বিপদের বন্ধু ৯৯৯ : সেবার পরিধি বাড়াতে হবে
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ২৩, ২০২০ , ২:১৭ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
করোনা মহামারির মধ্যে দেশের স্বাস্থ্য খাতে নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার চিত্র দৃশ্যমান। বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিকে রোগী হয়রানি যেন চরমে উঠেছে। গত মঙ্গলবার জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ নম্বরে কল দিয়ে ধানমন্ডির পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অতিরিক্ত বিলের অভিযোগ করেন এক ব্যক্তি। ঘটনাস্থলে গিয়ে ধানমন্ডি থানা পুলিশ জানতে পারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার ২ লাখ ৩১ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দিয়েছে। পরে ভুতুড়ে বিল কমিয়ে ১৫ হাজার টাকা নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পুলিশের এই পদক্ষেপ ও তৎপরতা পরিবারটির মাঝে স্বস্তি ও আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জানা যায়, ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা ৫০ বছর বয়সী শাহজাহান অ্যাজমার রোগী। ১৬ জুলাই শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিলে তাকে পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনা টেস্ট করা হলে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তা সত্ত্বেও ইসিজি, এক্সরেসহ বিভিন্ন টেস্ট করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সকালে তিনি মারা যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা বাবদ ২ লাখ ৩১ হাজার টাকার বিল জমা দিতে বলে। এ টাকা পরিশোধ না করলে পরিবারকে মৃতদেহ নিতে দেয়া হবে না। শেষে ৯৯৯-এ কল করে বিষয়টি সমাধান পেয়েছে ভুক্তভোগী। এমন অসংখ্য অভিযোগের ভিত্তিতে সাধারণ মানুষ ৯৯৯-এর সুবিধা পেয়ে আসছে। এই সেবাটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ পরিচালিত কর্মসূচির আওতায় নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজনে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদানের জন্য ৯৯৯ জরুরি কলসেবা কার্যক্রম চালু করেছে। বাংলাদেশ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর এই সেবা চালু হয়। দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ এই সেবার জন্য ফোন করতে পারেন। সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা চালু রয়েছে এ সেবা। ৯৯৯-এ ফোন করতে কোনো খরচও নেই, এটি টোল ফ্রি। দুর্বৃত্ত আক্রান্ত নারী কিংবা প্রভাবশালীদের কবলে পড়া পুরনো গাছ উদ্ধারে ভূমিকা রেখেছে ৯৯৯। আশপাশ থেকে সচেতন নাগরিকদের ফোন পেয়ে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করেছে। আবার উঁচু দালানের কার্নিশে আটকে পড়া বিড়াল। ৯৯৯-এ ফোন করে ফায়ার সার্ভিসের সাহায্য নিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে কয়েকটি প্রাণীকেও। দেশের পল্লী এলাকায় বাল্যবিয়ে রুখে দেয়ার ব্যাপারে এই হেল্পলাইন ইতোমধ্যে যথাযথ হেল্প তথা সাহায্যে সক্রিয় ভূমিকা রাখার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাল্যবিয়েই শুধু নয়, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুকে উদ্ধারের ক্ষেত্রে এ হেল্পলাইন কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এই সেবার ওপর সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে যে আস্থা তৈরি হয়েছে, তাকে ধরে রাখাকেই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়া দরকার। সেবার পরিধি আরো বাড়াতে পুলিশের পক্ষ থেকে অনেক বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে বলে জেনেছিলাম। আমরা এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই। আগামীতে ৯৯৯-এর সেবা সারাদেশে বিস্তৃত হবে এমন প্রত্যাশা করছি।