আজকের দিন তারিখ ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
ধর্ম ও জীবন বদর যুদ্ধ: সত্য-মিথ্যার পার্থক্যের দিন

বদর যুদ্ধ: সত্য-মিথ্যার পার্থক্যের দিন


পোস্ট করেছেন: delwer master | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ৯, ২০২৩ , ২:৫৯ অপরাহ্ণ | বিভাগ: ধর্ম ও জীবন


ইসলাম ডেস্ক: কুরআন অবতীর্ণের মাস, লাইলাতুল কদরের মাস হিসেবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এই রমজান। ইসলামের ইতিহাসে এ মাসের গুরুত্বও সবচেয়ে বেশি।  কারণ, এই মাসে ইসলামের ইতিহাসে প্রথম বিজয় এসেছিল। তা ছিল বদর যুদ্ধে। আজ ১৭ রমজান, ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয় এই দিনে। দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান (৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মার্চ) ৩১৩ জন সাহাবি সঙ্গে নিয়ে মহানবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ৮০ মাইল দূরে বদর নামক স্থানে কাফিরদের সঙ্গে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং জয় লাভ করেন। এই যুদ্ধটি মানবজাতির ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা। এটি ছিল অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের লড়াই। দাম্ভিকতার বিরুদ্ধে একনিষ্ঠতার লড়াই। অবিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিশ্বাসের লড়াই। অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে প্রথম জয়।

বদর দিবসকে ‘ইয়াওমুল ফুরক্কন’ তথা সত্য-মিথ্যার পার্থক্যের দিন বলা হয়। কারণ, সত্যপথের অনুসারী অল্পসংখ্যক রোজাদার মুসলমান বিশাল অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত মিথ্যার অনুসারী কাফির-মুশরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করলে সত্য-মিথ্যার চিরপার্থক্য সূচিত হয়ে যায়। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা জেনে রাখো, তোমরা যা কিছু গনিমতরূপে পেয়েছো, নিশ্চয় আল্লাহর জন্যই তার এক-পঞ্চমাংশ রাসুলের জন্য, নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন ও মুসাফিরের জন্য, যদি তোমরা ঈমান এনে থাকো আল্লাহর প্রতি এবং হক ও বাতিলের ফয়সালার দিন আমি আমার বান্দার ওপর যা নাজিল করেছি তার প্রতি, যেদিন দুটি দল মুখোমুখি হয়েছে, আর আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। ’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৪১)

যুদ্ধে মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে জনবল ছিল মাত্র ৩১৩ জন। এর মধ্যে ৭০ জন মুহাজির, বাকিরা আনসার। অন্যদিকে কাফির কুরাইশ বাহিনীর সংখ্যা ছিল এক হাজার। এর মধ্যে ১০০ জন অশ্বারোহী, ৭০০ জন উষ্ট্রারোহী ও বাকিরা পদব্রজি ছিল।

এতো তফাত নিয়েও পরাজিত হয়েছিল কাফিররা। এর কারণ, মহান আল্লাহ বদর যুদ্ধের দিন রাসুল (সা.) ও তাঁর বাহিনীকে এমন প্রভাব দিয়েছিলেন যে, তাঁরা সংখ্যায় কম হলেও শত্রুপক্ষ তাদের ভয়ে কাতর ছিল।

এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো, যখন তোমার রব ফেরেশতাদের প্রতি ওহি প্রেরণ করেন যে, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। সুতরাং যারা ঈমান এনেছে তোমরা তাদের অনড় রাখো। ’ অচিরেই আমি ভীতি ঢেলে দেবো তাদের হৃদয়ে, যারা কুফরি করেছে। অতএব তোমরা আঘাত করো ঘাড়ের ওপর এবং আঘাত করো তাদের প্রত্যেক আঙুলের অগ্রভাগে। (সুরা আনফাল, আয়াত: ১২)

এতো কম সংখ্যক সৈন্য নিয়েও অস্ত্রে সজ্জিত কাফিরদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের জয় লাভের আরেকটি কারণ ফেরেশতা দিয়ে সাহায্য।

বদর যুদ্ধের বিশেষ মর্যাদার মধ্যে এটি একটি। এই যুদ্ধে মহান আল্লাহ ফেরেশতা পাঠিয়ে মুসলমানদের সহযোগিতা করেন।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, আর অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের বদরে সাহায্য করেছেন অথচ তোমরা ছিলে হীনবল। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায়, তোমরা শোকরগুজার হবে। স্মরণ করো, যখন তুমি মুমিনদের বলছিলে, ‘তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের রব তোমাদের তিন হাজার নাজিলকৃত ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করবেন?’ হ্যাঁ, যদি তোমরা ধৈর্য ধরো এবং তাকওয়া অবলম্বন করো, আর তারা হঠাৎ তোমাদের মুখোমুখি এসে যায়, তবে তোমাদের রব পাঁচ হাজার চিহ্নিত ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সাহায্য করবেন। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১২৩-১২৫)

বদর যুদ্ধে অংশ নেওয়া সাহাবি ও ফেরেশতাদের বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন আল্লাহ তাআলা। বদরি সাহাবিদের সব পাপ ক্ষমা করে দিয়েছেন পরম করুণাময়। এ যুদ্ধে শহীদরা জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মান পাবেন।

এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি হাদিস রয়েছে। একটি হাদিসে বলা হয়েছে, একদা জিবরাঈল (আ.) নবী (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, আপনারা বদর যুদ্ধে যোগদানকারী মুসলিমদের কিরূপ গণ্য করেন? তিনি বলেন, তারা সর্বোত্তম মুসলিম অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) এরূপ কোনো শব্দ তিনি বলেছিলেন। জিবরাঈল (আ.) বললেন, মালাইকাদের মধ্যে বদর যুদ্ধে যোগদানকারীগণও তেমনি মর্যাদার অধিকারী। (বুখারি, হাদিস: ৩৯৯২)

আরও একটি হাসিদে বলা হয়েছে, উম্মু রুবায়্যি বিনতে বারআ, যিনি হারিস ইবনে সুরাকার মা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, ‘হে আল্লাহর নবী, আপনি হারিসাহ (রা.) সম্পর্কে আমাকে কিছু বলবেন কি? হারিসা (রা.) বদরের যুদ্ধে অজ্ঞাত তীরের আঘাতে শাহাদাত লাভ করেন। সে যদি জান্নাতবাসী হয়ে থাকে তবে আমি সবর করব, তা না হলে আমি তার জন্য অবিরাম কাঁদতে থাকব। ’ আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, ‘হে হারিসার মা, জান্নাতে অসংখ্য বাগান আছে, আর তোমার ছেলে সর্বোচ্চ জান্নাতুল ফেরদাউস পেয়ে গেছে। ’ (বুখারি, হাদিস: ২৮০৯)