দিনের শেষে প্রতিবেদক : আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের নতুন বাজেটে কালোটাকা সাদা করার বড় ধরনের সুযোগ দেওয়া হতে পারে। করোনা পরিস্থিতিতে রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আপাতত কালোটাকা সাদা করার দুটি উপায় চিন্তা করা হচ্ছে। প্রথমত, ঢালাওভাবে বিনা প্রশ্নে সাদা করার সুযোগ। সে ক্ষেত্রে ৫-১০ শতাংশ কর দিয়ে অবৈধ উপায়ে উপার্জিত টাকা ঘোষণায় আনলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না। সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এমন সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। আরেকটি উপায় হলো, বিদ্যমান কালোটাকা সাদা করার সুবিধা সম্প্রসারণ করা। বর্তমানে এলাকাভেদে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে কালোটাকায় ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ আছে। রাজধানী, চট্টগ্রাম, জেলা শহর, পৌর এলাকাভেদে কালোটাকায় ফ্ল্যাট কিনে বর্গমিটারপ্রতি ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কর দিলে কোনো প্রশ্ন করছে না এনবিআর। আগামী অর্থবছরে করের পরিমাণ কমিয়ে জমি কেনায়ও কালোটাকা ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হতে পারে। বিনিয়োগ চাঙা করতে চলতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ আছে। সেখানে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকৃত অর্থের ১০ শতাংশ কর দিলেই এখন প্রশ্ন করে না এনবিআর। ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত এই সুযোগ আছে। আগামী অর্থবছরের জন্য এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগের নতুন খাত যুক্ত করা হতে পারে। যেমন কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, বড় অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদি। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে কোন পদ্ধতিতে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হবে, তা চূড়ান্ত করা হবে এনবিআরের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার পক্ষে নন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘ডুবন্ত মানুষ যেখানে তৃণখণ্ড ধরে বাঁচার চেষ্টা করে, এনবিআর সেই চেষ্টা করছে। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে অতীতে কখনো খুব বেশি রাজস্ব পায়নি। আগামীতেও পাবে না।’ তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার যুক্তি দেখানো হয়। অতীতে কতজন শিল্প–উদ্যোক্তা কালোটাকা দিয়ে শিল্প করেছেন? এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত কেউ হাইটেক পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে কালোটাকা বিনিয়োগ করেনি। গত এক বছরে কালোটাকায় ফ্ল্যাট কেনায়ও তেমন সাড়া নেই বললেই চলে। এই সংখ্যা এক শর মতো। এ পর্যন্ত দেশে ১৬ বার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি টাকা সাদা হয়েছে ২০০৭ ও ২০০৮ সালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ওই সময় ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ নিয়েছিল। তখন ৯ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা বৈধ করা হয়।
বাজেটে আরও যা থাকতে পারে : ঈদের আগে বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থমন্ত্রী ও এনবিআরের কর্মকর্তাদের এক দফা বৈঠক হয়েছে। সেখানে আগামী বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। বাজেট প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত করার জন্য আগামী সপ্তাহে আবারও এমন বৈঠক হতে পারে। জানা গেছে, আগামী বাজেটে শুল্ক-কর ছাড়ের ক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রান্তিক করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমানে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ে কোনো কর দিতে হয় না। এই সীমা বাড়িয়ে পৌনে তিন লাখ টাকা করা হবে নাকি তিন লাখ টাকা করা হবে, তা আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত হবে। সর্বনিম্ন করহার ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। এ ছাড়া করপোরেট কর কমানোর দাবি বিভিন্ন মহল থেকে উঠেছে। করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসা–বাণিজ্য শ্লথ থাকায় রাজস্ব আহরণের স্বার্থে এখন পর্যন্ত এনবিআর করপোরেট কর না কমানোর পক্ষে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক শুল্ক-কর ছাড় দেওয়া হবে। করদাতার চিকিৎসা ভাতায় কর ছাড় মিলবে। বর্তমানে মূল বেতনের ১০ শতাংশ পর্যন্ত বা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয়ের ক্ষেত্রে করমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায়। এটি দ্বিগুণ করা হতে পারে। এ ছাড়া মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে আরোপিত ৫ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার হতে পারে। তৈরি পোশাকসহ সব রপ্তানি খাতের উৎসে কর দশমিক ২৫ শতাংশ আগামী অথর্বছরেও অব্যাহত রাখা হচ্ছে। টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতিতে শুল্ক-করে ছাড়েরও চিন্তা করা হচ্ছে। ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়বে। করদাতার চিকিৎসা ভাতায় কর ছাড় মিলতে পারে। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম কর প্রত্যাহার হতে পারে। ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী আমদানিতে আগামী এক বছর সব ধরনের শুল্ক-কর অব্যাহতির ঘোষণা থাকবে।