বিশ্ব নেতাদের স্মরণে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ
পোস্ট করেছেন: delwer master | প্রকাশিত হয়েছে: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২ , ১১:২১ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সারাবিশ্ব লীড
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ৯৬ বছর বয়সে মারা গেলেন। তার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ যুক্তরাজ্যসহ গোটা বিশ্ব। বিশ্ব নেতারা রানির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ও তাকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে। রানিকে তিনি ‘হৃদয়বান ব্যক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। ফ্রান্সের ‘পরম বন্ধু’ ছিলেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, তিনি বিশ্বকে মোহিত করেছেন একটি ‘অনুগ্রহ, কমনীয়তা এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের নীতি দ্বারা সংজ্ঞায়িত রাজত্ব’ তৈরি করে।
এক বিবৃতিতে বারাক ওবামা বলেন, ‘বারবার, আমরা তার আতিথিয়তা দেখে, যেভাবে তিনি মানুষকে স্বাচ্ছন্দ্য দান করেছিলেন এবং কঠিন পরিস্থিতির মুহুর্তেও যথেষ্ট রসিকতার মধ্য দিয়ে কাজ করেছিলেন তাতে প্রভাবিত হয়েছিলাম’। বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে রানির সঙ্গে দেখা হয়েছিল বারাক ওবামার।
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যিনি মহামহিমের সঙ্গে প্রথম দেখা করেছিলেন। তাকে একজন সাম্রাজ্ঞীর চেয়ে বেশি, একটি যুগ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যে তার সফরের কথা স্মরণ করে, বাইডেন বলেন ‘তিনি তার বুদ্ধি দিয়ে আমাদের মুগ্ধ করেছিলেন, তার উদারতা দিয়ে আমাদের আন্দোলিত করেছিলেন এবং উদারভাবে তার প্রজ্ঞা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছিলেন’।
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ তার শাসনামলে ১৩ মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেন।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন তিনি ‘তার উদার বন্ধুত্ব, দুর্দান্ত প্রজ্ঞা এবং হাস্যরসের বিস্ময়কর অনুভূতি কখনই ভুলবেন না’। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট তার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সোশ্যাল ট্রুথে আরও লিখেছেন, ‘তিনি কী দুর্দান্ত এবং সুন্দরী ছিলেন- তার মতো কেউ ছিল না!’
আরেক সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ, তার ‘ অনন্যতা, কমনীয়তা এবং বুদ্ধির’ প্রশংসা করেছেন।
কানাডা, যেখানে রানী এলিজাবেথ রাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন। তিনি তার শাসনামলে ১২ জন প্রধানমন্ত্রীর দেখা পেয়েছেন। একজন আবেগপ্রবণ নেতা জাস্টিন ট্রুডো বলেন যে তার ‘কানাডিয়ানদের প্রতি সুস্পষ্ট গভীর এবং স্থায়ী ভালবাসা ছিল’।
তিনি আরও বলেন, জটিল বিশ্বে তার স্থিরতা এবং সংকল্প আমাদের সকলের জন্য স্বস্তি এনেছে’। কান্নাভেজা কণ্ঠে ট্রুডো বলেন, তিনি ছিলেন ‘বিশ্বে আমার প্রিয় মানুষদের একজন, এবং আমি তাকে খুব মিস করবো’।
রানির প্রতি শ্রদ্ধায় বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনসহ অন্যান্য দেশেরও পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডর লেন বলেছেন, রানির সহানুভূতি এবং প্রতিটি উত্তরণ প্রজন্মের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ক্ষমতা, তার কাছে সত্যিকার অর্থে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যের মূলে থাকা, সত্যিকারের নেতৃত্বের উদাহরণ।
নেদারল্যান্ডসের রাজা উইলেম-আলেকজান্ডার, যিনি রানি এলিজাবেথের পঞ্চম চাচাতো ভাই, তিনি বলেন যে তিনি ও রানি ম্যাক্সিমা ‘অটল এবং জ্ঞানী’ রানিকে ‘গভীর শ্রদ্ধা এবং স্নেহের সঙ্গে স্মরণ করছেন।
সুইডেনের রাজা ষোড়শ কার্ল গুস্তাফও রানির একজন দূরবর্তী আত্মীয়। তিনি বলেন ‘তিনি সবসময় আমার পরিবারের কাছে প্রিয় এবং আমাদের ভাগ করা পারিবারিক ইতিহাসে মূল্যবান যোগসূত্র ছিল তার’।
বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ ও রানি ম্যাথিল্ডে বলেন যে তিনি ‘একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব… যিনি তার রাজত্বজুড়ে, মর্যাদা, সাহস এবং ভক্তি দেখিয়েছিলেন’।
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজও রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার পরে জার্মান-ব্রিটিশ পুনর্মিলনের বিষয়ে তার প্রতিশ্রুতি অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুবার যুক্তরাজ্য সফরের সময় রানির সঙ্গে তার বৈঠক স্মরণ করেন। টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি তার আতিথিয়তা এবং উদারতা কখনই ভুলবো না’। তিনি আরও বলেন, ‘বৈঠক চলাকালে তিনি আমাকে মহাত্মা গান্ধী তার বিয়েতে উপহার দেওয়া রুমালটি দেখিয়েছিলেন। আমি সবসময় সেই অঙ্গভঙ্গি লালন করবো’।
সৌদি বাদশাহ সালমান ও ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান তাদের সমবেদনা পাঠিয়েছেন রানির পরিবারের প্রতি। বাদশাহ তাকে ‘নেতৃত্বের রোল মডেল যা ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে’ বলেও অভিহিত করেন।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা রানির মৃত্যুতে ‘গভীর দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্বের অস্থির সময়ে ব্রিটেনকে নেতৃত্ব দেওয়া রানির মৃত্যু শুধু ব্রিটিশ জনগণের জন্যই নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও একটি বড় ক্ষতি’।আইরিশ প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি হিগিন্স রানির ‘অসাধারণ কর্তব্যবোধকে’ সম্মান জানিয়েছেন।জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, ‘রানি এলিজাবেথ ‘আফ্রিকা ও এশিয়ার উপনিবেশকরণ ও কমনওয়েলথের বিবর্তনসহ বহু দশকের ব্যাপক পরিবর্তনে ছিলেন একজন আশ্বস্তকারী’।
এক বিবৃতিতে, তিনি ‘নিজেকে অটুট রাখা, তার জনগণের সেবার জন্য আজীবন উৎসর্গের প্রতি শ্রদ্ধাও নিবেদন করেন। বিশ্ব তার ‘ভক্তি এবং নেতৃত্বকে দীর্ঘকাল মনে রাখবে’ বলেও উল্লেখ করেন গুতেরেস।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে।
এ ছাড়া আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নেতা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও অনেকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ব্রিটেনের দীর্ঘতম শাসককে।
সূত্র: বিবিসি