আজকের দিন তারিখ ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বস্তি থেকে মাইক্রোসফটের ম্যানেজার

বস্তি থেকে মাইক্রোসফটের ম্যানেজার


পোস্ট করেছেন: delwer master | প্রকাশিত হয়েছে: জানুয়ারি ৩১, ২০২২ , ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি


তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : কথায় আছে বামন হয়ে কি আর চাঁদ ধরা যায়। কথা ঠিকই আছে। তবে ইচ্ছা থাকলে যে কোনো অসম্ভব কাজকে সম্ভব করা যায়। তার আবারো প্রমাণ দিলেন শাহীনা আত্তারওয়ালা। মাইক্রোসফটের প্রোডাক্ট ডিজাইন ম্যানেজার। তবে শাহীনার এই পথ মোটেই সহজ ছিল না। বড় হয়েছেন বস্তিতে। তার সংগ্রাম এবং দৃঢ়তা সবার মনেই এক ইতিবাচক দিককে জাগিয়ে তোলে। অনলাইনে ভাইরাল হওয়া একটি টুইটার থ্রেডে নিজের সম্পর্কে বলেছেন তিনি। টুইটারে তিনি বলেন, নেটফ্লিক্সের একটি সিরিজে তিনি তার পুরোনো বাড়ি দেখতে পান, যা তাকে সেই সময়ের দিনগুলোতে ফিরিয়ে নিয়েছে।

সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সের ‘ব্যাড বয় বিলিওনেয়ার্স: ইন্ডিয়া’ ওয়েবসিরিজে মুম্বাইয়ের বস্তি এলাকার একটি দৃশ্যে নিজের পুরোনো বাড়ি দেখার পরে আপ্লুত হয়ে তিনি ওই টুইট করেন। সেখানেই বড় হয়েছেন শাহীনা। তিনি লেখেন, এই ওয়েবসিরিজে মুম্বাইয়ের বস্তি এলাকার যে বাড়িগুলো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, তার মধ্যে একটি বাড়ি আমার। আমি ২০১৫ সাল পর্যন্ত এই বাড়িতেই থেকেছি। সেই সময় জীবন খুব কঠিন ছিল। জীবনযাপনের পরিস্থিতি, লিঙ্গবৈষম্য এবং যৌন হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়েছে প্রতি মুহূর্তে। সেখান থেকেই শাহীনা জীবনে বড় হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন বলে জানান। ১৫ বছর বয়সেই দেখেছেন চারপাশে নারীদের অসহায় অবস্থা, পরনির্ভরশীল, নির্যাতিত এবং পরাধীন জীবন। তিনি একেবারেই ভাগ্যের হাতে নিজেকে ছেড়ে দেননি। কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন। ওই পরিবেশে থেকে যা করা বা ভাবা অন্যদের জন্য অসম্ভব তা ভেবেছেন তিনি। শাহীনা বান্দ্রা রেলস্টেশনের কাছে দরগা গালি বস্তিতে থাকতেন। তার বাবা তেলের ফেরিওয়ালা ছিলেন। কাজের জন্য একসময় তিনি উত্তর প্রদেশ থেকে মুম্বাইতে চলে আসেন। শাহীনা আত্তারওয়ালা স্কুলে প্রথমবার একটি কম্পিউটার দেখার পর থেকেই এর প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতাম যে কম্পিউটার একটি দুর্দান্ত জিনিস, যে কেউ এর সামনে বসে থাকলে তার জন্য নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হবে’। কিন্তু স্কুলের পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ করায় তাকে কম্পিউটার ক্লাসে যোগ দেওয়ার পরিবর্তে সেলাইয়ের কাজ শেখার ক্লাসে পাঠানো হয়। কিন্তু এরপরও তিনি প্রযুক্তিতে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখতেন।

শাহীনা স্থানীয় কম্পিউটার ক্লাসে ভর্তি হওয়ার কথা তার বাবাকে বলেছিল। কিন্তু তার বাবার সে সময় এত টাকা দেওয়ার মতো অবস্থাই ছিল না। এরপর শাহীনাকে কম্পিউটার ক্লাসে ভর্তি করতে টাকা ধার করেন। এরপর নিজের একটি কম্পিউটার কিনতে গিয়ে আরও কষ্ট করতে হয়েছিল। দুপুরের খাবার না খেয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতেন শাহীনা। সেই টাকা বাঁচিয়ে রাখতেন কম্পিউটার কেনার জন্য। তবে নিজের সাফল্যের জন্য বরাবর বাবাকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। শাহীনা বলেন, আমার বাবা একজন ফেরিওয়ালা ছিলেন। রাস্তায় ঘুমাতেন ঠিকই কিন্তু স্বপ্ন দেখতে ছাড়েননি। ভাগ্য, কঠোর পরিশ্রম এবং লড়াই করে গেছে সবসময়।

তার বাবার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। কিন্তু তার আতর শিল্প সবকিছু বদলে দিয়েছে। বস্তিতে কয়েক দশক বসবাস করার সময় তার ধৈর্য এবং ত্যাগ আমাদের একটি উন্নত জীবনের দিকে নিয়ে আসতে সাহায্য করেছে। আমরা টাকা জমানোর জন্য কম খরচে জীবনযাপন করতেন। প্রয়োজনীয় নানান জিনিসও অনেক সময় কেনেননি। শাহীনা একসময় প্রোগ্রামিং ছেড়ে দিয়ে ডিজাইনে ক্যারিয়ার গড়ার অপশন বেছে নেন। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ডিজাইনে সম্ভাবনা আছে এবং সবকিছু বদলে যেতে পারে। আর সেই পরিবর্তনের হাতিয়ার হল প্রযুক্তি। মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথমে বিকম এ স্নাতক হন শাহিনা। পরে তিনি এনআইআইটি থেকে ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডিজাইনে ডিপ্লোমা করেন। ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনো শেষ করে তিনি বিভিন্ন সংস্থার পণ্যের ডিজাইন শুরু করেন। এরপর ২০২১ সালে তার ঝুলিতে আসে মাইক্রোসফটের চাকরি। ধীরে ধীরে ডিজাইন বিভাগের প্রধান হন। নিজের অদম্য চেষ্টায় আজ তিনি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানির ডিজাইন লিডার। মুম্বাইয়ের একটি প্রশস্ত অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করেন। ২০২১ সালে শাহীনা ফ্ল্যাটটি কিনেছেন। যেখানে ব্যালকনি থেকে আকাশ দেখা যায়। শাহীনা মনে করেন, জীবনে কিছু অর্জনের জন্য নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করা উচিত। কোনো না কোনো দিন সেটাই গেম চেঞ্জার হয়ে যাবে জীবনে। শাহীনার স্বামী এবং এক বছরের সন্তান নিয়ে গোছানো সংসার। এরই মধ্যে শাহীনার এই টুইটে লাইক পড়েছে কয়েক হাজার। ভাইরাল হয়েছে ভিডিও। কুর্নিশ জানিয়ে মন্তব্য করেছেন একাধিক। শাহীনা আত্তারওয়ালা তার মতো অল্প বয়সী মেয়েদের উপদেশ দিয়েছেন যে, শিক্ষা, দক্ষতা এবং ক্যারিয়ার অর্জনের জন্য যা কিছু দরকার তা করুন। এটাই অল্প বয়সী দরিদ্র মেয়েদের জন্য জীবনমান পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় উপায়।