আজকের দিন তারিখ ৩১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার, ১৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সারাদেশ বাউফলে নির্দেশনা অমান্য করে কিস্তি আদায়ের অভিযোগ

বাউফলে নির্দেশনা অমান্য করে কিস্তি আদায়ের অভিযোগ


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ৩০, ২০২০ , ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ


বাউফল (পটুয়াখালী)  থেকে এমএ বশার : করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এনজিওগুলোকে ঋণের কিস্তি আদায় কার্যক্রম বন্ধের সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। তবে এই নির্দেশনা অমান্য করে বাউফলে বিভিন্ন এনজিওগুলো কিস্তি আদায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে কাজ না থাকায় কিস্তির টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করায় বিপাকে পড়েছেন ঋণ নেওয়া সাধারণ মানুষ।

ঘরির কাটায় সকাল ১০টা। ‘পদ্মা-৭৯’ নামে বেসরকারি গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার এক কেন্দ্রের অবস্থান পৌর সদর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে সুলতানাবাদ গ্রামে। নির্ধারিত সময়ের খানেক আগে এই কেন্দ্রে হাজির হয়ে সদস্য অনুপস্থিতির ভিন্ন এক শঙ্কিত রুক্ষ্ম দৃষ্টিতে বাহিরে দেখছিলেন সংস্থাটির মাঠকর্মী রিপা বেগম। মাঠকর্মী রিপা বেগমসহ সদস্য মমতাজ, শিল্পী, আলমতাজ ও রাহিমা বেগম উপস্থিত থাকলেও যথাসময়ে কেন্দ্রঘরে উপস্থিত হতে পারেননি সদস্য রুমানা বেগম। আগের সপ্তাহের কিস্তি সময় মতো পরিশোধ করতে না পারায় কারণে মাঠকর্মীর চোখ রাঙানিতে রুমানা এবার অন্তত সময় মতো এ কিস্তিটা পরিশোধ করতে চায়। কিন্তু সে উপায়ও যে নাই। তাই হন্যে হয়ে টাকা ধার চেয়ে প্রতিবেশিদের ঘর চষে বেড়াচ্ছিলেন তখনো। এমন সময়ে দু’দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়ার শর্তে এক প্রতিবেশি কিস্তির টাকা ধারে দিতে রাজি হন। রুমানা এবার যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে। সঞ্চয়ী বই হাতে টাকা নিয়ে কেন্দ্রঘরে হাজির হন তিনি। এটা ছিল গত রোববার ২৮ জুন সকাল ১০ টায় পটুয়াখালীর বাউফলের সুলতানাবাদ গ্রামের গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার ‘পদ্মা-৭৯’ কেন্দ্র ঘরের চিত্র এটি।
এদিকে, রুমানা বেগম ভিযোগ করে জানান, ‘লকডাউন’ নিরুপায় হয়েছেন আরো আগে। কোন কাজ-কর্ম নেই। তাই ঘর সংসার চলছে কোন মতে জোড়াতালি দিয়ে। অসুস্থ্য থাকার কারণে আগের সপ্তাহে কিস্তির টাকা প্রথমে হাতে ছিল না তার। কিন্ত মাঠকর্মী রিপা সকাল থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত তার ঘরে গিয়ে বসে ছিলেন ওই দিন। সেই সময়ে নানান কটু কথা বলে মানষিক হয়রানি করে কিস্তি পরিশোধের চাপ অব্যহত রাখেন তিনি। সে সময়ে বাড়ীর একজনের কাজ থেকে ধার করে কিস্তি পরিশোধ করেন তিনি। এবারেও একই অবস্থা। হাতে কোন টাকা পয়সা নেই তার। কিন্তু কিস্তি পরিশোধ না করলে মাঠ কর্মী আবারো তার ঘরে গিয়ে উঠবেন এই ভয়ে আবারো প্রতিবেশিদের কাছে টাকা ধারে হাত পেতেছেন তিনি। কিস্তি পরিশোধে চাপ প্রয়োগের একই ধরণের অভিযোগ ঋণগৃহিতা কেন্দ্রের সদস্য মমতাজ, শিল্পী, আলমতাজ ও রাহিমা বেগমেরও। করোনা মহামারির এই পরিস্থিতিতেও ঋণ পরিশোধে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ এদের মতো একই সংস্থার নাজিরপুর গ্রামের লালমিয়া বাড়ী কেন্দ্রের সদস্য পারভীন বেগম ও সুলতানাবাদ গ্রামের অপর এক উন্নয়ন সংস্থা আশার (এনজিও) প্রশান্ত কেন্দ্রের সদস্য কুলসুম বেগমেরও। খোঁজ নিলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার এনজিও ঋণগৃহিতা একাধিক নারী-পুরুষ জানান, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) করোনা পরিস্থিতির কারণে সারাদেশে এনজিও ঋণের কিস্তি ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিথিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করলেও বাউফল উপজেলার সর্বত্র এই নির্দেশনা গুরুত্বহীন। উল্টো বাড়ছে ঋন আদায়ের  চাপ। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা, ব্রাক, আশা, ব্যুরো বাংলাদেশ, উদ্দীপণ, পদক্ষেপ, গ্রামীণ, কোডেক, কোষ্ট, টিএমএসএস, ভিডিপিসহ উপজেলায় ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারি সংস্থাগুলো কিস্তি আদায়ের চাপ দিচ্ছেন। অব্যাহত রেখেছে সাপ্তাহিক ও মাসিক ঋণ (কিস্তি) আদায়। করোনা পরিস্থিতির এই লকডাউনে নিত্য আয়ের মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে অধিকাংশের দু’বেলা খাবার জোটানোই দায় হয়েছে। ঠিক এ সময়ে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এনজিও ও সুদ কারবারিরা কিস্তির আদায়ের চাপ দিচ্ছেন। এসব সংস্থাগুলোর এমআরএ নির্দেশনা অনুযায়ি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে  সমন্বয় রেখে দরিদ্র জনগোষ্ঠির মাঝে জরুরী খাদ্য বিতরণের নির্দেশণা থাকলেও উপজেলার কোথাও এ পর্যন্ত সংস্থার কাউকে জরুরী খাদ্য সহায়তা প্রদানে অংশ নিতে দেখা যায়নি। উপরন্তু ঋণের কিস্তি পরিশোধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন কর্মহীন দিশেহারা মানুষগুলো।
এ ব্যাপারে অভিযোগ অস্বীকার করে ওই মাঠকর্মী রিপা বেগম বলেন, ‘আমি অফিসের নির্দেশ পালন করছি। কোন সদস্যের কাছ থেকে জোর করে কিস্তি আদায় করছি না।’ ওই গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার উপজেলার কালাইয়া বন্দর শাখার ম্যানেজার মঞ্জুর আলম বলেন, ‘কাউকে কিস্তি আদায়ে চাপ দেওয়াা হচ্ছে না। তবে যারা সেচ্ছায় কিস্তি দিচ্ছেন তা গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়াও আমরা উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে কৃষক-কৃষাণীকে কৃষি লোন দিচ্ছি। কিস্তি আদায় না করলে আমারা লোন দেব কিভাবে?’
এ ব্যাপারে উন্নয়ন সংস্থা আশার উপজেলা সদর শাখার ম্যানেজার কামাল হোসেন বলেন, ‘আমারা জোড় করে কারো কাছ থেকে কিস্তি আদায় করছি না। শুধু সৌজন্যমূলকভাবে তাদের সাথে মাঠ কর্মীরা সাক্ষাৎ করছেন।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘জোড় করে কিস্তি আদায় করছে এমন অভিযোগ এখনও পাইনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’
উল্লেখ, ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি’র (এমআরএ) এক প্রজ্ঞাপনে সারা দেশে করোনা সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন গ্রাহক যদি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারেন, তাহলে তাদের ঋণকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না এবং বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলেও ঋণকে নিয়মিত রেখে প্রয়োজনে নতুন ঋণ দিতে হবে মর্মে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।