আজকের দিন তারিখ ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় বরিস জনসনের জন্য শুভকামনা ও এক ব্রিটিশ বাংলাদেশি ডাক্তারের মৃত্যু

বরিস জনসনের জন্য শুভকামনা ও এক ব্রিটিশ বাংলাদেশি ডাক্তারের মৃত্যু


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ১১, ২০২০ , ৬:২১ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


সম্পাদক : শ্যামল দত্ত।
বরিস জনসন আমাকে বললেন, তোমার কি আমার এই চুলের হেয়ার স্টাইলটা খুব পছন্দ? আমি বললাম, অত্যন্ত ডিফারেন্ট একটা হেয়ার স্টাইল। খুবই সুবিন্যস্তভাবে অবিন্যস্ত। হাসতে হাসতে বরিস জনসন বললেন, না না, আসলে তা না। এটা এ রকমই। অনেকেই অবশ্য আমাকে দেখলে এই হেয়ার স্টাইলটার কথা উল্লেখ করেন। তারপর তার সঙ্গে কথা হলো নানা বিষয়ে। প্রধানত রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তার মিয়ানমার সরকারের আচরণে। বললেন, এটা মানবতার বিরুদ্ধে একটা চরম অপরাধ।
বরিস জনসনের সঙ্গে দেখা ঢাকায় অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ভিআইপি লাউঞ্জে। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি ব্রিটেনের থেরেসা মে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন ঢাকায় এসেছিলেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশা দেখতে। ঢাকায় তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার এলিসন ব্ল্যুাক ও আরো কয়েকজন ব্রিটিশ হাইকমিশনের কর্মকর্তা একটি স্পেশাল ফ্লাইটের অপেক্ষায় ছিলেন অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে। অন্যদিকে আমি এবং আরো কয়েকজন সফরসঙ্গী ছিলাম ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের নায়ক, দেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে হেলিকপ্টারে ভোলায় যাওয়ার জন্য। তোফায়েল আহমেদসহ ভিআইপি লাউঞ্জে ঢুকতেই দেখলাম ব্রিটিশ হাইকমিশনার এলিসন ব্ল্যুাকসহ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বসে আছেন সেখানে। এলিসন ব্ল্যুাকের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচয় ছিল। হাত বাড়িয়ে দিতেই পরিচয় করিয়ে দিলেন বরিস জনসনের সঙ্গে। রাজনীতিতে আসার আগে বরিস জনসন পেশায় ছিলেন একজন জাঁদরেল সাংবাদিক। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন টাইম এবং টেলিগ্রাফে রিপোর্টার হিসেবে। সম্পাদক ছিলেন টাইমের সহযোগী প্রকাশনা দি স্পেক্টাটরের। টেলিভিশনের টকশোয় নিয়মিত অংশগ্রহণকারী ও জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপকও ছিলেন। আমি সাংবাদিক শুনে আলোচনায় সাংবাদিকতার প্রসঙ্গও এলো। বললেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত তিনি লিখছেন বিভিন্ন কাগজে। বরিস জানালেন, তারা যাচ্ছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশা দেখতে। কয়েক মাস আগে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু কির সঙ্গে তার বৈঠকের কথাও উল্লেখ করলেন। একে একে আমাদের পরিচয় হলো সবার সঙ্গে। সবাই মানে জনাব তোফায়েল আহমেদের সফরসঙ্গী ছিলাম আমি, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন ও বিকেএমইএর তৎকালীন সহসভাপতি আসলাম সানিসহ আরো কয়েকজন। চা খেতে খেতে গল্প চলার মাঝখানে হেলিকপ্টারের পাইলট এসে জানালেন আমাদের এখন ভোলার উদ্দেশে রওনা দিতে হবে। বিদায় নেয়ার আগে সবাই মিলে একটি ছবি তুললাম যে ছবিটি এখনো আমার কাছে সংরক্ষিত আছে।
বাংলাদেশ থেকে ফেরত যাওয়ার কিছুদিন পরে ব্রেক্সিট ইস্যুতে ব্রিটেনে কনজারভেটিভ পার্টির থেরেসা মে সরকারের পতনের পরে দলের নেতা নির্বাচিত হন বরিস জনসন। বরিসের এই আকস্মিক উত্থান ছিল অনেকের কাছে এক বিরাট বিস্ময়, তবে ব্রিটেনের রাজনীতিতে এটা নতুন কিছু নয়। লন্ডন শহরের দুবারের মেয়র ও বেশ কয়েকবার এমপি নির্বাচিত হওয়া এবং ব্রেক্সিট ইস্যুতে কট্টর এই নেতা বরিস জনসন শপথ নিলেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। ব্রিটেনজুড়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনকে বের করে আনার এক তুমুল প্রচারণা চালিয়ে আচমকা ২০১৯ সালের মে মাসে নতুন করে পার্লামেন্ট নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন এবং উগ্র ইউরোপীয় ইউনিয়নবিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে ১৯৮৭ সালের পরে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা নিয়ে কনজারভেটিভ পার্টিকে আবার ক্ষমতায় আনলেন বরিস জনসন।
সেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন লন্ডনের সেন্ট থমাস হসপিটালের আইসিইউতে। নানা বিতর্কিত মন্তব্য-কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যাপকভাবে আলোচিত-সমালোচিত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সমতুল্য বলে অনেকে মন্তব্য করেন। কিন্তু তার কোনো কোনো মন্তব্যে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ছাড়িয়ে গেছেন বলে খ্যাতি রয়েছে। বোরকা পরা মেয়েদের দেখলে পোস্ট বক্সের মতো মনে হয়- এ রকম একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হন তিনি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, যখন এই বিষয়ে তার বিরুদ্ধে ক্ষমা চাওয়ার জোরালো দাবি উঠল তখন যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমের এক জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৪০ শতাংশ জরিপে অংশগ্রহণকারী তার ক্ষমা চাওয়ার বিরুদ্ধে মত দিয়েছে। চরম এলিটিজমের সমর্থক বরিস জনসন কথাবার্তা যেমন উগ্র তার আচরণও ঠিক সে রকমই। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও ব্রিটিশ এক পত্রিকায় কলাম লেখার জন্য তিনি চুক্তিবদ্ধ হন; পরবর্তীতে তীব্র সমালোচনার মুখে এই চুক্তি বাতিল করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন- দুজনের বিরুদ্ধে নারী অবমাননার নানা অভিযোগ গণমাধ্যমে এসেছে। বরিস জনসনের বিরুদ্ধে এক নারী সহকর্মীর শরীর স্পর্শ করার অভিযোগ উঠলে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট থেকে এই অভিযোগ অসত্য বলে বিবৃতি দেয়া হয়।
যাই হোক, ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনা ভাইরাস টেস্ট করে নেগেটিভ হয়েছেন, অন্যদিকে বরিস জনসনের করোনা ভাইরাস টেস্টে পজিটিভ হওয়ার পর চিকিৎসা নিয়ে আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠছেন। দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ- শুরুতেই তারা এই রোগটিকে পাত্তা দেননি। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য উভয় দেশই। এ রকম একটি ভাইরাসের ভয়াবহতা নিয়ে চিকিৎসকরা বারবার সতর্ক করলেও চিকিৎসকদের এই সতর্কবাণী এই দুই সরকারপ্রধানের কাছে গুরুত্ব পায়নি। যে কারণে আজ অকাতরে প্রাণ দিতে হচ্ছে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সাধারণ মানুষকে। বরং দুই দেশই একই কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে এই রোগের বিস্তারের জন্য চীনকে দায়ী করে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে। চীন যথাসময়ে সতর্ক করলে এবং মানুষে মানুষে এই রোগের বিস্তার সম্পর্কে ধারণা দিলে করোনা ভাইরাসের মহামারি চরিত্র ঠেকানো যেত এমন বক্তব্য এসেছে দুই দেশের সরকারের কাছ থেকে। যুক্তরাজ্যের ডানপন্থি বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন হেনরি জ্যাকসন সোসাইটি করোনা মহামারির ক্ষয়ক্ষতি হিসেবে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার চীনের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবি তুলেছে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় দলও ক্ষতিপূরণের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। তাদের বক্তব্য, চীন এই মহামারির তথ্য গোপন করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইন্টারন্যাশনাল হেলথ রেগুলেশনসের (আইএইচআর) ৬ এবং ৭ ধারা লঙ্ঘন করেছে। চীনের এ ধরনের আচরণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নীতি লঙ্ঘন তো বটেই, ক্ষতিপূরণ আদায়েরও দাবি রাখে। কিন্তু যুক্তরাজ্যের প্রখ্যাত সাংবাদিক ফেনিয়ান কানিংহাম চীনের ওপর এই দায় চাপিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকা ও যথাসময়ে পদক্ষেপ না নেয়ার অভিযোগের তীর অন্যদিকে নেয়ার চেষ্টা বলে এক লেখায় উল্লেখ করেছেন। চীনে যে এ ধরনের একটি ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়াতে পারে তার আশঙ্কা প্রকাশ করে ইউএস ইন্টেলিজেন্সের একটি রিপোর্ট সম্প্রতি প্রকাশ করেছে মার্কিন চ্যানেল এবিসি, যেখানে দেখা যায় নভেম্বর মাসেই রিপোর্টটি তৈরি হয়েছিল। ফলে যথেষ্ট সময় পাওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়নি বরং এটাকে চায়নিজ ফ্লু বা কুংফু ভাইরাস বলে ব্যঙ্গ করেছেন।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যমে লেখালেখি হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। সম্প্রতি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ চিকিৎসক আব্দুল মাবুদ চৌধুরী সরাসরি প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কাছে লেখা এক ফেসবুক পোস্টে এর বিস্তারিত তুলে ধরেন।
আজ থেকে ২০ বছর আগে ডাক্তার আবদুল মাবুদ চৌধুরী বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্য গিয়েছিলেন চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে উন্নত পড়াশোনার জন্য। গত মাসে বরিস জনসনের কাছে ফ্রন্টলাইনে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা যথেষ্ট সুরক্ষা সামগ্রী পাচ্ছে না বলে ফেসবুকে খোলা চিঠি লিখে তিনি আলোচিত হন। ব্রিটিশ সরকার চিকিৎসকদের পিপিইসহ নানা সামগ্রী দিচ্ছেন না, এমন অভিযোগ তুলে বরিস জনসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে ইউরোলজি বিভাগের এই চিকিৎসক। গত ৮ ফেব্রুয়ারি এনটিভি ইউরোপের অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরে এর ব্যাপক সমালোচনা করেন এবং বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশ করোনা ভাইরাস মহামারির চরম শিকারে পরিণত হবে বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। গত বুধবার ৮ এপ্রিল হাসপাতালে ১৫ দিন চিকিৎসাধীন থেকে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৫৩ বছর বয়সী বাংলাদেশি ব্রিটিশ চিকিৎসক আব্দুল মাবুদ চৌধুরী। এর আগে যে চারজন চিকিৎসক করোনা চিকিৎসায় দায়িত্বরত থেকে জীবন দিয়েছেন এদের সবাই এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে ব্রিটেনে অভিবাসী নাগরিক। এরা হলেন- সুদানের আমজেদ আল হারানি ও আদিল আল তায়ের, নাইজেরিয়ার আলফা সাদ উ এবং পাকিস্তানের হাবিব জায়েদি।
কিন্তু ব্রিটেনের চরম অব্যবস্থাপনাসম্পন্ন স্বাস্থ্য খাতের দুর্বল দিক ও এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যকর্মীদের অসহায়ত্বের কথা বরিস জনসনের কাছে তুলে ধরেও শেষ পর্যন্ত কোনো পরিস্থিতির সুরাহা হয়নি। বরং ভাইরাসের কাছে আত্মসমর্পণ করে জীবন দিলেন বাংলাদেশের সিলেটে জন্মগ্রহণকারী এই চিকিৎসক ডা. আব্দুল মাবুদ চৌধুরী।
ব্রিটেনের মতো দেশেও গুজব এবং গুজবের যে ঘটনা ঘটছে তা বিশ^বাসীকে বিস্মিত করছে। গত কয়েকদিনে বার্মিংহাম, লিভারপুল ও মেনিংসহ বিভিন্ন শহরে টেলিফোনের ফাইভজি টাওয়ারে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায় এবং ফাইভজি শরীরের ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা অকেজো করে দেয়- এমন অভিযোগের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটছে। আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টে এই আগুন ঠেকাতে পুলিশকে মাঠে নামতে হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার যুক্তরাজ্যে নতুন করে ৮৬৬ জনসহ মোট মৃতের সংখ্যা ৮১১৪। ইউরোপের মধ্যে এই মৃতের সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ।
পশ্চিমা দেশগুলোতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় আলোচনা- কেন এই উন্নত সমাজ ব্যবস্থায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবস্থা এমন বেহাল। কেন মাস্ক নেই? কেন পিপিই নেই? কেন ভেন্টিলেটার নেই? কেন আইসিইউ নেই? এসব চিত্র তো উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে হওয়ার কথা। যেসব দেশ বায়োলজিক্যাল উইপন বানাচ্ছে, কেমিক্যাল যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আছে, তাদের কেন এমন অবস্থা হবে। এই বিষয়গুলোর কোনো জবাব পশ্চিমা নেতারা দিতে পারছেন না। তাদের বিভিন্ন জোটগুলোও যে অর্থহীন সেটি এখন প্রমাণিত। করোনা মোকাবিলায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন একসঙ্গে কাজ করতে পারছে না। এই মহামারি ঠেকাতে ন্যাটো কেন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। নেই অন্য পশ্চিমা মিত্রদের যৌথ কোনো পদক্ষেপ। প্রত্যেক দেশ যেন যুদ্ধ করছে আলাদা আলাদা। অথচ আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়ায় হামলার সময় তখন তারা একসঙ্গে অস্ত্র চালায়। কিন্তু আজ বাস্তবতা এটাই, করোনা ভাইরাস সেই যৌথ অস্ত্রবাজি থেকে দেশগুলোকে আলাদা করে দিয়েছে। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দায়ী করছে এই দেশগুলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিব ট্রেডস এডানম গ্যাব্রিসিয়াসের বিরুদ্ধে সরাসরি চীনের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিব অবশ্য সরাসরি এসব প্রশ্নের জবাব দেননি। বলেছেন, করোনা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। তাতে কোনো লাভ হবে না বরং প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতে বলেছেন এতে বডি বেগের সংখ্যা বেড়ে যাবে। চীনের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হাজার হাজার মানুষ এখনো মারা যাচ্ছে। এখন এসব নিয়ে ভাবতে যাব কেন, এখনো সংযত না হলে চোখের সামনে মৃত্যুর মিছিল দেখতে হবে আমাদের। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ১৯৬৭ সালের গুটি বসন্তের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় স্নায়ুযুদ্ধ থাকা সত্ত্বেও আমেরিকা ও রাশিয়া একসঙ্গে কাজ করেছিল। এখন আমেরিকা ও চীনের উচিত একযোগে কাজ করা।
ইথিওপিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী (২০১২-১৬) এবং সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী (২০০৫-১২) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিবের দায়িত্ব নেন ২০১৭ সালের পহেলা জুলাই। তার মহাসচিব হওয়ার পেছনে চীনের অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল বলে আলোচনা আছে। চীনের উহানে করোনা ভাইরাস আক্রমণের পর জানুয়ারিতে চীন সফরে গিয়েছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিব। সে সময় ভাইরাস মোকাবিলায় তিনি চীনের সাহসী উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং অবাধ তথ্য দেয়ার জন্য চীন সরকারকে ধন্যবাদ জানান। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিব এসব ভূমিকায় ক্ষুব্ধ। তার অভিযোগ সংস্থাটি চায়না সেন্ট্রিক হয়ে গেছে যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান অর্থদাতা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি এ বছরের ১২৪ মিলিয়ন ডলারের অর্থ সহযোগিতার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে হুমকি দেন। বিশ্ব যখন করোনা মহামারি মোকাবিলায় চরম সংকটে তখনো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে এ রকম প্রশ্নবিদ্ধ করলে বরং পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলার বৈশ্বিক পদক্ষেপ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে অনেকেই মনে করেন। বরং আসল সংকটকে খুঁজে বের করে এর সমাধানে আমাদের উদ্যোগী হওয়া জরুরি। প্রখ্যাত ভারতীয় লেখক ও সমাজকর্মী অরুন্ধতী রায় তার এক বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন, বিশ্ব চালায় তিনটি অনির্বাচিত সংস্থা। এই তিন সংস্থা হচ্ছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং ডব্লিউটিও এবং এই তিন সংস্থার নেপথ্যের মোড়ল হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। পুরো বিশ্ব জিম্মি এদের কাছে। তিনি বলেছেন, সমাজতন্ত্রের পতন হয়েছিল পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য। ব্যক্তির ক্ষমতায়নের চেয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়ন ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আজ নতুন এক ব্যবস্থা যদি সৃষ্টি করা না যায় তাহলে বারবার এ ধরনের সংকটে পড়বে পৃথিবী। তিনি বলছেন নতুন একটি পৃথিবীর আগমনের পদধ্বনি তিনি শুনতে পাচ্ছেন।