নিজেদের সুরক্ষায় লকডাউনে মৌলভীবাজারের জুড়ীর খাসিয়াপুঞ্জি
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ৫, ২০২০ , ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ
মৌলভীবাজার (জুড়ী) প্রতিনিধি : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেদের সুরক্ষায় মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার এলবিনটিলা খাসিয়াপুঞ্জির লোকজন লকডাউনে আছেন। এখানকার বাসিন্দারা বলেছেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা চলবে। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ছোট ছোট টিলাঘেরা এলবিনটিলা পুঞ্জি। সেখানকার প্রবেশ ফটকে তালা ঝুলছে। ভেতরে মাস্ক পরা এক ব্যক্তি দাঁড়ানো। গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় পেয়ে তালা খুলে দেন। পুঞ্জিতে টিলার ওপর খাসিয়াদের বসতি। নিচে চলাচলের আঁকাবাঁকা কাঁচা রাস্তাটি একেবারেই ফাঁকা। লোকজনের আনাগোনা, হই–হুল্লোড় নেই। গির্জা তালাবদ্ধ। মাস্ক পরে বাড়ির সামনের কুয়া থেকে পানি টেনে তুলছিলেন টুইংকেল সিমসাং নামের এক কিশোরী। সে নবম শ্রেণিতে পড়ে। টুইংকেল বলল, ‘এখন কঠিন অবস্থা। বাইরের কেউ তো ঢুকতে পারেন না। আপনারা ঢুকলেন কীভাবে?’ সে জানাল, করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনার পর থেকেই তাঁরা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা মেনে চলছেন। পাশের একটি বাড়ির উঠানে মাস্ক পরে ফুটবল খেলছিল তিন শিশু। ডিএসপি সামার নামের এক শিশু বলল, ‘বাইরে যেতে মানা। তাই এখানেই খেলি। হাত–মুখ সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে ঘরে ঢুকব।‘ মোহিনী সিমসাং নামের এক নারী পিঠে যন্ত্র বেঁধে টিলার ঢাল বেয়ে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছিলেন। কাজের ফাঁকে বললেন, ‘ভাইরাসটা থাকি নিরাপদ থাকতে হইব তো।‘ পুঞ্জির প্রধান অ্যান্থনি পাটোয়াট বলেন, তাদের পুঞ্জিতে ৫৫টি পরিবারের প্রায় ২৫০ জন লোকের বাস। খাসিয়াদের আয়ের উৎস পান চাষবাদ করে পাওয়া অর্থ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনার কথা জেনে ২৫ মার্চ পুঞ্জির লোকজন আলোচনা করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেন। ২৬ মার্চ থেকে এ অবস্থা চলছে। আগে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন পাইকারেরা পান কিনতে পুঞ্জিতে আসতেন। সবাইকে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতি সপ্তাহের রোববার গির্জায় প্রার্থনা হতো। জনসমাগম ঠেকাতে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশের ফুলতলা বাজার থেকে তাঁরা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে আনেন। ফেরার সময় ফটকের কাছে পাওয়া গেল রাসেল মিয়া নামে পানের স্থানীয় এক পাইকারি ক্রেতাকে। খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে তাঁকে। বললেন, ‘পুঞ্জি লকডাউন। পান বিক্রি করবে না। তাই চলে যাচ্ছি।‘