নৌকায় ভোট দিলে ভাগ্য পরিবর্তন হয় সেটা প্রমাণ করেছি : প্রধানমন্ত্রী
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ২, ২০২৩ , ৫:০৯ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের আমলে কোনও মঙ্গা হয়নি। হইছে? না। আওয়ামী লীগ সরকারে আসলে ও নৌকা মার্কায় ভোট দিলে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে মঙ্গা হয়। বুধবার (২ আগস্ট) বিকেলে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, রংপুর বিভাগের মর্যাদা দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। আওয়ামী লীগ যতদিন সরকারে ছিল রংপুরে কখনও মঙ্গা হয়নি। খাদ্যের অভাব দেখা দেয়নি। দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি। আওয়ামী লীগ উত্তরবঙ্গ থেকে মঙ্গা দূর করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যখন ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেছিলাম, তখনো মঙ্গা ছিল না কিন্তু ২০০১ সালে যখন ওই খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসে, ২ হাতে টাকা-পয়সা লুট করে। সে, তার ছেলেরা মিলে, এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। আবার দেশে মঙ্গা শুরু হয়। ২০০৮ এর নির্বাচনে আমরা সরকার গঠন করি। তারপর থেকে আমি যে পদক্ষেপ নিয়েছি, তারপর থেকে এ দেশের মানুষের কোনো কষ্ট হয় নাই। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। ভোটার তালিকা করেছি, স্বচ্ছ ভোট বাক্স করেছি।
সরকারপ্রধান বলেন, আমরা প্রত্যেক এলাকায় উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। নারীদের জন্য কাজের সুবিধা করে দিয়েছি। আমাদের কাজের লক্ষ্য দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করা, দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নতি করা। এ অঞ্চলে জীবনেও দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে না, মঙ্গা দেখা দেবে না। বাংলাদেশে কোনও ভূমিহীন মানুষ থাকবে না। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তায়নও করবো। তিনি বলেন, সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। কয়লার দাম ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ নিয়ে কয়েকদিন কষ্ট হয়েছে। এরপর এখন ঠিক হয়ে গেছে। বিদ্যুতের আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, আমি খালি হাতে আসিনি। আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। কতগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। যাতে প্রত্যেকটা উন্নয়ন তরান্বিত হয় তার ব্যবস্থা করেছি। এর আগে, দুপুর ২টায় তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি রংপুর সেনানিবাস হেলিপ্যাডে পৌঁছায়। এরপর সড়কপথে সার্কিট হাউজে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সভায় অংশ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
এ ছাড়া, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, নৌ পরিবহন মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান, সাবেক সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস.এম কামাল হোসেন ও সুজিত রায় নন্দীসহ অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারসহ পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সরকারপ্রধান। জানা গেছে, প্রায় ১২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইতোপূর্বে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিটি বিভাগে একটি করে নভোথিয়েটার হবে। এরই ধারাবাহিকতায় রংপুর শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে রংপুর উপশহরে নির্মিত হতে যাওয়া ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ একর জমির ওপর ১০তলা বিশিষ্ট নভোথিয়েটার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়, রংপুর জেলার বিট্যাক সেন্টার, রংপুর মেডিকেল কলেজের মহিলা হোস্টেল এবং বিএমডিএ’র আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
তাছাড়া উদ্বোধন করা ২৭টি প্রকল্পের মধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রকল্পগুলো হলো- শেখ রাসেল মিডিয়া সেন্টার, শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়াম, শেখ রাসেল সুইমিং পুল, রংপুর পালিচড়া স্টেডিয়াম, বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স।
রংপুর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো- রংপুর সিটি সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাল, রংপুর সিটি অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট ও স্টোর ইয়ার্ড।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো- নলেয়া নদীর ১৯ দশমিক ১৪ কিলোমিটার পুনঃখনন, আলাইকুমারী নদীর ১৯ দশমিক ২৪ কিলোমিটার পুনঃখনন, নৈমুল্লা বিলের ১৪ দশমিক ৫৭ একর পুনঃখনন, চিকলী বিলের ১৯ দশমিক ৬৩ একর পুনঃখনন, ভারারদহ ও পাটোয়া কামরী বিলের ২২ দশমিক ৮৯ একর পুনঃখনন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো- পীরগাছা উপজেলা চৌধুরানী থেকে শঠিবাড়ী আরএন্ডএইচ পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়ন কাজ, পীরগাছা উপজেলা ভেণ্ডবাড়ি থেকে খালাশপীর পর্যন্ত রাস্তার সংস্কার কাজ, কাউনিয়া উপজেলা টেপামধুপুর থেকে রাস্তার পুনর্বাসন কাজ। মিঠাপুকুর উপজেলার গোপালগঞ্জ ঘাটে ঘাঘট নদীর উপর ৯৬ মিটার সেতু নির্মাণ, গঙ্গাচড়া উপজেলার বুড়িরহাট-কাকিনা আরএন্ডএইচ সড়কে ৪০ মিটার সেতু নির্মাণ এবং কাউনিয়া উপজেলার পল্লীমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ কাজ।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো- রংপুর মেডিক্যাল কলেজ বহুমুখী ভবন, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় হেলেঞ্চা ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, রংপুর বিভাগের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়, পীরগঞ্জে মাদারগঞ্জ ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় ১৪ নং চতরা ইউনিয়নে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নে ১০ শয্যা বিশিষ্ট বেগম রোকেয়া আধুনিক হাসপাতাল এবং রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় খালাশপীর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র।
অন্য প্রকল্পগুলো হলো- পীরগঞ্জ উপজেলার ২৫৪০ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং রংপুর কারখানা ও সংস্থা পরিদর্শন অফিস ভবন। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবশেষ রংপুরে এসেছিলেন ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর। এসময় তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে দুটি নির্বাচনী জনসভা করেছেন।