নারায়ণগঞ্জে মানছে না লকডাউন : মানুষকে বোঝাতে বোঝাতে জেলা পুলিশের প্রায় ২৫ জনই আক্রান্ত
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ২৯, ২০২০ , ৬:২১ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : দেশে করোনাভাইরাসের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ জেলা নারায়ণগঞ্জে লকডাউনের বালাই নেই। যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে দেখা গিয়েছিল কঠোর ভূমিকায়, তারাও যেন হাল ছেড়ে দিয়েছেন গত ২ দিন ধরে। প্রধান সড়কে জনসমাগম ও যানবাহনের আধিক্য এতদিন একেবারেই ছিল না, গত ২দিন ধরে নগরীর সব রাস্তায় চলছে রিকশা, ইজ বাইকের রাজত্ব। এদিকে গত একমাস ধরে শীতলক্ষ্যা নদীর ও ওপারের বন্দর উপজেলা থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ অনেকটা লুকিয়ে নগরীতে প্রবেশ করলেও গত ২দিন ধরে দেখা যাচ্ছে তার উল্টো চিত্র। নৌকাবোঝাই মানুষ আর খেয়া ঘাটগুলোর চিত্র দেখে কোন ভাবেই বোঝার উপায় নেই এ জেলা মারণব্যাধী করোনাভাইরাসের হটস্পট। আর এই অঘোষিত লকডাউন উঠে যাওয়ার মূল কারণ গার্মেন্টস বা পোশাক কারখানা খুলে দেয়া। ফলে প্রতিদিন হাজারে হাজারে শ্রমিকের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এই সুযোগে তাদের কাজকর্ম ও ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করে দিয়েছেন। পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনও কঠোর সমালোচনা চলছে নারায়ণগঞ্জের সর্ব মহলে। সাধারন মানুষের মধ্যে এনিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা গেছে। এমনকি লকডাউন ভেঙে বেরিয়ে আসা লোকজনও গার্মেন্টস খুলে দেয়ার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, পোশাক কারখানা যেখানে খুলে দেয়া হয়েছে সেখানে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করার কী মানে আছে? মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ শহর ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য দিনের তুলনায় লোক সমাগম ব্যাপক। বিপুল পরিমান রিকশা আর ইজি বাইক (ব্যাটারী চালিত রিকশা) দাবড়ে বেড়াচ্ছে গোটা শহরজুড়ে। রাস্তার উপর ভ্যানগাড়িতে ফল বেচাকেনার হিড়িক। শহরের প্রাচীন দিগুবাবুর বাজারের কাঁচাবাজার জিমখানা মাঠে সরিয়ে নিলেও ভ্যানগাড়িতে বসেছে শাক সবজির পসরা। শহরের শেষ মাথায় বাজার স্থানান্তর করায় ওখানে যেতে আগ্রহ কম বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। এদিকে শহরের বেশ কিছু খাবারের দোকানও খোলা হচ্ছে দুপুর থেকে। ভোর থেকেই ফতুল্লার বিসিক নগরী, টাগারপাড়, মাসাদাইর, পুলিশ লাইনস, কুতুবপুর, সৈয়দপুর, ভোলাইল, সিদ্ধিরগঞ্জ ইপিজেড ও কাঁচপুর এলাকায় গার্মেন্ট শ্রমিকদের যাতায়াতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ছিল শত শত ইজিবাইক, ভ্যান গাড়ি ও রিকশা। একই অবস্থা সন্ধ্যা বেলায়ও দেখা গিয়েছে। এসব এলাকায় শ্রমিকরা কাজ শুরু করায় খুলে গেছে নিত্য পন্যের দোকানও। ফলে হাজার হাজার শ্রমিকদের পাশাপাশি এসব এলাকার মানুষজনও বেরিয়ে পরছেন কেনাকাটায়। নিট গার্মেন্ট মালিকদের সোমবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত দুইদিনে ১৫৮ কারখানা সীমিত আকারে খোলা হয়েছে।
এদিকে জেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা এব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে না চাইলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা আক্ষেপ নিয়ে জানান, লকডাউন বাস্তবায়ন আর মানুষকে বোঝাতে বোঝাতে জেলা পুলিশের প্রায় ২৫ জন করোনায় আক্রান্ত। র্যাবেরও আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ১৬ জন। ৩০ এর উপরে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিতরা আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু গার্মেন্টস খুলে দেয়ায় আমাদের এতদিনের কঠোর পরিশ্রম পণ্ডশ্রমে রূপ নিয়েছে। কাকেইবা আটকাবো আর কার সাথেই কঠোরতা দেখাবো। এব্যাপারে সদ্য করোনা থেকে সুস্থ্য হয়ে উঠা জেলা করোনা বিষয়ক কমিটির ফোকাল পার্সন ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, এদিকে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও মানুষের মধ্যে সচেতনতাবোধের অভাব লক্ষ্য করা গেছে। হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাটে মানুষ অপ্রয়োজনেও ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পাড়া-মহল্লাতেও মানুষকে আটকে রাখা যাচ্ছেনা। গত ১৫ দিনের হিসেবে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে তাতে আগামী ৫ মে পর্যন্ত সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি পর্যন্ত মানুষ লকডাউন না মানলে নারায়ণগঞ্জে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে কয়েকগুণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।