নদ-নদী রক্ষায় সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২১ , ১:৫০ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
নদীমাতৃক দেশের ইতিহাস ক্রমশ ম্লান হতে যাচ্ছে। দেশের নদীগুলোর অবস্থা যে শোচনীয় তা নদীর সার্বিক চিত্র পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায়। এর পেছনে দখলদারিত্ব থেকে শুরু করে নানা অনিয়ম জড়িত। বিশেষ করে ঢাকার চারপাশের শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু এই চার নদীর দিকে তাকালে স্পষ্ট হয়ে ওঠে দখল ও দূষণের মহোৎসব। ভ‚মিদস্যুদের দখলবাজি, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নির্লিপ্ততা এবং নাগরিক সচেতনতার অভাবে নদীগুলোতে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে পরিবেশবিদরা অভিযোগ করছেন। গতকাল ভোরের কাগজের একটি প্রতিবেদনে বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল উদ্ধারে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও নদী রক্ষা কমিশনের সুপারিশ থাকলেও এ নিয়ে তৎপরতা নেই কোনো কর্তৃপক্ষের। গত ৭ বছরে কিছু চিঠি চালাচালি, কমিটি গঠন আর কয়েক দফা সরেজমিন পরিদর্শনের মধ্যেই সীমিত রয়েছে এর উদ্ধার কার্যক্রম। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এ নিয়ে একটি প্রকল্পের খসড়া করলেও তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকা ও আশপাশের নদী অবৈধ দখল এবং দূষণমুক্ত করতে উচ্চ আদালত কয়েকবার নির্দেশ দিয়েছেন; কিন্তু দখল বা দূষণ কোনোটাই বন্ধ হয়নি। কার্যকর হচ্ছে না সঠিক স্থানে সীমানা পিলার স্থাপন ও উচ্ছেদ অভিযান। ফলে ঢাকাকে ঘিরে থাকা চার নদীর অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত ১২ জানুয়ারি প্রকাশিত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনে বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল দখলের ভয়াবহ তথ্য উঠে আসে। সেখানেই বলা হয় চ্যানেলটিতে পানির প্রবাহ না থাকার কথা। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর সংলগ্ন চ্যানেলের অধিকাংশ জমি অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে এবং কয়েক হাজার স্থাপনা ও বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে আদি চ্যানেলটিতে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। নদী দখলের প্রতিযোগিতা শুধু বড় শহর-নগর-বন্দর-গঞ্জেই সীমাবদ্ধ নয়, দেশের সব শহরাঞ্চলেই তা ঘটছে। বুড়িগঙ্গা, কর্ণফুলী, সুরমা, কীর্তনখোলা, রূপসাসহ শহর তীরবর্তী প্রায় ১৭৪টি নদী এ আগ্রাসনে পড়েছে। কেবল নদী নয়, শহরের ভেতরের বা পাশের খালগুলোও অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। নদী থেকে ভ‚মি সৃষ্টির জন্য নেয়া হচ্ছে বিচিত্র সব কলাকৌশল। সৃষ্টি করা হচ্ছে কৃত্রিম চর। নদীগ্রাস আগামী দিনে পরিবেশসহ সার্বিক পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এভাবে নদী দখল ও দূষিত করে মানুষ পরিবেশের ক্ষতি তো করছেই, সেই সঙ্গে নিজেদের বিপদও ডেকে আনছে। একদিকে যেমন নদীগুলোকে মেরে ফেলা হচ্ছে অন্যদিকে বাংলাদেশও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে ক্রমাগত। নদী দখল ও দূষণের সঙ্গে সরকারেরই কোনো না কোনো প্রভাবশালী নেতাকর্মী জড়িত থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আমরা মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নদী নিয়ে যে সমস্যাগুলো আছে তা সমাধানে সরকারকে কাজ করতে হবে। কোনো রাজনৈতিক স্বার্থের কাছে নদীর যে কোনো ধরনের উন্নয়ন ব্যাহত হোক এমনটা প্রত্যাশিত নয়। কোনোভাবেই দেশের পরিবেশ, প্রতিবেশকে আর হুমকির মধ্যে ঠেলে দেয়া যাবে না। যেভাবেই হোক দ্রুত কাজ শুরু করে নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে।