বাউফলে আটক ডাহুকের ছানা অবমুক্ত
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১৯, ২০২০ , ৫:৫৮ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ
বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : মায়ের পেছনে পেছনে খাবারের সন্ধানে বাসা থেকে লোকালয়ে এসেছিল ডাহুকছানাগুলো । ছানাগুলো দেখার পর পরই ধরে ফেরার ফন্দি আটেন স্থানীয় এক কৃষক। মা ডাহুকটি পালাতে সক্ষম হলেও ধরে ফেলে ছানাগুলোকে। ‘সেভ দি বার্ড এ্যান্ড বি’ নামে স্থানীয় প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ রক্ষা অন্দোলনের কর্মীরা জেনে যায় ডাহুক ছানা ধরার ঘটনা। এলাকার প্রকৃতি প্রেমী সচেতন মানুষ, কিভাবে ডাহুকছানাগুলোকে নিশ্চিন্তে তার মায়ের কাছে পেঁৗছে দেওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত অবমুক্ত করা হয়েছে ডাহুকের দুই ছানা।
জানা গেছে, পটুয়াখালীর বাউফলের ধানদী গ্রামের এক কৃষকের কাছ থেকে উদ্ধারের পর আজ রোববার বিকালে ‘সেভ দি বার্ড এ্যান্ড বি’ নামে স্থানীয় প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ রক্ষা অন্দোলনের কর্মীরা মা পাখিটির আস্তানা শশীতলা খালপাশের জলা-জঙ্গলে অবমুক্ত করে ডাহুক পাখির ছানা দুটি। শাওন, ইব্রাহিম, মারিয়া, সুমাইয়া, আব্দুল্লাহ, নাঈমসহ স্থানীয় কয়েক শিশু-কিশোর জানায়, আগের দিন বিকালে পূর্ব ধানদী করিম মৃধা বাড়ির উত্তর পাশের জলাভূমিতে মা পাখিটির সঙ্গে আহারে নেমে চোখে পড়ে এক কৃষকের। এ সময় মা পাখিটি উড়ে যেতে পারলেও জনৈক দু’জনের হাতে জলাভূমি থেকে আটক হয় ডাহুক পাখির দুই ছানা। বাড়ির উৎসুক শিশুরা ছুটে আসে ডাহুকের বাচ্চা দু’টি এক নজর দেখতে। এরপর ওই কৃষক তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে পাশের রাস্তায় বাধ সাধেন ‘সেভ দি বার্ড এ্যান্ড বি’ নামে স্থানীয় প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ রক্ষা বিষয়ক এক অন্দোলন কর্মী। অনেক বুঝিয়ে ছবি তোলা আর বাড়িতে পোশার অযুহাত দেখিয়ে ছানা দু’টি হাতে আসে তার (আন্দোলন কর্মী)। তাৎক্ষনিক অবমুক্ত করার কোন উপায় না পেয়ে ছোট চিংড়ি মাছের মতো খাবার আর প্রাথমিক শুশ্রুষা দিয়ে খাচায় রাখা হয় ছানা দুটি। দুপুরে আন্দোলনের কয়েক খুদে কর্মী মিলে জনৈক ওই দুইজনের চোখ এড়িয়ে ছানা দু’টি যেখানে আটক হয়েছিল তার অদূরে (মা পাখিটির আস্তানার কাছে) নিয়ে অবমুক্ত করে ডাহুক পাখির ছানা দুটি।
ডাহুকের ছানা অবমুক্ত করতে পেরে দারুন খুসি ‘সেভ দি বার্ড এ্যান্ড বি’র ক্ষুদে সদস্য স্থানীয় ৭১ নম্বর নিমদী সকরারি প্রাইমারি স্কুলের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী বাছিরা বিনতে বশার বলেন, ‘ডাহুকের ডাকে আসে সকাল-দুপুর ও সাজের বেলা। এরা আমাদের সবুজ সুন্দর প্রকৃতির আরো সৌন্দর্য বাড়ায়। আমাদেরকে মুগ্ধ করে।’ পরিবেশবাদি সংগঠনটির সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, মহামারি করোনা কালে উপকূলীয় প্রাণ-বৈচিত্র্যে ইতিবাচক পরিবর্তণ যে কারো চোখে পড়ছে। শব্দ, বায়ূ ও পানি দুষণসহ বিভিন্ন ধরণের রেডিয়েশন কমে গিয়ে এই পরিবর্তণ আকাশে-বাতাসে, জলে-স্থলে সর্বত্র। কিন্তু প্রতিবেশি পাখি ডাহুকের মতো জলমোরগ, কোরা, বক, ঘুঘুসহ অনেক পাখিই এ সময় ডিম ফুটিয়ে তাদের নাগুলোকে নিয়ে আহারে নেমে কখনো কখনো নির্দয় শিকারীর কবলে জীবন দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘করোনা কালের শিক্ষা নিয়ে তথাকথিত নগরায়ন বন্ধ করে গ্রামাঞ্চলের বনজঙ্গল রক্ষাসহ পাখপাখালি ও বন্যপ্রাণীদের প্রতি সদয় আচরণ এখন সময়ের দাবি।’ এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণী ব্যাবস্থাপনা প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনা অঞ্চলের মোহাম্মদ মফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘জলবায়ূ পরিবর্তণের বিরুপ প্রতিক্রিয়ায় হুমকীতে থাকা উপকূলীয় বিভিন্ন বন্য প্রাণীসহ চরাঞ্চলের পাখপাখালি করোনার লকডাউনে স্বাচ্ছন্দ ফিরে পেয়েছে। এদের খাদ্যাভ্যাস, চলাচল, প্রজননসহ জীবন আচরণেও পরিবর্তণ এসেছে। ডাহুকের ছানার মতো অবলা এসব প্রাণীদের পূর্ণাঙ্গ বেড়ে ওঠা থেকে স্বাচ্ছন্দ জীবন-আচরণে সবার সহানুভূতি থাকা উচিত।’