আজকের দিন তারিখ ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য প্রতিদিন কয়েক লাখ মাস্কের বেচাকেনা হচ্ছে বাবুবাজারে

প্রতিদিন কয়েক লাখ মাস্কের বেচাকেনা হচ্ছে বাবুবাজারে


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জানুয়ারি ২৯, ২০২১ , ২:৪১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


দিনের শেষে প্রতিবেদক : রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি মার্কেট বাবুবাজারে প্রতিদিন কয়েক লাখ সার্জিক্যাল মাস্ক, সুতি কাপড়ের মাস্ক ও বেবি মাস্ক বিক্রি হচ্ছে। একইসঙ্গে চলছে কেএন-৯৫ ও কেএন-৭৫ মাস্কের বেচাকেনা। এগুলো কিনতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সকাল থেকেই ভিড় জমান খুচরা ব্যবসায়ীরা। দাম কম হওয়ায় প্রতিদিন একেকটি দোকানে সর্বনিম্ন ৫০-৬০ হাজার পিস মাস্ক বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনোদিন এক লাখ পিসও বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।
বাবুবাজারের পাইকারি মাস্ক ব্যবসায়ীরা মনে করেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহার করা হলেও এখন ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি। তাদেরই একজন মো. মনির হোসেন। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে মাস্কের ব্যবসা করছেন। তিনি দিনের শেষে অনলাইনকে বলেন, ‘মাস্কের চাহিদা বেশ বেড়েছে, একইসঙ্গে বেড়েছে সরবরাহ। তাই ব্যবসা ভালোই চলছে। দেশে উৎপাদনও আছে অনেক বেশি। এ কারণে দাম কমছে।’ ব্যবসায়ী মনির হোসেন এখন এক হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক বিক্রি করছেন ৯০০-১২০০ টাকায়। তার কথায়, ‘মাস্ক এখন শুধু ভাইরাস রোধে নয়, ফ্যাশনের জন্যও কিনছেন অনেকে। তাই ফ্যাশনেবল মাস্ক বেশি চলছে।’
এদিকে ফেব্রুয়ারিতে কয়েকটি বিশেষ দিবস। এগুলোকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা এনেছেন বিভিন্ন ধরনের মাস্ক। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর, বাড্ডা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হয় এসব মাস্ক। মানভেদে সার্জিক্যাল মাস্ক এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৯০ পয়সা থেকে শুরু করে ১ টাকা ২০ পয়সা পর্যন্ত। আবার প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ৯০০-১২০০ টাকা। সুতি কাপড়ের মাস্ক প্রতি পিস পাওয়া যাচ্ছে ৫-২৫ টাকায়। এছাড়া কেএন মাস্কের মূল্য ৯-১৮ টাকা। একই অভিমত ব্যবসায়ী সবুজ আলম ফিরোজের। করোনাভাইরাস মহামারির আগে থেকেই মাস্কের ব্যবসা করছেন তিনি। এখন দিনে ৬০-৭০ হাজার মাস্ক বিক্রি হচ্ছে তার। কখনো তা দাঁড়ায় ১ লাখ পিসে। দিনের শেষে প্রতিনিধিকে এই ব্যবসায়ী বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া ‘মাস্ক নাই, সেবাও নাই’ বক্তব্যের সুবাদে মাস্কের চাহিদা বেশ বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে সরবরাহ। তার তথ্যানুযায়ী, ‘শুরুর দিকে তেমন মাস্ক বিক্রি না হলেও এখন চাহিদা বেড়েছে। এর মধ্যে সুতি কাপড়ের, সার্জিক্যাল মাস্ক ও শিশুদের উপযোগী মাস্কের চাহিদা একটু বেশি। ফ্যাশনের জন্যও অনেকে মাস্ক পরেন।’ মুন্সীগঞ্জ থেকে মাসে দুই-তিনবার মাস্ক কিনতে বাবুবাজারে আসেন আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘প্রতিবারই ২০-২৫ হাজার মাস্ক কিনি। এর মধ্যে সার্জিক্যাল মাস্ক ও সুতি কাপড়ের মাস্কের চাহিদা বেশি।’ বাবুবাজারে দাঁড়িয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহেদ হাসান মিশু বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির শুরু থেকেই মাস্ক ব্যবহার করছি। এখন সার্জিক্যাল মাস্ক ও নানান নকশা করা মাস্কগুলোই পরছি। কারণ এগুলো পরলে দেখতে ভালো দেখায়।’ তবে বংশালের বাসিন্দা লাকি ফাতেমা বলেন, আমি সব সময় চেষ্টা করি কাপড়ের মাস্ক পরার। কারণ বাজারে যে সার্জিক্যাল মাস্ক পাওয়া যায় তা পরলে কেনো যেন মনে হয় তেমন মান ভালো না। তাই সুতি কাপড়ের মাস্ক পরি।
এদিকে রাজধানীর ওষুধ ও বিভিন্ন দোকানে ভিন্ন চিত্র। প্রতিদিন দুই থেকে তিন বাক্স করে মাস্ক বিক্রি হচ্ছে এসব দোকানে। লক্ষ্মীবাজারের ওষুধ দোকানদার ফিরোজ আলম জানান, প্রতি পিস মাস্কের দাম ৫ টাকা। কেউ এক বাক্স নিলে ৫০ পিসের দাম রাখা হয় ২৫০ টাকা।
ঢাকার ফুটপাতে ১০-২০ টাকায় বিভিন্ন কাপড়ের মাস্ক পাওয়া যায়। সার্জিক্যাল মাস্ক পাওয়া যায় ৪ পিস ১০ টাকায়। অন্যদিকে অভিজাত বিপণিগুলোতে বিভিন্ন ধরনের মাস্ক বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৫০০ টাকায়। যদিও এসব মাস্কের মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। কিছু কিছু প্যাকেটের গায়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদনের সিল দেখা যায়। মাস্ক বেচাকেনার অনুমোদন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) রুহুল আমিন বলেন, ‘মাস্ক ব্যবহারে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ বৃদ্ধি করাই আমাদের প্রথম দায়িত্ব। দুই লেয়ারের মাস্ক পরলেও কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে হাসপাতালে রোগীর সংস্পর্শে যারা থাকবেন, তাদের ওষুধ প্রশাসন অনুমোদিত মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া সুতি কাপড়ের মাস্ক দিয়ে করোনা প্রতিরোধ করা যায়। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তার ভাষ্য, ‘দেশে এখনো মাস্ক তৈরির কোনো বাধ্যতামূলক কাঠামো নেই। তবে ওষুধ প্রশাসনকে শুধু জানিয়ে রাখলেই হয়। ’ খোলাবাজারে বিক্রি হওয়া মাস্কের মানের বিষয়ে জানান রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাজারে দুই ধরনের মাস্ক পাওয়া যায়। একটি হলো মেডিক্যাল মাস্ক বা সার্জিক্যাল, অন্যটি সুতি কাপড়ের। এর মধ্যে সুতি কাপড়ের মাস্ক করোনা প্রতিরোধ করতে পারে এবং এটি জীবাণুমুক্ত করে একাধিকবার ব্যবহারযোগ্য। ’
বাজারে মাস্ক সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় মান নিয়ে প্রশ্নের জন্ম হওয়া স্বীকার করেছেন আইইডিসিআরের সাবেক এই কর্মকর্তা। তার মন্তব্য, ‘সার্জিক্যাল মাস্কের ক্ষেত্রে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করতে হবে। সেটি না হলে ওষুধ প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’