বিশেষজ্ঞদের মত : এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে করোনা ‘পিক টাইম’ হতে পারে
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ২, ২০২০ , ৮:০০ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে প্রতিবেদক : দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। সে মাসে মোট শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ৫১ জন। এপ্রিলে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় সাত হাজার ৬১৬ জনে। গত কয়েক দিনে প্রতিদিনই নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে চার-পাঁচশ বা তারও বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিন যে হারে পরীক্ষা হচ্ছে সেটাও যথেষ্ট নয় এবং এটা পুরো দেশের চিত্রও নয়। এখনও দেশ সংক্রমণের চূড়ায় নয়। পরীক্ষা সংখ্যা বাড়ালে এবং সাধারণ ছুটি শিথিল করে আনা হলে মে মাসে অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী ১৪ দিন কঠিন সময়। তাই ভীষণ সতর্কতা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে পার করতে হবে। যদি সেটা না হয় তাহলে সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু এবং রোগী দুটোই দেখা যাবে মে মাসে। গত ৮ মার্চ প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ৮ এপ্রিল পর্যন্ত এক মাসে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ২১৮ জন। এরপর রোগী বাড়তে থাকে। ১৮ এপ্রিল রোগী শনাক্ত হয় ৩০৬ জন। এরপর সংখ্যা শুধুই বেড়েছে। ২০ এপ্রিল ৪৯২ জন, ২৪ এপ্রিল ৫০৩ জন, ২৮ এপ্রিল ৫৪৯ জন এবং গত ২৯ এপ্রিল ৬৪১ জন। তবে ৩০ এপ্রিল শনাক্ত হওয়া রোগী সংখ্যা তার আগের দিনের চেয়ে কমে দাঁড়িয়েছিল ছিল ৫৬৪ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে জানান, আগামী ৩১ মে পর্যন্ত ৪৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন এবং মারা যেতে পারেন ৮০০ থেকে এক হাজার মানুষ। গত ২১ এপ্রিল করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও প্রতিকারে গৃহীত কার্যক্রম পর্যালোচনা এবং পরবর্তী করণীয় বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভায় তিনি এ তথ্য জানান। জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর দিনের শেষেকে জানান, কোনও মডেলিংই প্রকৃতপক্ষে বাস্তবের সঙ্গে মেলে না। কিন্তু মডেলিং করা হয় প্রস্তুতিতে সাহায্য করার জন্য। তবে মে মাসের মাঝামাঝিতে করোনার ‘পিক টাইম’ দেখা দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ডা. আলমগীর। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) কোভিড-১৯-এর নমুনা পরীক্ষা করা হলেও বর্তমানে দেশে পরীক্ষা হচ্ছে ২৮টি ল্যাবরেটরিতে। এরমধ্যে রাজধানী ঢাকায় ১২টি ও ঢাকার বাইরে ১৬টি প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি তিনটি হাসপাতালকে করোনা পরীক্ষার জন্য অনুমতি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। যদিও এই হাসপাতালগুলো কেবল তাদের ভর্তি হওয়া রোগীদের পরীক্ষা করাতে পারবে। সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যান্ড ডিজাইন (এসইউটিডি)-এর ডেটা ড্রাইভেন ইনোভেশন ল্যাবের গবেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছেন, মে মাসে বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ ৯৯ শতাংশ কমে যেতে পারে। তবে বাংলাদেশ থেকে ভাইরাসটির পুরোপুরি বিদায় নিতে সময় লাগতে পারে ১৫ জুলাই পর্যন্ত। আর সারা বিশ্ব থেকে করোনা পুরোপুরি বিদায় নিতে পারে ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে। যদিও এরসঙ্গে একমত নন বাংলাদেশি চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘লকডাউন শিথিল করলে রোগী সংখ্যা বেড়ে যাবে। কিন্তু লকডাউন লম্বা করে দেওয়া হলে কেসগুলোকে সেটেল ডাউন করে ডিলে করে দেওয়া হবে। এভাবে যদি ডিলে করে দেওয়া হয় তাহলে আর সংক্রমণের চূড়ায় না যাওয়া হলেও এ পরিস্থিতি চলতে থাকবে।’ সিঙ্গাপুরের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে একমত নন অধ্যাপক রোবেদ আমিন। দেশের ২৮টি জায়গায় নমুনা পরীক্ষা হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চল, উপজেলা এবং অনেক জেলায়ও পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না মন্তব্য করে অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, ‘তাহলে পুরো দেশের চিত্র তো এখনও আমরা পাচ্ছি না। বাংলাদেশে আসলে মোট কতজন আক্রান্ত সেটা এখনও আমরা জানি না। কেবল পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে একটা অঙ্ক করে যাওয়া হচ্ছে।’ ‘চীনের উহানের চেয়ে ঢাকার অবস্থা খারাপ মনে হচ্ছে’ মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষ লকডাউন মানছে না। ঢাকা শহরের সংক্রমিত মানুষের হার এর সঙ্গে মেলালেই সেটা বোঝা যায়।’ চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানী ও গবেষক আতিক আহসান বলেন, ‘মে মাস আমাদের জন্য ভালো কিছু আনবে না। খারাপ যা হতে পারে সেটা মে মাসের মধ্যেই দেখবো। এর পরে ধীরে ধীরে রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করবে।’