নতুন নার্স পদায়নে দুর্নীতি অনিয়ম
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ২০, ২০২০ , ৮:৪০ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়
দিনের শেষে প্রতিবেদক : কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবার জন্য পদায়ন করা হচ্ছে না নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত নার্সদের। তাদের আগে সৃষ্ট শূন্যপদে পোস্টিং দেয়া হচ্ছে। অথচ করোনারোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৫ হাজার ৫৪ নার্স নিয়োগ দেয়া হয়। এখন তাদের অনেকেই কোভিড ডেডিকেটেট হাসপাতালে যেতে চাচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের পছন্দমতো পদায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ের একটা অসাধু চক্র আর্থিক দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে। নার্সিং নেতাদের কাছেও এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন বেতনের সুবিধার্থে তাদের আগে সৃষ্ট পদে পদায়ন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, কোভিড-১৯ বিশেষায়িত হাসপাতাল বাদ দিয়ে নতুনদের অন্য হাসপাতালে পদায়ন করায় আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। তবে এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না কেউ। পাশাপাশি বিশেষায়িত হাসপাতাল বাদে অন্য হাসপাতালেও নতুন নার্স পদায়ন করায় করোনা রোগীরা পর্যাপ্ত সেবা পাবেন কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। এর সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নার্স সংগঠনের কতিপয় অসাধু নেতা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের অনেককেই এমন হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে যেখানে করোনা ইউনিট এখনও চালু হয়নি, ভবিষ্যতে হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাবনা মানসিক হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার হাসপাতাল। এসব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে করোনা ইউনিট নেই। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৭ মে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দেশের বিভিন্ন ডেডিকেডেট কোভিড-১৯ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে ৫ হাজার ৫৪ জন নার্সকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। নিয়োগপ্রাপ্তরা সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে ১৩ মে থেকে তাদের কর্মস্থলে যোগদান করবেন। ২৫ এপ্রিল করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন বরাবর ২ হাজার চিকিৎসক ও ৬ হাজার নার্স নিয়োগের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ কর্ম কমিশন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশকৃত নার্সের তালিকা থেকে ৫ হাজার ৫৪ জন নার্সকে সাময়িকভাবে পদায়ন করা হয়েছে। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পছন্দমতো স্থানে পদায়ন করিয়েছে এমন কয়েকজন জানান, অনেক নার্স করোনা হাসপাতালে কাজ করতে ভয় পান। এমন কথা নার্সিং বিভাগের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ায় একশ্রেণির নার্সিং নেতা এই সুযোগ নেয়। তারা মন্ত্রণালয়ের ওই দুষ্টচক্রের যোগসাজশে পছন্দমতো পদায়নের নিশ্চয়তা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগপ্রাপ্ত নার্সরা পছন্দের হাসপাতালে পদায়ন পেতে ৪০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ দিয়েছেন। এরা স্বামী বা স্ত্রীর কর্মস্থল, নিজ বাসস্থানসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় হাসপাতাল পছন্দ করে সেখানে পদায়ন নিয়েছেন অর্থের বিনিময়ে। এমনকি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে যেন পদায়ন না হয়, এজন্য অন্য জেলায়ও পদায়ন করিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, ডিজাস্টার নার্সিং অ্যাসোসিয়েশন আহ্বায়ক এবং মহাখালী নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ মো. মফিজউল্লাহ বলেন, নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে আমি শুনেছি কিন্তু কোনো লিখিত অভিযোগ এখনও আসেনি। তিনি বলেন, নার্সিং সেক্টর বরাবরই দুর্নীতির আড্ডাখানা। এখানে ঘুষের টাকা জোগাতে নিজের বাড়ি, গরু, জমি বিক্রি করে থাকে। কিন্তু কোনো লিখিত অভিযোগ করতে বললেও ভয়ে করে না। ফলে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের সভাপতি ইকবাল হাসান সবুজ যুগান্তরকে বলেন, তিনিও বিষয়টি জেনেছেন। সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (নার্সিং) ডা. শিব্বির আহমেদ ওসমানী যুগান্তরকে বলেন, নার্স পদায়নে অর্থিক অনিয়মের বিষয়টি তিনি এখনও জানেন না। তবে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে পদায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূলত নার্সদের বেতনের সুবিধার্থে তাদের যেসব হাসপাতালে পদ খালি ছিল, সেখনে পদায়ন করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে কোনো কোভিড হাসপাতালে নার্স প্রয়োজন হলে সেখানে সংযুক্তিতে পাঠানো হবে।