত পরিমাণ লোকবল না থাকার কারণে এমনটা হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে ছাড় পেলে সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চাঁদপুরের হাজিগঞ্জ ও সিরাজঞ্জের উল্লাপাড়ায় শিগগিরই ডিজিটাল বুথ চালু করা হবে। এছাড়া লক্ষীপুর, ঝিনাইদহ ও সিরাজগঞ্জ সদরে ডিজিটাল বুথ খোলার জন্য অনুমতি পেয়েছি।
স্কয়ার সিকিউরিটিজের সিইও আবুল কালাম আজাদ শেয়ারনিউজকে বলেন, ‘স্কয়ার সিকিউরিটিজ প্রথমবারের মতো ডিজিটাল বুথের অনুমোদন পাওয়ায় অনেক ভালো লাগছে। এই প্রক্রিয়া পুঁজিবাজারকে আরও বেশি এগিয়ে নিতে অনেক বেশি সহায়তা করবে। যদি এই বুথের মাধ্যমে আমরা ভালো সাড়া পাই তাহলে আরও বুথের জন্য আবেদন করবো।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম স্বাক্ষরিত ডিজিটাল বুথ খোলার নির্দেশনায় উল্লেখ করেন, স্টক এক্সচেঞ্জের সম্মতিক্রমে যেকোনো স্টক ব্রোকার ডিজিটাল বুথের জন্য কমিশনে আবেদন করতে পারবে। সিটি করপোরেশনের মধ্যে, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়াও দেশের বাইরেও ডিজিটাল বুথ স্থাপন করা যাবে। তবে ওই বুথ স্টক ব্রোকারের প্রধান অফিস দ্ধারা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোনো ধরনের তৃতীয়পক্ষ দ্ধারা পরিচালনা করা যাবে না।
ডিজিটাল বুথ পরিচালনার জন্য স্টক ব্রোকারের প্রয়োজনীয় কাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা, আর্থিক সক্ষমতা ও জনবল থাকতে হবে। দেশের ভেতরে প্রতিটি বুথ খোলার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জে ১ লাখ টাকা জমা দিতে হবে। দেশের বাইরে খুলতে হলে জমা দিতে হবে ১০ লাখ টাকা। বুথ চালু করতে চাওয়া ব্রোকার হাউজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইট থাকতে হবে। এছাড়া, প্রতিটি বুথে কাস্টমার সার্ভিসের জন্য একটি ফোন নম্বর, নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক সুবিধা, কমপক্ষে একজন অনুমোদিত প্রতিনিধি, ভার্চুয়াল ট্রেডিং মনিটর বা ডিসপ্লেটিকার ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ব্যবস্থা থাকতে হবে। আর বুথের সামনে সাইনবোর্ড থাকবে, যেখানে স্টক ব্রোকারের নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, লোকাল এড্রেসের বিস্তারিত তথ্য, যোগাযোগ নম্বর ও মেইল এড্রেস থাকবে। বিদেশে বুথ খোলার সেক্ষেত্রে ব্রোকারকে নন-জুডিশিয়াল ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে অমীমাংসিত দাবি, বৈধ দাবি বা অপরিশোধিত দাবির ক্ষেত্রে তারা এককভাবে দায়বদ্ধ থাকবে বলে লিখিত দিতে হবে। ব্রোকার হাউজের পর্ষদ মনোনীত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা যেকোনো শীর্ষ কর্মকর্তা বা পরিচালকের স্বাক্ষর সেই স্ট্যাম্পে থাকতে হবে। এছাড়া প্রতিটি বুথে অ্যাকাউন্ট খোলা ও বন্ধ, ট্রেডিং, ইত্যাদি সীমাবদ্ধ হবে। যেখানে একজন গ্রাহক প্রতিদিন গ্রামীণ এলাকায় নগদে ২ লাখ টাকা এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে ৮.৭৫ লাখ লেনদেন করতে পারবেন। বুথ থেকে গুজব ছাড়ানো প্রতিরোধে ব্রোকার হাউজ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আঞ্চলিক পর্যায়ে বুথের ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করার আগে এক বা একাধিক বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম করতে হবে।